আফিফের ব্যাটে হার এড়িয়ে বাংলাদেশের জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক ।।

আফিফের ব্যাটে হার এড়িয়ে বাংলাদেশের জয়
আফিফের ব্যাটে হার এড়িয়ে বাংলাদেশের জয়

সিনিয়র ব্যাটসম্যানরা সব হতাশ করে বিদায় নিয়েছিলেন। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের মত ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা যখন দারুণ হতাশার জন্ম দিল বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের হৃদয়ে, তখন সেটাকে নিমিষে দুর করে দিলেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। বয়স মাত্র ২০ ছুঁই ছুঁই। মোসাদ্দেক হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে এই বয়সে দলকে নিশ্চিত হার থেকে রক্ষা করলেন এই তরুণ।

হারের বৃত্ত ছিন্ন করলো বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের কাছে একমাত্র টেস্টে হারলেও ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজে শুরুটা হলো ঘুরে দাঁড়ানো এক জয়ে। রোমাঞ্চ ছড়িয়ে জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে স্বাগতিকরা।
 
১৪৫ রানের লক্ষ্যে শুরুটা মন্দ ছিল না বাংলাদেশের। তবে সেই ধারাটা আর টেকেনি বেশিক্ষণ। স্কোর যখন ২৬ তখন পরপর দুই বলে আউট হয়ে যান লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। পরে ফিরেছেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। তখন মনে হচ্ছিল এ যেন উইকেট হারানোর মিছিল! ১০ বলের মধ্যে টপ অর্ডারের ৪ ব্যাটসম্যানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

পরে মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির মিলে জুটি গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ৬০ রানের ব্যবধানে দুজন ফিরে গেলে ম্যাচ প্রায় ঝুঁকে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ের দিকে। তবে সেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ম্যাচটা নিজেদের দিকে চলে আসে আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেকে হোসেনের ঝড়ো এক জুটিতে। বিশেষ করে সবে মাত্র দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা আফিফ হোসেনই গড়ে দেন এর মঞ্চ।
 
শুরু থেকে আফিফ ঝড় তুলে ম্যাচ ছিনিয়ে আনেন জিম্বাবুয়ের কাছ থেকে। মাত্র ২৪ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি। অবশ্য জয় থেকে ৩ রান দূরে থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে ৫২ রানে। তার ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও একটি ছয়। তাতে ভঙ্গ হয় মোসাদ্দেক ও আফিফের ঝড়ো ৮২ রানের জুটির। তবে ১৭.৪ ওভারে ৭ উইকেট হারালেও জয় নিশ্চিত করেন সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক। সাইফ চার মেরে জয় তুলে নেন। মোসাদ্দেক অপরাজিত ছিলেন ২৪ বলে ৩০ রানে। ম্যাচ জয়ে ভূমিকা রেখে ম্যাচসেরাও হয়েছেন আফিফ।
 
জিম্বাবুয়ের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন কাইল জার্ভিস, চাতারা ও মাদজিভা। 

এর আগে  মিরপুরে টস জিতে প্রথমে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে টাইগাররা। প্রথম ওভারটি বেশ দেখেশুনে কাটিয়ে দেন দুই ওপেনার ব্রেন্ডন টেলর আর হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, ওঠে ৭ রান।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই অভিষিক্ত স্পিনার তাইজুল ইসলামকে ডেকে আনেন সাকিব। আর বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন তাইজুল। জিম্বাবুয়ের মারমুখী ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলর তুলে মারতে চেয়েছিলেন তাকে, বল ভেসে যায় বাতাসে।

টেলরের স্লগ সুইপটি ঠিক মতো ব্যাটে না লাগায় সেটি থার্ড ম্যানে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহর হাতে চলে যায়। টেলর করেন ৫ বলে ৬। তবে দ্বিতীয় উইকেটে বড় জুটি গড়ে তুলেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আর ক্রেইগ আরভিন। এই উইকেটে ৩৩ বলে তারা যোগ করেন ৪৪ রান।

এর মধ্যে এক ওভারে ১৮ রান দিয়ে বসেন প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৮ রান খরচায় ১ উইকেট নেয়া তাইজুল। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে তার ওপর ঝাল মেটান দুই ব্যাটসম্যান মাসাকাদজা আর আরভিন।

শেষ পর্যন্ত এই জুটিটি ভেঙেছেন মোস্তাফিজুর রহমান সপ্তম ওভারে। নিজের করা প্রথম ওভারটির চতুর্থ বলেই ক্রেইগ আরভিনকে তুলে নেন কাটার মাস্টার। ১৪ বলে ১১ রান করে বাঁহাতি এই পেসারকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে মোসাদ্দেকের সহজ ক্যাচ হন আরভিন।

এরপর অভিজ্ঞ মাসাকাদজাকে সাজঘরের পথ দেখান মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন। ২৬ বলে ৫ চার আর ১ ছক্কায় ৩৪ রানে পৌঁছে যাওয়া জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক হয়েছেন মিড অফে দাঁড়ানো সাব্বির রহমানের দুর্দান্ত এক ক্যাচ।

জিম্বাবুয়ের এই উইকেট শিকারের খেলায় পরের ওভারে যোগ দেন মোসাদ্দেক হোসেনও। নবম ওভারে হাত ঘুরাতে এসে প্রথম বলেই শন উইলিয়ামসকে (২) ফিরতি ক্যাচ বানান এই অফস্পিনার। পরের ওভারে দুর্দান্ত এক থ্রোতে তিমিসেন মারুমাকে (১) রানআউট করেন সাকিব। তার থ্রো থেকে দ্রুতই বেল ফেলে দেন বোলার মোস্তাফিজ।

তবে ষষ্ঠ উইকেটে মুতুমবদজি আর রায়ান বার্ল ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন। এই জুটিতে সবচেয়ে মারমুখী ছিলেন বার্ল। ১৬তম ওভারে সাকিবকে রীতিমত কাঁদিয়ে ছাড়েন এই ব্যাটসম্যান। ওই এক ওভারেই তিনি তুলে নেন ৩০ রান। ২৮ বলে করেন ফিফটি।

শেষ পর্যন্ত এই জুটি থেকে ৫১ বলে আসে ৭৭ রান। বার্ল ৩২ বলে ৫৭ আর মুতুমবদজি ২৫ বলে অপরাজিত থাকেন ২১ রানে।

বাংলাদেশের পক্ষে একটি করে উইকেট নিয়েছেন তাইজুল, মোসাদ্দেক, মোস্তাফিজ আর সাইফউদ্দীন।

জিম্বাবুয়ে একাদশ: হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, শন উইলিয়ামস, নেভিল মাডজিভা, টিনোটেন্ডা মুটুমবদজি, টনি মুনিয়োঙ্গা, কাইল জারভিস, টেন্ডাই চাটারা, ক্রেইগ আরভিন, ব্রেন্ডন টেইলর, টিমিসেন মারুমা, রায়ান বুর্ল।

বাংলাদেশ একাদশ: সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, লিটস দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, সাব্বির রহমান, তাইজুল ইসলাম, সাইফ উদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান।