থমকে আছে সীতাকুণ্ডের কৃষি শিল্পের সম্ভাবনা

থমকে আছে সীতাকুণ্ডের কৃষি শিল্পের সম্ভাবনা
থমকে আছে সীতাকুণ্ডের কৃষি শিল্পের সম্ভাবনা

বিশেষ প্রতিবেদক।।

আস্তে আস্তে থেমে যাচ্ছে সীতাকুণ্ডের কৃষি শিল্পের সম্ভাবনা। উপজেলার বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর ও তার আশপাশসহ বেশ কিছু এলাকাতেই বছরের পর বছর প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকছে। পানি সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষির সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। অথচ এ সীতাকুণ্ডকে ঘিরেই রয়েছে কৃষি বিপ্লবের সম্ভাবনা।

শুধু কৃষি ক্ষেত্রেই নয়, সীতাকুণ্ডে অবস্থিত শিল্পোদ্যোক্তাদেরও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ পানি। হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেও কেবল পানির সংকটে বিপদে রয়েছেন এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে পানি সংরক্ষণ করে ব্যবস্থা করছে। তবে অনেকে ভূ-গর্ভস্থ থেকে অনিয়ন্ত্রিত পানি উত্তোলণের কারণে স্তর নেমে গেছে অনেক নিচে। যার কারণে আড়াই হাজার ফুট গভীরে গিয়েও পানি না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন অনেকেই।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সয়েল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের করা এক গবেষণায় সীতাকুণ্ডের মাটিতে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি প্রমাণ করে কীভাবে জাহাজ ভাঙার দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে এই জনপদে। যার কারণে কৃষির উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। আর এসব ঘটছে মূলত বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক জাহাজভাঙা শিল্পের কারণে। জাহাজভাঙা থেকে নির্গত হওয়া প্রায় এক ডজনের বেশি বিষাক্ত পদার্থের কারণে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত হুমকির মুখে পড়ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, বিগত দুই দশক ধরে সীতাকুণ্ডে পানির স্তর ক্রমশ নেমে যাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফসলি জমি থেকে বসতবাড়ি পর্যন্ত সর্বত্রই। যার কারণে বহু টিউবওয়েল ও কুয়ো অকেজো হয়ে গেছে। এমনকি অনেকস্থানে গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না। যা ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে। এমনকি লাখ টাকা খরচ করে গভীর নলকূপ স্থাপন করেও পানি না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী যন্ত্র বসিয়ে দুই হাজার ফুট গভীরে গিয়ে পানি তুলছে। যার প্রভাব পড়েছে এলাকাজুড়ে। সাধারণ মানুষ পানি পাচ্ছে না। ব্যবহারে যেমন সমস্যায় পড়ছেন, তেমনি পানির কারণে কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় ওয়াসার পানি সরবরাহ করাটা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে পানির স্তর অনেক নিচে। যেভাবে পানির স্তর নামছে, কয়েকবছর পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাতে সাধারণ মানুষ পানি সংকটে ভুগবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও ঘটবে।’

সীতাকুণ্ডের কৃষি খাত এখন অনেকেটাই বিপর্যস্ত । একসময়ে অঞ্চলটিতে বিপুল পরিমাণের সবজি আবাদ করা হলেও বর্তমানে তিন কারণে সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। তীব্র পানি সংকট, উপকূলীয় এলাকায় লবণ পানি ও হিমাগারের অভাবের কারণে চাষাবাদে প্রতিবন্ধকতায় পড়েছেন কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে মাটি খুবই উর্বর। এখানে প্রচুর সবজি উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। বিদেশেও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ থাকলেও পানি সংকটসহ কয়েকটি কারণে তা হাতছাড়া হচ্ছে।’

কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, সীতাকুণ্ডে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদী জমি আছে। এসব জমিতে মৌসুম ভেদে সারাবছরই নানারকম সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। যাতে প্রায় ৩৭ হাজার কৃষক চাষাবাদ করছেন। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় দিনদিন কৃষি জমি কমতে শুরু করেছে। আবার এসবের কারণে চাষাবাদও বন্ধ হচ্ছে দিনদিন। অথচ উল্লেখিত সমস্যা সমাধান করা গেলে কৃষিতে যেমন বিপ্লব ঘটবে তেমনি রাজস্ব আয়েরও সুযোগ থাকবে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;