দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

পোস্টকার্ড ডেস্ক।।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু  দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সোমবার নির্বাচন ভবনে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন নির্বাচন কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

এর আগে রাষ্ট্রপতি পদে দাখিল হওয়া মনোনয়নপত্র সোমবার সকালে পরীক্ষা করেন নির্বাচন কর্তা। এ সময় জাতীয় সংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সিইসি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে জানান, প্রথম মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় এবং আর কোনো প্রার্থী না থাকায় মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে একক প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।

সিইসি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদের মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একমাত্র বৈধ প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ১৯৯১-এর ধারা ৭ মোতাবেক তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করছি। এ বিষয়ে সোমবারই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

এর আগে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া সাহাবুদ্দিন চুপপুকে ফুল দিয়ে বরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

ব্যক্তিগত তথ্য

মো. সাহাবুদ্দিন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরে জেলা যুবলীগের দায়িত্বও পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে ছিল তাঁর সাহসী ভূমিকা। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় কারাভোগ করতে হয়েছে তাঁকে। কর্মজীবনে দীর্ঘদিন বিচারিক আদালতের দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

মো. সাহাবুদ্দিনের জন্ম ১৯৪৯ সালে, পাবনা শহরে। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুরের আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা রেবেকা সুলতানার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সাহাবুদ্দিন। রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। তিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স প্রোগ্রাম বিভাগের অধ্যাপক এবং ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

সাহাবুদ্দিন-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান (রনি) দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে উচ্চ পদে কর্মরত।

রাজনীতি ও পেশাজীবন

বৃহত্তর পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এই সময় তিনি আটক হয়ে তিন বছর জেলে ছিলেন। কারাভোগের পর মুক্ত হলে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

কর্মজীবনে বিচারিক আদালতের দায়রা জজের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তিনি ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। সেই সময় দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক, যা দেশের রাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি করে। ২০১২ সালের পদ্মা সেতু দুর্নীতি বা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এ মামলায় আসামি হন তৎকালীন সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাতজন। দুর্নীতির তদন্তের পর্যবেক্ষণে সেই বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশে আসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর লুই গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল। তাঁরা দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানসহ কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে দুদকের করা মামলায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমানকে আসামি করার জন্য পরামর্শ দেয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল। বৈঠকে উপস্থিত কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন এর প্রতিবাদ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলায় ব্যক্তিস্বার্থ, রাজনৈতিক স্বার্থকে বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখেছিলেন সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি মুখ্য ভূমিকা রেখেছে।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে চট্টগ্রামের জেএমসি বিল্ডার্স লিমিটেডের পক্ষে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান মো. সাহাবুদ্দিন। এখন তিনি ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান।

খালেদ / পোস্টকার্ড;