আরো ৭৩ করোনা রোগী শনাক্ত চট্টগ্রামে , মৃত্যু দু’জনের

ছেলেসহ হাসিনা মহিউদ্দিনের নমুনা ৩য় দফায়ও পজিটিভ

আরো ৭৩ করোনা রোগী শনাক্ত চট্টগ্রামে , মৃত্যু দু’জনের

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

প্রাণঘাতী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে।  চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ৭৩ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের তিনটি ল্যাবে ৪৬৪টি এবং কক্সবাজারের ল্যাবে ৩৭টিসহ মোট ৫০১টি নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামের এই ৭৩ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মহানগরে শনাক্ত হয়েছেন ৪৮ জন। আর ২৫ জন উপজেলা পর্যায়ের। মহানগরে শনাক্তদের মাঝে চমেক হাসপাতালের একজনসহ বেশ কয়জন চিকিৎসক আছেন। নতুন করে কয়েকজন পুলিশ সদস্যেরও করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এদিকে, গতকাল করোনা আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়ে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার সকাল ৭টার দিকে নজরুল ইসলাম (৫৯) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তিনি গত ১৪ মে থেকে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রোববার সকাল ৭টার দিকে এই রোগীর মৃত্যু হয় বলে জানান জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব। অন্যদিকে, মিজানুর রহমান (৩৮) নামে অপর এক রোগীর মৃত্যু হয় বিআইটিআইডি হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোর চারটার দিকে তিনি মারা যান। তাঁর বাসা ফিরোজশাহ কলোনী এলাকায়। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ১৩ মে থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গতকাল ভোর চারটার দিকে মিজানুর রহমানের মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রতন কুমার নাথ।

এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে আরো কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে গতকাল। হাসপাতালে নেয়ার পথে গতকাল রাত সাড়ে দশটার দিকে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি স্মার্ট জিন্সের জিএম। গ্রামের বাড়ি বাঁশখালীতে। তিনি দৈনিক আজাদীর সহসম্পাদক রেজাউল করিমের মামা শ্বশুর। রেজাউল করিম জানান- তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। রোববার সন্ধ্যায় হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। প্রথমে বেসরকারি হাসপাতাল ম্যাঙে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তি না নেয়ায় ফিল্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্বজনরা। ফিল্ড হাসপাতালে পৌঁছলে রাত সাড়ে দশটার দিকে সেখানেই রোগীর মৃত্যু হয়। নমুনা সংগ্রহের জন্য মরদেহ হাসপাতালে রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আগের দিন (শনিবার) রাত দশটার দিকে বজল আহমেদ (৭২) নামে জেনারেল হাসপাতালে আরো একজনের মৃত্যু হয়। তিনি ১৫ মে থেকে হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি ছিলেন। উপসর্গ থাকায় তাঁর শরীরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত রিপোর্টের বিষয়ে জানা যায়নি। অন্যদিকে, রোববার ভোর ৫টার দিকে জেসমিন আক্তার (৩২) নামে এক গার্মেন্টসকর্মীর মৃত্যু হয় বিআইটিআইডি হাসপাতালে। ১৫ মে থেকে ওই নারী সেখানে ভর্তি ছিলেন। তবে মৃত্যুর পর পাওয়া নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে বলে জানান বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. রতন কুমার নাথ।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়- ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে শুক্রবার ২৪৭টি নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামের ৩৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ২০ জন মহানগরীর। আর ১৭ জন উপজেলা পর্যায়ের। উপজেলা পর্যায়ে পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়ায় ৫ জন করে, বোয়ালখালীতে ৪ জন এবং সীতাকুণ্ডে ৩ জন শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ল্যাবে ১৩০টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে গতকাল। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৩০ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তদের ২৮ জনই মহানগরীর। আর উপজেলার ২ জনের মধ্যে হাটহাজারী ও বোয়ালখালীতে একজন করে আছেন।

এদিকে, ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ৮৭টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত ১২ জনের মধ্যে চট্টগ্রামের বাসিন্দা একজনও নেই। এছাড়া কঙবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবে চট্টগ্রামের দুটি উপজেলার (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার) ৩৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে গতকাল। এর মধ্যে ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত ৬ জনই লোহাগাড়া উপজেলার।

সবমিলিয়ে ৫০১টি নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রামের ৭৩ জনের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে চট্টগ্রামের বাইরে অন্যান্য জেলার ১৪ জনেরও করোনা পজিটিভ এসেছে গতকাল। এছাড়া প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরীসহ ওই পরিবারের তিনজনের ৩য় দফা নমুনা পরীক্ষায়ও করোনা পজিটিভ এসেছে গতকাল। আগের দিন চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন আইনজীবীরও করোনা শনাক্ত হয়।

নতুন করে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের আইসোলেশনে নেয়ার কথা জানান সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। আক্রান্তদের বাসা-বাড়ি লকডডাউনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, নতুন করে শনাক্ত ৭৩ জনসহ এ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় করোনা আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৭৮৪ জনে। তবে ঢাকা, রাজবাড়ি, কুমিল্লা ও কক্সবাজারে শনাক্ত হওয়া ৫ রোগী চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮৯ জনে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মারা গেছে ৩৬ জন। এছাড়া নতুন ১০ জনসহ মোট ১১০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন ।