অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে, সে যে দলেরই হোক: ইউএনওর ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে, সে যে দলেরই হোক: ইউএনওর ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

সংসদ প্রতিবেদক ।। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার কারণ এবং হামলায় মদদদাতাদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন ।

তিনি বলেছেন, আমি আগেই বলেছি, অপরাধী আমার চোখে অপরাধী। সে কোন দলের, কে, কী, আমি কিন্তু সেটা বিচার করি না। সেটা আপনারা দেখেছেন। বুধবার সকালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

ইউএনওর ওপর হামলার বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। চুরি করার জন্য হামলার কথা বলা হচ্ছে। তবে শুধু চুরি নয়, এর সঙ্গে আরও কী কী ঘটনা থাকতে পারে সেগুলোও কিন্তু যথাযথভাবে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের বিচার হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে দেখি। সেখানে যদি আমার দলেরও লোক হয়, সমর্থক হয়, তাকেও আমি ছাড়ি না, ছাড়ব নাÑ এটা হলো আমার নীতি। সেই নীতি নিয়ে আমি চলছি। ইতোমধ্যে তদন্ত করা হচ্ছে, কয়েকজন ধরা পড়েছে। পাশাপাশি আরও তদন্ত করা হচ্ছে, এ ঘটনার মূলে কী রয়েছে। কেন এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটল। এটা খুব ভালোভাবেই তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে কোনো ঘাটতি নেই এবং ঘাটতি হবে না। অপরাধী ঠিকই শাস্তি পাবে, সে ব্যবস্থা করব।

প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনারাও যারা সংসদ সদস্য আছেন, তাদের কাছেও অনুরোধ থাকবে, এ ধরনের অপরাধীকে কখনও রক্ষা করার চেষ্টা যেন আপনারা না করেন। অপরাধ যে করে আর অপরাধীকে যে রক্ষা করে, সমানভাবেই তারা দোষী।

সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্তর চাইলে তিনি অতীত নিয়ে বলেন। ১৪ বছর বা ২০ বছর পেছনের অতীত টানার দরকার নেই। ১৪ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নেই। আওয়ামী লীগই ক্ষমতায়। এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বললে মনে হয় বেশি ভালো হবে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই আগামী দিনে চলার পথ নির্দিষ্ট করতে হবে। তা না হলে শিক্ষা হয় না। সে কারণেই অতীতকে স্মরণ করতে হয়। এখানে অতীত নিয়ে কথা না। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের কথা আমি বলেছি। সেই ঘূর্ণিঝড়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমরা তো দেখেছি। কত অবহেলার শিকার ছিল এ দেশের মানুষ। ঠিক ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর যে রকম মানুষ অবহেলিত ছিল। সে সময় আমরা বিরোধী দলে থেকে, আমরাই আগে সেই দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তারপর সরকার গিয়েছিল। সরকার তো ঘুমাচ্ছিল। আর এই পার্লামেন্টে বলেছিল যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি। এটা বিএনপি আর খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল। এটা হলো দুর্ভাগ্য। আমি ওটাই বলব, অতীতকে স্মরণ করতে হবে তো। সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

প্রশ্নোত্তরে বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, সাগর-রুনি হত্যার পর শুনেছিলাম বেডরুম পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমকে সরকারি বাসভবনে নিজের বেডরুমে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছেন। আমার প্রশ্ন, এই কর্মকর্তার বেডরুম পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব কার ছিল? আর বেডরুম নয়, নিজের দেশ আর দেশবাসীর পাহারা দেওয়ার দায়িত্বটা কার?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কথাটা তো বাস্তব, এভাবে ঘরে ঘরে, বেডরুমে বেডরুমে কেউ পাহারা দিতে পারে না। তারপরও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং দেশে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সবসময় সজাগ রয়েছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইউএনও ওয়াহিদার ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাড়ির ভেতরে ঢুকে এভাবে আক্রমণ করা বা হাতুড়ি দিয়ে পেটানো...। চোর ঢোকে চুরি করতে কিন্তু এভাবে একজন সরকারি কর্মকর্তার ওপর হামলা করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এর বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতাকে পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ হত্যা এবং পরবর্তী সরকারের খুনিদের রক্ষার চেষ্টার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, একটা কথা আপনারা জানেন বাংলাদেশে কী ঘটনা ঘটেছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তো ঘরে ঢুকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা করা হয়, তখন তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তার গোটা পরিবারকেই হত্যা করা হয়েছে। সেই খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেই খুনি ক্রিমিনালকে যখন প্রশ্রয় দেওয়া হয় মানসিকভাবে সেই দেশের মানুষের কী রকম চরিত্র হতে পারে? সেটাই হচ্ছে বিবেচ্য বিষয়। সেখান থেকে একটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা, ডিসিপ্লিনে নিয়ে আসা এবং অন্যায়কারীদের যেন শাস্তি হয়, বিচার হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া, এটা সব থেকে বড় কাজ। ঘটনা যেকোনো সময় ঘটতে পারে। কিন্তু সে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যারা অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি কি না, সেটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন।

তিনি বলেন, যে দেশে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয় দূতাবাসে চাকরি দিয়ে, যে দেশে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছেÑ এমন অবস্থা ছিল, সেই দেশটাকে ডিসিপ্লিনে ফিরিয়ে আনা, সেই দেশকে নিয়ন্ত্রণে এনে নিয়মমাফিক চলানো খুব কঠিন একটা দায়িত্ব। সেই দায়িত্বটা তো আমরা সরকারে আসার পর পালন করে যাচ্ছি। যেখানে ৫০০টা বোমা হামলা হয়েছে, প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী-অস্ত্রধারীরা অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে। এ ধরনের বহু ঘটনা তো আমাদের দেশে ছিল। কিন্তু সেগুলো আমরা আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেওয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারপর এত জনসংখ্যা, এত ঘনবসতির একটি দেশে খুব কঠিন একটা কাজ। তারপরও কিন্তু আমরা করে যাচ্ছি। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা যথেষ্ট সক্রিয় আছে। যখনই যে ঘটনা ঘটেছে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।

টিকা কেনাসহ করোনা মোকাবিলায় উদ্যোগ : নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় দ্রæত কোভিড-১৯-এর টিকা কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, গত মে-জুন মাসে জরুরি ভিত্তিতে ২ হাজার চিকিৎসক, ৫ হাজার সিনিয়র স্টাফ নার্স, ৩৮১ জন ফার্মাসিস্ট এবং জুলাইয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ২০২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ২ হাজার চিকিৎসক, ২ হাজার ৫৫০ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ১ হাজার ৮৫০ জন মিডওয়াইফারি নিয়োগের কার্যক্রম চলছে।-সময়ের আলো ।