'কঠোর প্রশাসন ,জটলা কমেছে সড়কে' তল্লাশি নগরীর পাঁচ প্রবেশমুখে

'কঠোর প্রশাসন ,জটলা কমেছে সড়কে' তল্লাশি নগরীর পাঁচ প্রবেশমুখে

সোহেল মারমা।।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসন কঠোর হওয়াতে নগরীর বেশিরভাগ সড়কে মানুষের চলাচল আগের তুলনায় কমেছে। লোকজন প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। রিকশার চলাচল ছিল কম। দোকানপাট ছিল বন্ধ। নগরীর প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তল্লাশি কার্যক্রম ও অভিযান। তবে বিচ্ছিন্নভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার, শিল্প কারখানা এলাকা ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে লোকসমাগমের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এই জায়গাটিতে এখনও বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সকালে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পৃথক চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছেন। একটি অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চন্দ্র ঘোষ বলেন, মঙ্গলবার সারাদিন বাকলিয়ার বিভিন্ন অলিগলির ভেতর পর্যন্ত গিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। সেখানে লক্ষ্য করেছি ওখানকার মানুষ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তারা সরকারি নির্দেশনা মানার পাশাপাশি নিজেরাই সচেতন হয়ে বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন করে দিচ্ছে। অন্যান্য এলাকাতেও মানুষের মধ্যে একটা ভালো সচেতনতাবোধ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন এখন তেমনটা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারগুলো ছাড়া বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ রাখছে। বাজারগুলো খোলা থাকায় সেখানে সামান্য লোকজনের উপস্থিতি থাকছে। এসব বাজার একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে বলে জানান তিনি। ওইদিন একটি হার্ডওয়ারের দোকান খোলা রাখায় দোকান মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা বাদে আর কাউকে জরিমানা করতে হয়নি বলে জানান সুজন চন্দ্র ঘোষ।
জেলা প্রশাসনের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওইদিন পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও খুলশী এলাকাতেও অভিযান পরিচালনা করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রোববার রাতে সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত শুধুমাত্র ওষুধের দোকান ব্যতীত সকল দোকান, মার্কেট, শপিং শপ বন্ধ রাখা নির্দেশ দেন। পরের দিন সোমবার নগরীতে প্রবেশ ও বাহিরের পথ বন্ধের নির্দেশনা দেন। ওইদিন সন্ধ্যার পর থেকেই নগর পুলিশ কঠোর অবস্থানে যায়। নগরীতে প্রবেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে নির্দেশনা পালনের পাশাপশি বিভিন্ন অলিগলিতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশের মাইকিং এর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় লাঠিচার্জও করা হয়। এতে সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। রাতে মানবশূণ্য ছিল সড়কগুলো। আবার করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় নগরীর বিভিন্ন অলি-গলিতে মানুষ স্বেচ্ছায় বাঁশের বেড়া দিয়ে লক ডাউনের ঘোষণা করেছে।

সরেজমিন নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, জিইসিমোড়, লালখান বাজার, জামালখানসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার সড়ক ঘুরে লোকজনের উপস্থিতি বিগত কয়েকদিনের তুলনায় কম পাওয়া গেছে। এ সময় সীমিত হারে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে তা আগের দিনের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম। সম্প্রতি সড়কে রিকশার চলাচল প্রচুর বাড়লেও গতকাল তেমনটা দেখা যায়নি। বিভিন্ন এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া নিষেধাজ্ঞায় পড়া অন্যান্য দোকানপাটগুলো বন্ধ রয়েছে।

নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশের টহল দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান করতে দেখা গেছে। নগরীর প্রবেশমুখ শাহ আমানত সেতু, কালুরঘাট সেতু, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সিটি গেইট ও অঙিজেন এলাকায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে। কেউ নগরীতে প্রবেশ কিংবা বাহির হলে তাকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে মানুষের ভিড় দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারগুলোতে। চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন বাজারগুলোতে সকাল থেকে দিনভর লোকসমাগম দেখা যায়। সেখানে বেশিরভাগ মানুষই সামাজিক দূরত্ব নিয়ম না মেনেই চলছে। এছাড়া বিভিন্ন অলিগলিতে সীমিত আকারে জটলা দেখা দিলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি দেখার পর তারা পালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী বলেন, বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ও কাঁচা বাজারগুলো একটা সময় পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এতে মানুষজনের ভিড় এখন সেখানে বেশি থাকছে। গালিব চৌধুরী বলেন, আগে ২৪ ঘণ্টা ধরে সব ধরণের দোকানপাট খোলা থাকত। সেগুলো ঘিরে মানুষজনের প্রচুর ভিড় হত। বর্তমানে দোকানপাট বন্ধ-খোলার ব্যাপারে নির্দিষ্ট সময় বেধে দেওয়ার পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিথিলতা আনায় মানুষের ভিড় আর আগের মতো নেই। এরপরও বাজারগুলো ঘিরে কিছু ভিড় হচ্ছে। এটা সামলাতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। সেখানে আমাদের আরও কাজ করার প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় নিম্নবিত্ত মানুষদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখনো পর্যন্ত ত্রাণের জন্য নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষজন বিভিন্ন জায়গায় ভিড় করছেন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অবশ্য এই বিষয়ে তাদের মাইকিং করে সচেতন করার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্বের মধ্য থেকে ত্রান নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। ত্রাণ নেওয়া এসব মানুষদের সামলাতে গিয়ে আরেকটি জায়গায় বেগ পেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের।

কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ত্রাণ নিতে আসা লোকজনদের বেশিরভাগই হচ্ছেন নারী। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা কার্যক্রমে নারী পুলিশ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সমস্যা হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রমে মহিলা পুলিশ মোতায়েন নিয়ে ইতিমধ্যে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গালিব চৌধুরী বলেন, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণি হিসেবে যারা বসবাস করছেন তাদের মধ্যে একটা ভালো সচেতনতাবোধ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনো ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়া ও প্রশাসনের কড়াকড়িসহ নানা কারণে তারা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেতন। সরকারের নির্দেশনাগুলো মানার প্রবণতা বর্তমানে তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল জেলা প্রশাসনের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা ও ডবলমুরিং থানা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন। একইদিনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজী তাহমিনা সারমিন ও উমর ফারুকের নেতৃত্বে কোতোয়ালী, বায়েজিদ, সদরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় পৃথক দুইটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। গতকাল বিকাল থেকে আরও ৬জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে।

নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবু বক্কর সিদ্দিক গতকাল বলেন, সিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার থেকেই নগরীর প্রবেশমুখের বিভিন্ন পয়েন্ট চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ওগুলো ছাড়াও নগরীর অভ্যন্তরে পুলিশের আরও কয়েকটি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে। নির্দেশনার বাইরে কোনো ব্যক্তি বা যানবাহন চলাচল করছে কিনা তল্লাশি কার্যক্রমে সেগুলো দেখা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার দোকানপাট সন্ধ্যা ৭টার পরেই বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এসবের ব্যাপারে আপনারা জেনেছেন। বর্তমানে সাধারণ মানুষজন সরকারি নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় পজিটিভ হয়েছে বলে জানান নগর পুলিশের এই কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর আন্দরকিল্লা, চেরাগী পাহাড়, জামালখান, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ধার পর দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা যায়। রাস্তাঘাটগুলো ছিল ফাঁকা। নগর পুলিশের বিভিন্ন থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতনরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাইকিং করে সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করার পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে পুলিশকে কল করার অনুরোধ করছেন।