নানা সময় সফরে বের হতে হয় মানুষকে, সফরের আদব ও সুন্নতসমূহ

নানা সময় সফরে বের হতে হয় মানুষকে,  সফরের আদব ও সুন্নতসমূহ

মাহমুদ হাসান ।।

মানুষকে নানা সময় সফরে বের হতে হয়। পারিবারিক প্রয়োজনে, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে। সফর শুরু ও চলমান অবস্থায় কিছু আমলের প্রতি লক্ষ রাখলে আল্লাহ তায়ালা সফরের পুরোটা সময় বরকতম ও নিরাপদ করবেন ইনশাল্লাহ।

স্বজনদের থেকে বিদায় নেওয়া : কোথাও সফরে যাওয়ার আগে আত্মীয়-স্বজনদের থেকে বলে রওয়ানা হওয়া। তাদের সঙ্গে দেখা করার সময় দোয়া পড়া। যিনি সফর করবেন, তিনি পড়বেন ‘আসতাউদিউ কাল্লাহা আল্লাজি লা তাদিউ ওয়াদা ইউহু।’ (ইবনে মাজাহ : ২৮২৫)। আর ঘরের লোকজন পড়বেন ‘আসতাউদি উল্লাহা দী-নাকা ওয়া আমানাতাকা ওয়া খাওয়াতিমা আমালিকা।’ (তিরমিজি : ৩৪৪৪)

দোয়া পড়ে বের হওয়ার : হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি ওয়া লা হাওলা ওলা-লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, অর্থাৎ ‘আল্লাহর নামে (বের হচ্ছি), তার ওপর ভরসা করছি। আল্লাহ ব্যতীত কোনো ক্ষমতা নেই, কোনো শক্তি নেই, তাকে বলা হয়, এটা তোমার জন্য যথেষ্ট হয়েছে, তোমাকে বাঁচানো হয়েছে, তোমাকে সুপথ দেখানো হয়েছে। তখন শয়তান তার কাছ থেকে দূরে চলে যায়। এক শয়তান অন্য শয়তানকে বলে, তুমি ওই ব্যক্তির সঙ্গে কী করতে পার? যাকে সুপথ দেখানো হয়েছে এবং সব রকমের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা হয়েছে।’ (আবু দাউদ : ৫০৯৫; তিরমিজি : ৩৪২৬)

একাকী সফর থেকে বেঁচে থাকা : সফরকালীন সময়ে একাকী না গিয়ে তিনজন বা তার বেশি সফরসঙ্গী থাকা উত্তম। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘একাকী সফরকারী হচ্ছে একটি শয়তান, আর একত্রে দুজন সফরকারী দুটি শয়তান। তবে একত্রে তিনজন সফরকারীই হচ্ছে প্রকৃত কাফেলা।’ (আবু দাউদ : ২৬০৭; তিরমিজি : ১৬৭৪)। হজরত ইবনে ওমর (রা.) নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘যদি লোকেরা একা সফরে কী ক্ষতি আছে তা জানত, যা আমি জানি, তবে কোনো আরোহী রাতে একাকী সফর করত না।’ (বুখারি : ২৯৯৮)

সফরসঙ্গীদের সহযোগিতা করা : হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা কোনো সফরে নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি সওয়ারিতে আরোহণ করে আগমন করল। অতঃপর সে তার দৃষ্টি ডানে-বামে ফেরানো শুরু করল। তা দেখে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার নিকট অতিরিক্ত বাহন আছে, যার নেই তার জন্য যেন নিয়ে আসে, আর যার নিকট নিজের পাথেয়ের অতিরিক্ত রয়েছে, যার নেই তার জন্য যেন নিয়ে আসে।’ (মুসলিম : ১৭২৮)

গন্তব্যে পৌঁছার পর দোয়া : হজরত খাওলাহ বিনতে হাকিম (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কোনো জায়গায় অবতরণ করে এই দোয়া পাঠ করবে তাকে কোনো জিনিস অনিষ্ট করতে পারবে না, তার ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত। তা হচ্ছে ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক’, অর্থাৎ, ‘আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্টি সকল কিছুর অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।’ (মুসলিম : ২৭০৮; তিরমিজি : ৩৪৩৭)