প্রধানমন্ত্রীর জনসভা , উৎসবমুখর চট্টগ্রাম

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা , উৎসবমুখর চট্টগ্রাম
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা , উৎসবমুখর চট্টগ্রাম

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম নগরী আজ একটি উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। জনসভাস্থল আওয়ামী লীগের লাখো লাখো নেতা-কর্মী-সমর্থকের উল্লসিত পদচারণায় মুখরিত ছিল।

চট্টগ্রাম নগরী  এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ পোলো গ্রাউন্ডে এই জনসভার আয়োজন করে। দীর্ঘদিন পর দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এখানে বক্তৃতা করেন।

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কারণে ২৭ মাস পর ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো ২৪ নভেম্বর যশোরে জনসভায় অংশ নেয়ার পর এটা শেখ হাসিনার কোন জনসভায় দ্বিতীয় সশরীরে উপস্থিতি।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরী উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্থরের জনগণ প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনসভায় যোগ দেয়।

প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার এই আগমন চট্টগ্রামসহ গোটা এলাকার নেতাকর্মীরাই অত্যন্ত উৎফুল্লিত।

ভোর হতেই জনগণ জনসভাস্থলে পৌঁছতে শুরু করে এবং মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে নির্মিত মঞ্চে উপস্থিত হন। এর আগেই জনসভা ও এর আশপাশের সব স্থানগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

এর আগে, সকাল থেকেই সাধারণ জনগণ, নারী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করে জনসভাস্থলের উদ্দেশে যেতে দেখা যায়। এ সময় তাদের হাতে ছিল রঙিন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন এবং তাদের পরনে ছিল রঙিন টি-শার্ট, মাথায় ক্যাপ ও মাথায় ফেট্টি। তাদের অনেকেই ড্রাম বাজাচ্ছিল। অনেকের হাতে ছিল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা।

নারীরা ছোট-বড় দলে এবং অথবা একাই হাসিমুখে জনসভাস্থলের প্রবেশ পথে অপেক্ষা করছিল।

চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও আশাপাশের এলাকা থেকে আওয়ামী লীগে এবং এর সহযোগী সংগঠনের লাখো নেতা-কর্মী রিজার্ভ বাস, পিক-আপ, মোটরসাইকেলে চড়ে জনসভাস্থলের উদ্দেশ্যে মিছিলে যোগ দেয়। অনেকে পায়ে হেঁটেও মিছিল করে জনসভায় প্রবেশ করে।

সন্দ্বীপ থেকে আগত একদল লোক জানান, সামনের সারিতে স্থান পেতে- তারা খুব ভোরেই জনসভাস্থলে পৌঁছেন। বিপুল জনসমাগমের কারণে, দেরি হলে তারা জনসভাস্থলে ঢুকতে পারবে না বলে আশঙ্কা করছিল।

নগরীর বিভিন্ন সড়কে রঙিন তোরণ ও প্রবেশদ্বার নির্মাণ করা হয়। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত পোস্টার ও ব্যানার দিয়ে সড়কগুলো সজ্জিত করা হয়।

আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাতে কাজির দেউড়ী, হালিশহর, লালখান বাজার, টাইগার পাস, দেওয়ান হাট, কদমতলী, নিউমার্কেট, আন্দেরকিল্লা ইত্যাদিসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকা ব্যানার, বেলুন, ফেস্টুন ও পোস্টারে সজ্জিত করেন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (সিসিসি) এই জনসভাকে সামনে রেখে ফুটপাথ পরিচ্ছন্ন ও নতুন করে রঙ করা, রঙিন বাতি দিয়ে ফ্লাইওভারকে সজ্জিত করা ও বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো সংস্কার করাসহ নগরীতে নানা ধরনের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ করেছে।

পোলো গ্রাউন্ডের জনসভায় উপস্থিত নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উৎফুল্ল রাখতে সকাল থেকেই স্থানীয় সঙ্গীত শিল্পী ও সংস্কৃতি কর্মীরা নাচ-গান পরিবেশন করছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক দলীয় ফোরাম মিটিংয়ে এখন থেকে দলীয় কর্মসূচিতে অধিক সময় দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জেলায় সফর করার পরিকল্পনা দলীয় প্রধানের রয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিনি ২৪ নভেম্বর  যশোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করেন। আর এখান থেকেই প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সালের আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দলীয় প্রচারণা শুরু করেন।

আজকের জনসভার পর, ৭ ডিসেম্বর প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি কক্সবাজারের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখবেন।

এই জনসভাগুলোতে, দলীয় সভাপতি জনগণের পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতিও নতুন বার্তা দিচ্ছেন।

এর আগে সকালে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশকিছু আয়োজনে অংশ নিতে একদিনের সফরে চট্টগ্রাম পৌঁছেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই সফরকালে ভাটিয়ারির বাংলাদেশ মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্রেসিডেন্ট প্যারেড-২০২২ তে অংশ নেন।

বিকেলে, আওয়ামী লীগ সভাপতি রেলওয়ে পোলো গ্রাউন্ডে নৌকার আদলে নির্মিত ১৬০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চে বক্তৃতা করেন।

সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে- যা এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে। 

উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প পার্ক, কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল, কোরিয়ান ইপিজেড, মহেশখালীতে চারটি প্রকল্প- অর্থনৈতিক অঞ্চল, এলএনজি টার্মিনাল, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দর, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা, লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট রোডে ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম বন্দরে বে টার্মনাল নির্মাণ।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;