কবি আর কবিতা যখন একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে যায়, তখন পরিবেশটিই হয়ে ওঠে কবিতাময় -রুনা তাসমিনা

কবি আর কবিতা যখন একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে যায়, তখন পরিবেশটিই হয়ে ওঠে কবিতাময় -রুনা তাসমিনা
কবি আর কবিতা যখন একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে যায়, তখন পরিবেশটিই হয়ে ওঠে কবিতাময় -রুনা তাসমিনা

কোনো কোনো সময় থাকে শুধুই নীরবতার। কোনো কোনো সময়ের কাছে মানুষ আত্মসমর্পণ করে নিজেকে। কারণ সে সময়টা শেখার। সে সময়টা দেখার। শুভেচ্ছা ভালোবাসায় ভেসে যাওয়া মঞ্চ হার মানায় আলোর উজ্জ্বলতাকে- সেই দৃশ্য আমাদের পুলকিত করে। আমরা নিঃশব্দে গভীর মনোযোগে শুনি সাফল্যের ইতিহাস।

বলছি মমতাজ সবুর সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের কথা। কিছু আলোকিত মানুষের আলো ছাড়িয়ে যায় কৃত্রিম আলোর রোশনাইকেও। চট্টগ্রামে একাডেমি প্রবর্তিত মমতাজ সবুর সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করলেন গতকাল ২০ মে ২০২৩ শ্রদ্ধেয় কবি কামাল চৌধুরী। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই বলে দিচ্ছিলো এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র চট্টগ্রামের হয়ে থাকেনি, হয়ে উঠছে জাতীয় পর্যায়ের একটি অনুষ্ঠান। তবু্ও আমরা গর্ব করে বলবো, এটি চট্টগ্রামেরই অনুষ্ঠান। অত্যন্ত সফল এই আয়োজনের উদ্যোক্তা খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক শ্রদ্ধেয় রাশেদ রউফকে জানাই অভিনন্দন। প্রত্যেক বক্তা তাঁদের কথায় চট্টগ্রাম একাডেমির এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন উদার চিত্তে।

চট্টগ্রাম একাডেমি এমন একটি সংগঠন যেখানে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সাহিত্য সংস্কৃতি সংস্কৃতির চর্চা এবং গুণীজনদের সম্মানিত করে আসছে। রাশেদ রউফ ভাইয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে এখানে নেয়া হয় সাহিত্য সংশ্লিষ্ট নানা উদ্যোগের। যেটি আমার মনে হয় না বাংলাদেশের আর কোনো প্রতিষ্ঠান করে থাকে। প্রত্যেক বক্তা নিয়ে এসেছিলেন অভিনন্দনের বারতা নিয়ে চমৎকার কথার মালা। তাই চেষ্টা করেছি ভিডিওতে সেই কথাগুলো সবাইকে শোনানোর। এই পুরস্কার দিতে পেরে চট্টগ্রামে একাডেমি যেমন ধন্য হয়েছে তেমনি তিনি গ্রহণ করে চট্টগ্রাম একাডেমিকে ধন্য করেছেন। ড. আনোয়ার আলম আপার ভাষায় বলি, সোনার হাতে সোনার কাঁকন, কে কার অলংকার!

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত এই পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠান প্রাণবন্ত এবং সফল করে তুলেছেন লেখক পাঠকের পাশাপাশি অসংখ্য সাহিত্য অনুরাগী।

খ্যাতিমান বাচিক শিল্পী আয়েশা হক শিমুর পরিচালনায় উঠোন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বাচিক শিল্পীদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক কবি কামাল চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মমতাজ সবুরের কন্যা মহিলা কলেজ-চট্টগ্রামের সাবেক অধ্যক্ষ, কবি সাহিত্যিক তহুরীন সবুর ডালিয়া। উপহার তুলে দেন বায়েজিদ মডেল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান মো. মাজহারুল হক, ক্রেস্ট তুলে দেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ড. অনুপম সেন। স্বাগত বক্তব্য নিয়ে আসেন চট্টগ্রাম একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক রাশেদ রউফ। মঞ্চে উপবিষ্ট পুরস্কার প্রাপ্ত লেখকসহ সম্মানিত অতিথিদের প্রতি এবং এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, "চট্টগ্রাম একাডেমি প্রবর্তিত মমতাজ সবুর পুরস্কার কবি কামাল চৌধুরীকে দিতে পেরে এই পুরস্কার আরও বেশি মর্যাদায়, আরো বেশি উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে আমি মনে করি। মমতাজ সবুর স্মরণে তিনি বলেন, মমতাজ সবুর পঞ্চাশের দশকের একজন প্রতিভাবান লেখক।"

এরপর বক্তব্য নিয়ে আসেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক গবেষক শিক্ষাবিদ শ্রদ্ধেয় ড. আনোয়ারা আলম। তিনি বলেন, 'কবি কামাল চৌধুরীর কবিতা ও শিল্পসত্তার অন্যতম প্রেরণা মুক্তিযুদ্ধ। তিনি দ্রোহ এবং তারুণ্যের কবি। কবিতা চর্চার পাশাপাশি দেশের প্রগতিশীল উন্নয়নের পথে দীপ্ত ভূমিকা রেখে চলেছেন। মমতাজ সবুর সম্পর্কে বলেন, ' মমতাজ সবুর তাঁর ভেতরের সৃষ্টিশীলতায় নির্মিত ভূবনে একাকী সাঁতার কেটে কেটে রচনা করেছেন সাহিত্য। তাঁর লেখনিতে পাওয়া যায় নারীর বেঁচে থাকার সংগ্রামের বাস্তব বিবরণ।' বক্তব্য রাখেন শ্রদ্ধেয় কবি ও নাট্য ব্যক্তিত্ব শিশির দত্ত, জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক শ্রদ্ধেয় কবি মিনার মনসুর , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক, প্রাবন্ধিক শ্রদ্ধেয় ড. মাহবুবুল হক, জেলা দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূইয়া, মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুন নেসা।

মমতাজ সবুর পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি শ্রদ্ধেয় বোরহান উদ্দিন, অনুষ্ঠানে কবি কামাল চৌধুরীর কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তি শিল্পী অঞ্চল চৌধুরী ও কঙ্কন দাশ।

আমরা সুর ভালোবাসি। আমরা কবিতা ভালোবাসি। আমরা এই বাংলার প্রকৃতিকে ভালোবাসি। সেই ভালোবাসা যখন উৎসর্গ করতে যাই তখন যে আনন্দ মন থেকে উৎসারিত হয়, সেটি বিভিন্ন সুরে আমাদের মনে বেজে ওঠে। উপস্থাপনার মাঝে মাঝে বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সুস্নিগ্ধ কন্ঠে যখন কবি কামাল চৌধুরীর কবিতাংশ মঞ্চে ধ্বনিত হয়, তখন যেনো প্রকৃতির সবুজাভ আলোয় ভরে যায় পুরো হল। যে সবুজকে ভালোবেসে কবি কামাল চৌধুরী কবিতার ভাষায় লিখে যান 'ভ্রমণ কাহিনী'।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের কথামালা ছিলো সুন্দর আর শিক্ষণীয়। কথাগুলো শুধু আমরা যারা উপস্থিত ছিলাম তারা নয়, যাঁরা লেখালেখি করেন, যাঁরা সাহিত্য ভালোবাসেন প্রত্যেকের জন্য জরুরি। তাই ছবির সাথে ভিডিও ধারণ করে রাখলাম।

মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম একাডেমির পরিচালকবৃন্দ প্রাবন্ধিক রেজাউল করিম স্বপন, প্রাবন্ধিক নেছার আহমেদ, সংগঠক জাহাঙ্গীর মিঞা, কথাসাহিত্যিক দীপক বড়ুয়া, গল্পকার বিপুল বড়ুয়া, অধ্যাপক রীতা দত্ত, প্রাবন্ধিক এস এম মোখলেসুর রহমান, কবি শারুদ নিজাম, কবি রহমান হাবীব, কবি গল্পকার অনুবাদক ফারজানা রহমান শিমু, সংগঠক এস এম আবদুল আজিজ।

মঞ্চের সামনে ছিলেন অগণিত দর্শক। অনেকের বাসার জায়গা হয়নি। কিন্তু কারো মুখে ছিল না একফোঁটা বিরক্তি। সবাই মনোযোগ দিয়ে পিনপতন নীরবতায় প্রত্যেক বক্তার কথা শুনেছেন। এটি আমাদের চট্টগ্রাম একাডেমির সার্থকতা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকে শেষ পর্যন্ত থেকে সফল করে তোলেন আয়োজন। চট্টগ্রাম একাডেমির এই বিশাল পরিবারকে যিনি সুশৃংখলভাবে পরিচালিত করেন তিনি আমাদের সবার প্রিয় রাশেদ রউফ। মমতাজ সবুর পুরস্কার প্রথম যার হাতে তুলে দেওয়া হয় তিনি বাংলাদেশের আরেক কীর্তিমান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

কবি আর কবিতা যখন একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে যায়, তখন পরিবেশটিই হয়ে ওঠে কবিতাময়।

সাগরের আছে ঢেউ, বাতাসের আছে ধ্বনি, পাখির আছে কুজন আর সবুজ প্রকৃতির আছে একতা। সৃষ্টিশীল মানুষের হাত শত ব্যস্ততায়ও থেমে থাকে না। কবি ঠিকই শব্দের পাশে শব্দ বসিয়ে যান নিরবচ্ছিন্নভাবে। কবি কামাল চৌধুরী তেমন একজন। আমরা সম্মানিত কবি কামাল চৌধুরীকে জানাই উষ্ণ অভিনন্দন।

খালেদ / পোস্টকার্ড;