কুমিল্লা কোটবাড়ির শতাব্দীর ঐতিহাসিক শালবন বিহার

এবিএস ফরহাদ, কুবি ।।

কুমিল্লা কোটবাড়ির শতাব্দীর ঐতিহাসিক শালবন বিহার
কুমিল্লা কোটবাড়ির শতাব্দীর ঐতিহাসিক শালবন বিহার
লালপাহাড়ের মাটির উপরে লাল ইটের সুরকি আর অপরূপ সুন্দর গাথুনী। ইটের গাথুনিগুলো আজকের দিনের মত সিমেন্ট, কংক্রিটের তৈরী নয়। কাদা মাটি আর ইট দিয়ে তৈরী। এখানে রয়েছে সুদৃশ্য কেন্দ্রীয় মন্দির, হলঘর, গুহা, পানির কূপ, স্তূপ ইত্যাদি। এ সৌন্দর্য যে কাউকে আকৃষ্ট করবে সহজে। লালইটের এই স্থপত্যশিল্পসমূহ আজকের নির্মিত নয়।


আনুমানিক ৭ম-৮ম শতকে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপত্য, বিহার, মন্দির, স্তূপ ইত্যাদিও নিদর্শন। দেশের প্রধান প্রধান প্রত্নস্থলের মধ্যে অন্যতম দেশের কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে অবস্থিত মাটি খুড়েঁ প্রাপ্ত ঐতিহাসিক শালবন বিহার। এখানে শালবন বিহার ছাড়াও রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, লতিকোট বিহার, রানীর বাংলো, আনন্দ বিহারসহ ছোট ছোট আরো কয়েক প্রতœস্থান রয়েছে। তবে দেশের অন্যতম প্রত্নস্থান কুমিল্লার শালবন বিহার। বিহারটির আশেপাশে পূর্বে প্রচুর শাল ও গজারির ঘন বন ছিল বলে এর নামকরন করা হয়েছে শালবন বিহার। ধারণা করা হয় এটি একটি বৌদ্ধদের বিদ্যা শিক্ষালয় ও ধর্মীয় তীর্থস্থান ছিল, এখানে পৃথিবীর প্রাচীনতম একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বলে ধারণা করা হয়। খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দির শেষ ও ৮ম শতাব্দির শুরুতে দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বিহারটি নির্মান করেন।

বর্গাকৃতির বিহারটির আয়তন প্রায় ১৬৭ বর্গমিটার। ১১৫টি কক্ষ রয়েছে, কক্ষগুলো নির্মাণ করা হয়েছে বিহারের চারদিকের বেষ্টনীর দিকে পিঠ করে। আর কক্ষের মাঝে দেয়ালগুলি ১৫ মিটার চওড়া। যা ১.৫১ মিটার প্রশস্ত দেয়াল দ্বারা একে অন্যকে পৃথক করেছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত শালবন বিহার খননে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। তার মধ্যে ৮টি তাম্রলিপি, প্রায় চারশত স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা,এছাড়াও অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক, টেরাকোটা, সিলমহর, মাটির মূর্তি পাওয়া যায়। যেগুলো সংরক্ষিত আছে পাশ্ববর্তী ময়নামতি জাদুঘরে।

দেশের অন্যন্যা প্রত্নস্থানের মত শালবন বিহার সম্পর্কে জানতে ও দেখতে প্রতিদিন হাজারো দেশী বিদেশী দর্শনার্থীরা ভীড় করে। তবে শীতের দিনে (অক্টোবর থেকে মার্চ) বেশী পর্যটক পাওয়া যায় বলে জানান সহকারী কস্টোডিয়াম হাফিজুর রহমান। মূলত ৭ম-৮ম শতাব্দির বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তীর্থস্থান ছিল বলে ধারণা করা হয়। তখনকার ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও তিব্বত, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, চীনসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বৌদ্ধ সাধুরা এখানে আসতেন।  

এখানে দর্শনার্থীরা আসে মূলত বিনোদনের পাশাপাশি পূর্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও তৎকালীন সমাজের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার জন্য। তাদের অপরূপ স্থপত্য শিল্প নির্মাণ, নিত্যদিনের জীবনাচরন জানতে। এছাড়া অনেকে শুধু বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভ্রমনে আসে। তবে কস্টোডিয়াম হাফিজুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র বিনোদনের ছলে না এসে দেশের ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা নেয়া উচিত। সকলের অতীত ইতিহাস জানা দরকার। আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শালবন বিহারের গুরুত্ব দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু আমাদের জনবল কম হওয়ায় সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তবে দর্শনার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিতে পারলে এবং শালবন বিহারের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারলে আরো বেশী পর্যটক আসবে বলে আশা করছি।  


দেশের অন্যন্যা পর্যটন কেন্দ্রের মত শালবন বিহারও দর্শকদের আগ্রহের মূল জায়গা হয়ে উঠেছে। পরিবার, বন্ধুদের কিংবা প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটাতে অনেকে আসছে শালবন বিহারে। ইতিহাস জানার পাশাপাশি বিহারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে শত শত দর্শনার্থী। বিনোদনের পাশপাশি শিখতেও আসছে অনেকে। ফলকচিত্রে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকা ও কোন গাইডের ব্যবস্থা না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছে ঘুরতে আসা অনেক দর্শক।