চট্টগ্রামের কোনো মার্কেট খুলছে না ঈদের আগে

চট্টগ্রামের কোনো মার্কেট খুলছে না  ঈদের আগে
চট্টগ্রামের কোনো মার্কেট খুলছে না ঈদের আগে

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। 

ঈদের আগে চট্টগ্রাম নগরীর কোনো মার্কেটই খুলছেননা ব্যবসায়ীরা। এমনকি বন্ধ থাকছে নগরীর কাপড়ের সর্ববৃহৎ পাইকারী মোকাম টেরিবাজারও। মার্কেট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে রিয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমুন্ডি লেইনের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতি।

সরকারের পক্ষ থেকে যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে তা মানা সম্ভব নয় বলেই মূলত মার্কেট খোলা না রাখার ঘোষণা দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ঈদের বাজারে হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন সুযোগ থাকবেনা। তাই ঝুঁকি এড়াতে তারা মার্কেট বন্ধ রাখাকেই নিরাপদ মনে করছেন।

এদিকে মার্কেট খোলা রেখে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সংক্রমণ প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান।

শনিবার (৯ মে) দুপুর ১২টায় সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে নগরীর সকল মার্কেটের দোকান মালিক সমিতি, ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের যৌথ বৈঠকে এ ঘোষণা দেন তিনি। এ বৈঠকে প্রায় ৩০০ মার্কেট ও দোকান মালিক উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঈদের আগে সরকার মার্কেটগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। সাথে সাথে জনস্বার্থ চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মানারও নির্দেশনা দিয়েছিল। আজকের (শনিবার) বৈঠকে আমরা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে সরকারের দেওয়া শর্তগুলো দিয়েছি। তারা সার্বিক দিক বিবেচনায় মার্কেট বন্ধ রাখার সম্মিলিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আমরা জানিয়ে দিয়েছি, যদি মার্কেট কেউ খুলে তাহলে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে মার্কেট বন্ধসহ সংক্রমণ প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণসংযোগ) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘বৈঠকে আলোচিত স্বাস্থ্য বিধির মধ্যে ছিল ক্রেতা বিক্রেতা সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পড়া, পর্যাপ্ত সেনিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা, থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা রাখা, নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাটাকা নিশ্চিতসহ করোনা সংক্রমিত না হয় যাবতীয় সুব্যবস্থা রাখা। কোন মার্কেটে যদি স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হয় সাথে সাথে মার্কেট বন্ধ করে সংক্রমনের আইনে মামলাসহ ব্যবস্থা নেওয়া কথাও উল্লেখ করা হয়।’

মিমি সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমরা শুক্রবার নগরীর ১১টি অভিজাত শপিংমলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বসে এই পরিস্থিতিতে মার্কেট না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যেসব দিক বিবেচনায় আমরা আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা সবাই প্রশংসা করেছে। পুলিশ কমিশনার মহোদয়ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার নির্দেশিত কিছু দিক নিদের্শনা দিয়েছেন। কিন্তু ঈদে যে পরিমাণ ক্রেতা সমাগম হয় তাতে কোনভাবেই স্বাস্থবিধি মেনে চলা সম্ভব হবেনা। এতে জীবনের ঝুঁকিতে যেমনি যেকোন ব্যবসায়ীও পড়তে পারেন, তেমনি স্টাফ থেকে শুরু করে ক্রেতারাও ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই জীবিকার চেয়ে জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি করোনার এই দূর্যোগে আমারা মার্কেটসমূহ বন্ধ রাখবো।’

টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘করোনার এমন পরিস্থিতিতে মার্কেট খোলা নিয়ে আমাদের বৈঠক ছিলো পুলিশ কমিশনারের সাথে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে টেরি বাজার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমুন্ডি লেইনসহ বাকিসব মার্কেট বন্ধ থাকবে। যদি কেউ মার্কেট খোলা রাখে তাহলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ১৩টি শর্ত মেনেই খুলতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা ঝুঁকি না নিয়ে ব্যবসায়ীরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সব মার্কেট বন্ধ রাখার।’

প্রসঙ্গত ৮ মার্চ দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ক্রমান্বয়ে তা বাড়তে থাকায় ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। সেদিন থেকেই মূলত দেশের সকল শপিংমল, মার্কেট বন্ধ রয়েছে। ঈদের বেচাবিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার গতসপ্তাহে শর্ত সাপেক্ষে মার্কেট খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

১০ থেকে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে ৪ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে বলা হয় ওই চিঠিতে।

শুক্রবার দুপুরে বৈঠক করে চট্টগ্রাম নগরীর মিমি সুপার মার্কেট, সানমার ওশান সিটি, ফিনলে স্কয়ার, আফমি প্লাজা, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, কল্লোল সুপার মার্কেট, আমিন সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, খুলশী কনকর্ড টাউন সেন্টার ঈদেও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। শনিবার নগরীর অন্যান্য মার্কেট, শপিংমলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সাথে নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো দোকানপাট ঈদের আগে আর খুলছে না।