পাহাড়ের মানুষের গ্রামীণ ঐতিহ্য " থামি "

কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই ।।

পাহাড়ের মানুষের গ্রামীণ ঐতিহ্য
পাহাড়ের মানুষের গ্রামীণ ঐতিহ্য " থামি "

পার্বত্য জনপদের একটি স্বাভাবিক চিত্র হচ্ছে , ঘরের আঙ্গিনায় বসে পরিধেয় বস্ত্র তৈরি করা । পাহাড়ের প্রায় প্রতিটি ঘরের পাশে বসে নারীরা সুতা দিয়ে নিজ হাতে পরিধেয় বস্ত্র তৈরি করেন। তৈরি করা বস্ত্র নিজে পরেন এবং বাড়ির অন্যান্যদেরও পরতে দেন। পরিধেয় এই বস্ত্রকে স্থানীয়ভাবে ‘থামী’ বলা হয়। এক নাগাড়ে কাজ করলে একটি থামী তৈরী করতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। তবে পারিবারিক সব কাজ করার পর সময় পেলে যারা ধীরে ধীরে থামী তৈরী করেন তাদের আরো বেশি সময় লেগে যায় থামী বানাতে। পার্বত্য জনপদের এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবেনা যেখানে থামী বানানো হয়না। শুধু থামী নয় শীতের চাদরও বাড়ির আঙ্গিনায় বসে নারীরা তৈরি করেন। পাহাড়ি নারীরাই এসব কাজ করে থাকেন। বাজার থেকে রঙ বেরঙের সুতা কিনে আনা, সুতায় প্রয়োজনীয় রং মেশানো, সুতায় চরকা কাটা, চাদর ও থামী বানানো সব কাজই পাহাড়ি নারীরা করে থাকেন।

কাপ্তাই উপজেলা, রাজস্থলী, কাউখালী, বিলাইছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, বাঘাইছড়ি, লংগদুসহ পার্বত্য জনপদের প্রায় সব উপজেলায় বাড়ির আঙ্গিনায় ছোট্ট একটি জায়গায় বসে নারীরা এভাবে পরিধেয় বস্ত্র তৈরী করেন বলে জানা যায়। রাজস্থলী উপজেলার উচসিং মারমা জানান, বাড়ির আঙ্গিনায় বসে চাদর তৈরি পাহাড়ি নারীদের ঐতিহ্যবাহী কাজের একটি অংশ। তবে বর্তমানে এভাবে চাদর ও থামী তৈরি আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।

থামী ও চাদর বানাতে সময় ও পরিশ্রম বেশী লাগার কারণে অনেকে এই কাজ থেকে সরে যাচ্ছেন। তবে বিলাইছড়ি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান বীরোত্তম তনচংগ্যা বলেন, শহরের বাসা বাড়িতে থামী ও চাদর তৈরির পরিমান কমলেও গ্রামীন জনপদে এখনো প্রতিনিয়ত থামী ও চাদর তৈরি করতে নারীদের দেখা যায়। পাহাড়ের মানুষ যতই আধুনিক হোকনা কেন গ্রামীণ ঐতিহ্য কখনো হারিয়ে যাবেনা বলে তিনি দৃঢ়তার সাথে জানান।