কানাডায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর এক্সিডেন্ট, ড্রাইভিং নিয়ে কিছু কথা - এম আর ফারজানা

কানাডায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর এক্সিডেন্ট, ড্রাইভিং নিয়ে কিছু কথা - এম আর ফারজানা
কানাডায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর এক্সিডেন্ট, ড্রাইভিং নিয়ে কিছু কথা - এম আর ফারজানা

এম আর ফারজানা, নিউজার্সি ।।

সবাই জানেন কিছুদিন আগে কানাডাতে পড়তে যাওয়া ৪ বাংলাদেশী স্টুডেন্ট এক্সিডেন্ট করে । কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবিড় বেঁচে থাকলেও দিপ্ত, অ্যাঞ্জেলা শ্রেয়াস অন্যজন বিদায় নিয়েছেন পৃথিবী থেকে।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমন হল। যতদূর জেনেছি স্পিড ছিল অতিরিক্ত। হাইওয়ে থেকে এক্সজিট নিয়ে রেম্প এ গিয়ে গাড়ী আর কন্ট্রোল করতে পারেনি। সাধারনত রেম্প , লুপরাইট এ ৩৫/৪০ এর মধ্যে স্পিড রাখতে হয় সে জায়গায় তার গাড়ীর স্পিড ছিল ১২৫ মাইল । রেম্প হল অনেকটা বৃত্তের মত। অর্থাৎ আপনাকে এক্সজিট নিয়ে ঘুরে এসে অন্য রাস্তায় আসতে হয়। ফলে নিবিড় যখন এক্সজিট নেয় গাড়ী (রেম্প) দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ৩/৪ উলটপালট হয়ে পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়।

পুলিশ জানিয়েছে তারা কোন ড্রিংক করেনি। নারমাল ছিল। এই যে ৩ জনের মৃত্যু এর দায়ভার নিবিড়কেই নিতে হবে। কারন তার অসতর্কতার জন্য এই অবস্থা। বিদেশে রাস্তায় স্পিড থেকে শুরু করে সবকিছুর সাইন দেয়া থাকে। এমন কি কোথাও হরিণ বা অন্যপ্রানী রাস্তায় বেশী যাওয়া আসা করলে সেখানে ও সাইন দেয়া থাকে। নিবিড় কেন কোন নিয়ম মানেনি সেই ভালো জানে।

আমি নিজে ড্রাইভ করি ২০ বছর হয়ে গেছে, সেখানে এখনো সতর্ক থাকতে হয় প্রতি মুহূর্তে । কারন একটু ভুলের জন্য জীবনের গতি উলটপালট হয়ে যেতে পারে।

বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন থাকে তার সন্তান পড়ালেখা করে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। যার ফলে স্কলারশিপ নিয়ে অনেকে পড়তে আসে। কিন্তু বিদেশে এসে স্বাধীন জীবন –যাপন করতে গিয়ে বেসামাল হয়ে যায় অনেকে । নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। ফলে যা হবার তাই হয়। অর্থাৎ স্বপ্ন তখন দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়।

নিবিড় কুমারের দায়িত্বহীন ড্রাইভিং এর কারনে খালি হল তিন বাবা- মায়ের কোল। এই কস্ট ,এই যন্ত্রণা বাবা-মা কোনদিন ভুলতে পারবে না। আর নিবিড় এর শরীরের ৭৫% আগুনে পুড়ে গেছে। যত সার্জারি করুক আর চিকিৎসা করুক এই ট্রমা থেকে সে নিজেও বের হতে পারবে না। সবচেয়ে বড় বিষয় হল একটু সুস্থ হলেই তাকে পুলিশের ইনভেস্টিগেশনের মুখে পড়তে হবে। মাস্ট তার লাইসেন্স বাতিল হবে, জেল ও হতে পারে।

যেসব বাবা-মা তাদের সন্তানদের দেশের বাইরে পাঠাবেন তাদের বলছি- ছেলেমেয়েদের অতিরিক্ত টাকা দিবেন না। বা গাড়ী কিনে দেবেন না। আপনি হয়ত সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে তাকে গাড়ী কিনে দিলেন ফলাফল হবে নেগেটিভ। কারন দেশের পরিবেশ আর বিদেশের পরিবেশ এক নয়।

আমার ধারণা শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ তার সন্তানের সুখের কথা ভেবেই গাড়ী কিনে দিয়েছিল।

ভেবেছিল চলাচলে যেন তার অসুবিধা না হয়। কিন্তু অল্প বয়সি ছেলের কতটুকু দায়িত্ব পালন করবে সেটা ভাবেনি। সাধারনত অল্প বয়সি ছেলেমেয়েরা দায়িত্ব নিয়ে ড্রাইভ করে না। ফলে যা হবার তাই হয়। আমার নিজের মেয়েকে ও ১৮ বছর সময় গাড়ী কিনে দিয়েছি। কিন্তু এখানে (নিউজার্সি ) ওর জন্ম ,ফলে এখানকার নিয়ম সম্পর্কে তার ধারনা আছে। কি হলে তার জীবন কতটা ভয়ানক হবে তা তার জানা। কিন্তু দেশ থেকে যেসব ছেলে মেয়েরা পড়তে আসে তারা সাধারনত দেশের নিয়মে জীবন যাপনে অভ্যস্ত। ফলে বিদেশ এসে অবাধ স্বাধীনতা পেয়ে খেই হারিয়ে ফেলে। অবশ্য সবাই না। অনেক ছেলেমেয়ে আছে পড়াশোনার পাশাপাশি জব করে নিজের খরচ চালায়। অনেক কস্ট করে লেখাপড়া শেষ করে। এই কষ্টটাই তাকে পায়ের তলায় মাটি এনে দেয়। অর্থাৎ সে তখন জেনে যায় জীবন অত সহজ নয় এই বিদেশে। আমি দেখেছি যারা বিদেশে কস্ট করে পড়াশোনা করে তারাই পরবর্তীতে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

যাই হোক- আমি শুধু এইটুকু বলব আপনার সন্তানকে বিদেশ পাঠালে অনেক কিছু ভেবেচিন্তে পাঠাবেন। বিদেশ মানেই উন্নত জীবন নয়। স্বপ্ন থাকলে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে অবশ্যই নিয়মের মধ্য দিয়ে বিদেশে চলতে হবে। না হলে ফলাফল হবে বিপরীত ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;