আলমগীর অপুর সরকারবিরোধী পোস্ট, প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন!

আলমগীর অপুর সরকারবিরোধী পোস্ট, প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন!
আলমগীর অপুর সরকারবিরোধী পোস্ট, প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচন!

পোস্টকার্ড ডেস্ক।।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন চট্টগ্রাম ভিত্তিক অনিবন্ধিত অনলাইন চ্যানেল সিপ্লাস টিভির প্রধান সম্পাদক আলমগীর অপু।

শুক্রবার (২৬ মে) দুপুর ২টা ৫২ মিনিটে আলমগীর অপু তার ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে লিখেছেন, “..মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু ভিসা দিবে না বলেছে, এতোটুকুতে একটি ফেয়ার এন্ড ফ্রী ইলেকশন হয়ে গেলো? তার রেজাল্টটা কি পেলেন? আর সামনে আরো কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অপেক্ষা করছে, তার রেজাল্ট কি হবে সেটাও সময় বলবে!”

এর আগের দিন ২৫ মে দেওয়া আরেকটি ফেসবুক পোস্টে আলমগীর অপু লিখেছেন, ‘মার্কিন ভিসা নীতির ঘোষণাটি পুরোপুরি স্পষ্ট! কাদের উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে সবাই মোটামুটি ভালো করেই জানে। কিন্তু তবুও চলবে অভিনয়! এই সুন্দর স্পষ্ট একটি বক্তব্যও হাজার রকমের যুক্তি দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে, হবে।’

গত ২৪ মে ফেসবুকে আরেকটি পোস্টে আলমগীর অপু লিখেছেন, ‘টাকা পয়সা দুর্নীতি করে কেউ রাশিয়া কিংবা চায়নাতে বসবাস করতে চায় না। যেতে চায় যেখানে, সেখানে এরকম নিষেধাজ্ঞা আমাদের আশাবাদী করে তোলে। তাই মনে হচ্ছে আগামী নির্বাচনটি একটি অংশগ্রহণমূলক এবং নিরপেক্ষ হবে। বড় বড় হেডামধারি অনেক মানুষ চিতপতাং হবে। আহারে ! লন্ডন আর আমেরিকার সম্পদগুলোর এখন কি অবস্থা হবে?’

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসা আলমগীর অপুর গত কয়েকদিনে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টগুলোর মধ্যে একটিতে লেখা ছিল, ‘গাজীপুরে বয়স্ক জায়েদা খাতুনের এতো ভোট পাওয়া কি জনপ্রিয়তার নাকি কুশাসনের ফসল?..’ যদিও এই স্ট্যাটাস পরবর্তীতে ডিলেট বা হাইড করে রেখেছেন তিনি।

এ বিষয়ে আলমগীর অপুর বক্তব্য জানতে পারেনি এই প্রতিবেদক । তবে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘আমার বলার স্বাধীনতা যেমন আছে কিন্তু সেই স্বাধীনতা যদি কারো কষ্টের কারণ হয় সেক্ষেত্রে আমি গায়ে পড়ে কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। সে কারণেই বিতর্ক এড়াতেই সরকারি আমলে জন্ম নেয়া কিছু সমর্থকের উৎপাতের কারণে ডিলিট করেছি।’

হঠাৎ করে আলমগীর অপুর এভাবে সরকারবিরোধী পোস্ট ভালোভাবে নিচ্ছেন না আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে তারা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এমরুল করিম রাশেদ ফেসবুকে লিখেছেন, “কুশাসনের ফসল” মন্তব্য দেশদ্রোহিতার শামিল। আইনের আওতায় আনা হোক।

কেউ কেউ ফেসবুকে লিখছেন, আলমগীর অপুর ভাই মুজিবুল হক মঞ্জু সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব। এ কারণে বিএনপির পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট দিচ্ছেন তিনি। আর তাতে করে তার প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে।

এমরুল করিম রাশেদ লিখেছেন, ‘আলমগীর অপুর ভাই সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব। চট্টগ্রাম টু দুবাই টু লন্ডন। অতঃপর এদেশের কুশাসন। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। সাংঘাতিক কম্বিনেশন…!’

কেউ আবার আলমগীর অপুর সাম্প্রতিক লন্ডন সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলী শাহ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলমগীর অপু সাহেব আপনি দেখছি ভালোই দালালি করতে পারেন। এই দালালির জন্য তারেক রহমান আপনাকে কত টাকা দিয়েছে? দালালি করেন ঠিক আছে শেষমেশ বাংলাদেশ বেহায়া পার্টির জন্য? আসলে আপনি ঐ বেহায়া পার্টির লোক, সেটা প্রকাশ্যে নিয়ে আসলেন। এত লুকোচুরি করে লাভ কী? তবে সাবধান হয়ে যান। এটা আপনার জন্য ভালো পরামর্শ।’

একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘ফেসবুকে আলমগীর অপুর সরকারবিরোধী পোস্টগুলো আমাদের নজরে এসেছে। সিপ্লাস টিভির নিবন্ধন না পাওয়ায় তিনি সরকারবিরোধীচক্রের সঙ্গে যোগ দিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট কারণে সিপ্লাসকে নিবন্ধন দিতে আমরা সুপারিশ করিনি। সাংবাদিকতার নামে তারা চাঁদাবাজি, জায়গা দখল, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িত আছে বলে আমরা তদন্তে জেনেছি। এছাড়া আলমগীর অপুর বিরুদ্ধে সংবাদকর্মীদের বেতন না দেওয়া, অফিসকে জুয়ার আসরে পরিণত করা, ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িত থাকা, আমেরিকার অর্থ আত্মসাতের মামলায় ফেরারি আসামি হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। এসব কারণে সিপ্লাস নিবন্ধন পাচ্ছে না। সেই ক্ষোভ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধীচক্রের সাথে হাত মিলিয়েছেন আলমগীর অপু।’

এদিকে এসব বিতর্কের মধ্যে আজ শনিবার (২৭ মে) বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ রেহানার সাথে তোলা নিজের দুটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে আলমগীর অপু লিখেছেন, ‘কিছু মানুষ আছে গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চায়! তাদের জন্য এই ছবিটি পোস্ট দিলাম। সাম্প্রতিক লন্ডন সফরে তোলা।’

সেই স্ট্যাটাসে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আরমান হোসেন তুষা লিখেছেন, ‘কুশাসনের ফসল বলে স্ট্যাটাস দেন, আবার ছোট আপার সাথে ছবি আপলোড দিয়ে কি বুঝাতে চান?’ রিপ্লাই দিয়ে আলমগীর অপু লিখেন, ‘কুশাসনটা কার? জাহাঙ্গীরের কুশাসনের ফসল বুঝিয়েছি।’

এরপর রিপ্লাই দিয়ে আরমান হোসেন তুষা লিখেছেন, ‘কুশাসনটা যদি জাহাঙ্গীরকে বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে জনপ্রিয়তায় ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়া জায়েদা খাতুনটা কে?’ আবুল মফিজ লিখেছেন, ‘আলমগীর অপু গাঁজা খাইছেন মিয়া? নাকি আমাদেরকে এরকম মনে হয়? জাহাঙ্গীরের কুশাসনের ফসল হিসেবে তার মা মেয়র নির্বাচিত হয়েছে? ফাউল লোক।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, ‘সরকার, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নগ্নভাবে কথা বলার দরকার ছিলো না। এভাবে পাবলিক প্লেসে বলা উচিত হয়নি। তিনি (আলমগীর অপু) সেটা ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারতেন। তার এ মন্তব্যগুলো সরকারের জন্য নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। যারা মনে করেন নির্বাচনে পানি ঘোলা হবে। আর ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ। আর তারা ক্ষমতায় এলে আলমগীর অপু তাদের আনুকূল্য পাবেন, এমনটা তিনি ভেবেছেন কিনা, জানি না। কেননা প্রায় সময় দেশে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করা হয়। এ ব্যাপারে দেশি-বিদেশি চক্র সক্রিয় রয়েছে। পানি ঘোলা করে অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করা হয়৷ এখন কোনো সাংবাদিক সেই চক্রের গুটি হয়ে গেল কিনা তা তো বলতে পারছি না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আমি আমার সমকক্ষ কেউ হলে তাকে নিয়ে কথা বলতে পারব। আলমগীর অপু আমার সমকক্ষ, রাষ্ট্রেরও সমকক্ষ কেউ নয়। তাই তাকে নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না। তবে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের শাসনের ফলে কিছু দৈত্য-দানবের সৃষ্টি হয়েছে। এই দৈত্য হলো গাজীপুরের জাহাঙ্গীর। এরকম দৈত্য বাংলাদেশে আরও আছে বলে জানান তিনি।’ - একুশে পত্রিকা

খালেদ / পোস্টকার্ড ;