চট্টগ্রামে চোখ ওঠা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, করণীয় কী? 

চট্টগ্রামে চোখ ওঠা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, করণীয় কী? 
চট্টগ্রামে চোখ ওঠা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, করণীয় কী? 

স্বাস্থ্য ডেস্ক ।।

চট্টগ্রামে দিন দিন চোখ ওঠা রোগের প্রকোপ বাড়ছে । প্রায় প্রতিটি ঘরেই এ রোগে আক্রান্তের খবর মিলছে। আর একজন আক্রান্ত হলেই পরবর্তীতে পুরো পরিবার আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালের বহিঃবিভাগের পাশাপাশি চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে এ রোগে আক্রান্তের ভিড় বেড়েছে। 

চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসা শাস্ত্রে চোখ ওঠা রোগকে ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস বলা হয়। এটা সিজনাল একটি রোগ। গরমে এবং বৃষ্টিতে এই রোগ বেশি ছড়ায়। ঋতু পরিবর্তনের ফলে এই ভাইরাল ইনফেকশন হচ্ছে। ভাইরাস জ্বর যেমন ৫/৭ দিনে ভালো হয়ে যায়, এটাও ৫/৭ দিনে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এন্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে হঠাৎ চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ওষুধের দোকানগুলোতে চোখের ড্রপের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ওষুধ বিক্রেতা চোখের ড্রপের বাড়তি দাম আদায় করছে বলে রোগীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।

এ রোগ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে চক্ষু চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে আর বর্ষায় চোখ ওঠার প্রকোপ বাড়ে। রোগটি ছোঁয়াচে। ফলে দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি ছড়ায় বার বার হাত চোখে হাত দিলে। এ জন্য ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তবে আক্রান্তের চোখের দিকে তাকালে এ রোগ ছড়ায় বা অন্যরাও আক্রান্ত হয়, এটি ভুল ধারণা বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মেদুল হক মেজবাহ।

তিনি বলেন, চোখ ওঠা রোগ হলে, আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ভাইরাসজনিত এ রোগ যার হবে, তিনি যেন অন্যের সংস্পর্শে না যান। রোগী চোখে কালো চশমা পরে থাকবেন। রোগীর ব্যবহার করা তোয়ালে, বিছানা, বালিশ, রুমাল, টিস্যু যেন অন্য কেউ ব্যবহার না করে। সবক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। বাচ্চাদের চোখ ওঠলে, স্কুলের অন্য বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখতে তাকে যেন কিছু দিন স্কুলে যেতে দেয়া না হয়।

এ রোগ ভাইরাসজনিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখের কর্নিয়া ইনভলব বা এফেক্টেড হচ্ছে না জানিয়ে ডা. মেজবাহ বলেন, কর্নিয়া এফেক্টেড হলে চোখ ঝাপসা হয়ে আসবে ও খুব ব্যথা করবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চোখের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আর ওষুধ বিক্রেতা বা দোকানির কথায় চোখে যেন তেন ড্রপ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন চমেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের এই চিকিৎসক।

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ : চোখের নিচের অংশ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে ব্যথা, খচখচ করা বা অস্বস্তি। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, পরে অন্য চোখে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগে চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে। চোখের নিচের অংশ ফুলে ও লাল হয়ে যায়। চোখ চুলকাতে থাকে। আলোয় চোখে আরও অস্বস্তি হয়। কিছু ক্ষেত্রে চোখে তীব্র ব্যথা এ রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

আক্রান্ত হলে করণীয় : চোখ চুলকানো থেকে বিরত থাকতে হবে। রোগীর ব্যবহার করা সামগ্রী অন্য কেউ যাতে ব্যবহার না করে। এক চোখে সমস্যা দেখা দিলে অন্য চোখকে সংক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে হবে। চোখে সাবধানে টিস্যু বা নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। ব্যবহার করা সেই টিস্যু বা কাপড় সাবধানে নিরাপদ স্থানে ফেলতে হবে। এসব যাতে অন্য কারো সংস্পর্শে না আসে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সানগ্লাস (কালো চশমা) পরতে হবে। ঝাপসা দেখলে, চোখ বেশি ফুলে গেলে বা বেশি ব্যথা হলে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

সতর্কতা : আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ পরিহার করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির রুমাল, কাপড়-চোপড়, তোয়ালে ব্যবহার করা যাবে না। হ্যান্ডশেকের মাধ্যমেও অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন। তাই হ্যান্ডশেক করার পর দ্রুত স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। নোংরা হাতে চোখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

চোখের ড্রপের চাহিদা বেড়ে কয়েক গুণ : রোগী বেড়ে যাওয়ায় ওষুধের দোকানগুলোতে চোখের ড্রপের চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ওষুধ বিক্রেতা ড্রপের বাড়তি দাম আদায় করছেন বলে অভিযোগ রোগীদের। চোখ ওঠা রোগের ওষুধ হিসেবে মঙিফ্লাঙাসিন/লেভোফ্লঙাসিন/লুমেফ্লঙাসিন ড্রপ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

অনেক দোকানি বাড়তি দাম আদায়ের জন্য ড্রপ থাকলেও নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
একই সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী আক্রান্ত হওয়ায় চোখের ড্রপের চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে গেছে জানিয়ে চমেক হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মেদুল হক মেজবাহ বলেন, চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কেউ কেউ দাম বেশি চাচ্ছে বলে অনেক রোগী আমাদেরকেও জানিয়েছেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;