অর্থ সংকটে জাহাজভাঙা শিল্প, ছাঁটাইয়ে বিপর্যস্ত অর্ধ লক্ষ শ্রমিক

অর্থ সংকটে জাহাজভাঙা শিল্প, ছাঁটাইয়ে বিপর্যস্ত অর্ধ লক্ষ শ্রমিক
অর্থ সংকটে জাহাজভাঙা শিল্প, ছাঁটাইয়ে বিপর্যস্ত অর্ধ লক্ষ শ্রমিক

বিশেষ প্রতিবেদক।।

 

অব্যাহত লোকসান এবং আর্থিক সংকটে পড়ে সীতাকুণ্ডের প্রায় দেড় শতাধিক জাহাজভাঙা কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে । পাশাপাশি আরো বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে । কোনো ঘোষণা ছাড়াই অব্যহত ছাঁটাইয়ের কারণে জীবিকা সংকটে ভুগছেন অর্ধ লাখ শ্রমিক । তাছাড়া  স্ক্র্যাপ জাহাজের পণ্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বিপাকে পড়েছে। ঋণের ভারে জর্জরিত অধিকাংশ স্ক্র্যাপ ব্যবসায়ী । ইতিমধ্যে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। 

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) সূত্রে জানা গেছে, আশির দশকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙা শিল্পের গোড়াপত্তন হয়। ধীরে ধীরে উপকূলে গড়ে ওঠে ১৫৪টি জাহাজভাঙা কারখানা। তবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অব্যাহত লোকসানের কবলে পড়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্ধ হয়ে গেছে ১৪০টি কারখানা। বেকার হয়ে গেছেন প্রায় অর্ধ লাখ শ্রমিক।প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বর্তমানে ১৪টি জাহাজভাঙা কারখানা সচল রয়েছে। এর মধ্যে চার-পাঁচটি প্রায় নিষ্ক্রিয়। লোকসান ঠেকাতে শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে এসব কারখানা।

সীতাকুণ্ডের জাহানাবাদ এলাকার জাহাজভাঙা কারখানার শ্রমিক নেছার আহম্মদ বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে জাহানাবাদ সাগর উপকূলে অবস্থিত এস এম ষ্টীল জাহাজভাঙা কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। প্রায় ছয় মাস আগে মালিকপক্ষ হঠাৎ জাহাজভাঙা কারখানা বন্ধ করে দেন। এতে বেকার হওয়ার কারনে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তার।

স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটিং কন্ট্রাক্টর সাইফুল আলম বলেন, তিনি দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে জাহাজভাঙা কারখানায় শ্রমিক দিয়ে স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটানোর কাজ করাতেন। যাঁর অধিকাংশের বাড়ি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু বর্তমানে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বন্ধ থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে চার-তৃতীয়াংশের অধিক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। যার ফলে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে যান এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় অর্ধ লাখ শ্রমিক। ।

সীমা গ্রুপের ব্যবস্থাপক পারভেজ উদ্দীন সান্টু বলেন, গত বছরের জানুয়ারি থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি ও কাটা বন্ধ ছিল তাঁদের ইয়ার্ডে। তাঁরা টানা আট মাস শ্রমিকদের কাজ ছাড়াই বেতন পরিশোধ করেছেন। তবে ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় জাহাজভাঙা কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। অনেকটা নিরুপায় হয়েই শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তবে জাহাজ কাটার কাজ শুরু হলে ছাঁটাই করা পুরোনো শ্রমিকদের পুনরায় নিয়োগ দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে জানান তিনি ।

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু তাহের জানান, গত বছরের মে ও জুন মাসে ব্যাংকগুলো ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানিতে জাহাজভাঙা কারখানা মালিকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে ডলারের অতিরিক্ত মূল্য হিসাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এতে ডলারের অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে দেউলিয়া হয়েছেন অনেক জাহাজভাঙা কারখানার মালিক।

খালেদ / পোস্টকার্ড;