চমেক হাসপাতালে টেস্ট করতেই দীর্ঘ লাইন - ভোগান্তি চরমে, এখন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুবিধা

চমেক হাসপাতালে টেস্ট করতেই দীর্ঘ লাইন - ভোগান্তি চরমে, এখন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুবিধা
চমেক হাসপাতালে টেস্ট করতেই দীর্ঘ লাইন - ভোগান্তি চরমে, এখন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুবিধা

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেকটা কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার (টেস্ট) সুবিধা রয়েছে । আর কম খরচে পরীক্ষা করাতেই হাসপাতালের প্যাথলজিতে দিন দিন ভিড় বাড়ছে। যেন তিল ধারণের ঠাঁই থাকছেনা। দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার ভোগান্তি সয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে রোগীদের।

প্যাথলজি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিবিসি, আরবিএস, ক্রিয়েটিনিন, বিলরুবিন, সিআরপি, এসজিপিটি, ইলেকট্রলাইট, কোলেস্ট্রল, ইউরিন, ডোপ টেস্টসহ প্যাথলজি সংক্রান্ত ৩৮ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা রয়েছে এখানে। খরচও বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক কম। প্রায় অর্ধেক বলা চলে। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে মাত্র ২০০ টাকায় রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু বাইরে এ পরীক্ষার ফি ৪০০ টাকার কম নয়। একই ভাবে প্রায় সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের চেয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কয়েকগুণ বেশি। তুলনামূলক অনেক কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যই হাসপাতালের প্যাথলজিতে দিন দিন রোগীদের ভিড় বাড়ছে। দৈনিক কম হলেও ৬ শতাধিক রোগীর বিভিন্ন টেস্ট করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া। তিনি জানান, ৬/৭ মাস আগেও দৈনিক সর্বোচ্চ আড়াইশ থেকে তিনশ টেস্ট হতো। কিন্তু এখন ৬ শতাধিক টেস্ট হচ্ছে দিনে। তাছাড়া নতুন করে ডোপ টেস্ট চালু হয়েছে। দিনে অন্তত একশ জনের ডোপ টেস্ট হয় এখানে। সবমিলিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংখ্যা আগের তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুটি কাউন্টারে টেস্ট বাবদ ফি আদায় করা হয়ে থাকে বিভাগে। আর নমুনা সংগ্রহ করা হয় তিনটি বুথে। কিন্তু রোগীদের প্রচণ্ড চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে বয়স্ক, নারী-শিশুসহ সব রোগীদের। প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝে অস্বাভাবিক গরমে রোগীদের কাহিল অবস্থা। রোগীরাও বলছেন- এতসব ভোগান্তি সয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অন্যতম কারণ, এখানে খরচ কম। সবার পক্ষে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরীক্ষার ফি বহন করা সম্ভবপর নয়।

অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলে রোগীদের এ ভোগান্তি দূর করতে পারে বলে মনে করেন রোগী ও সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ফি আদায়ের কাউন্টার ও নমুনা সংগ্রহের বুথ আরো বাড়ানো জরুরি। তাছাড়া রোগীদের যাতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে না হয়, কর্তৃপক্ষ চাইলে সে বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে পারে। সেটি করা গেলে রোগীদের দুর্ভোগ কমবে। অবশ্য,হাসপাতালের প্যাথলজিতে রোগীদের চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি ইতিবাচক বলেই মনে করেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।

তিনি বলেন, হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ যে কোনোভাবে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলেই এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের ভিড় বাড়ছে। এটি খুবই ইতিবাচক দিক। তবে রোগীদের দুর্ভোগ-ভোগান্তির বিষয়টি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু সংকটও দৃশ্যমান হয়েছে। রোগীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি আমরা দেখেছি। রোগীদের দুর্ভোগ কিভাবে লাঘব করা যায়, সে বিষয়েও আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। কাউন্টার ও নমুনা বুথ বাড়ানোর পাশাপাশি বিভাগের পরিসর বাড়ানোর বিষয়েও চিন্তা রয়েছে। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক।

এখন সন্ধ্যা পর্যন্ত টেস্ট সুবিধা :

এতদিন আউটডোরের (বহিঃবিভাগের) রোগীরা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টিকিট কেটে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে টেস্ট করার সুযোগ পেতেন। যদিও ইনডোরের (আন্তঃবিভাগের) রোগীদের টেস্ট করা হতো সন্ধ্যা পর্যন্ত।

তবে সমপ্রতি আউটডোরের রোগীদেরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার (টেস্ট) সময়সীমা বাড়াতে নির্দেশনা দেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। এর প্রেক্ষিতে আউটডোরের রোগীরাও এখন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টেস্ট করার সুযোগ পাচ্ছেন হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে। এ তথ্য নিশ্চিত করে প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া বলেন, কোনো রোগী আউটডোরে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখিয়েছেন। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে থাকলে ওই রোগী এখন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আমাদের প্যাথলজি বিভাগে টেস্ট করাতে পারছেন।

হাসপাতাল পরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনায় মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে এ নিয়ম চালু করা হয়েছে বলেও জানান শুভাশীষ বড়ুয়া।
জনবল সংকট :

প্যাথলজি বিভাগে চিকিৎসক আছেন ৭ জন। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মূল জনবল হিসেবে পরিচিত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে ৭ জন সরকারি পর্যায়ের। আর বাকি ৭ জন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া। কিন্তু রোগীর চাপ ও শিফট বৃদ্ধিতে বিদ্যমান জনবল খুবই অপ্রতুল। এই জনবলে প্রত্যাশিত সেবা দান সম্ভবপর নয়। রোগীর চাপ সামাল দিতে অন্তত ২০-২৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন বলে প্যাথলজি বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আজাদী

খালেদ / পোস্টকার্ড ;