'মাহে রমজান' মুমিনের প্রশিক্ষণের মাস

'মাহে রমজান' মুমিনের প্রশিক্ষণের মাস
'মাহে রমজান' মুমিনের প্রশিক্ষণের মাস

মাওলানা মাহফুজুল হক।।

'মাহে রমজান' - রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাস । এ মাসের তাৎপর্য ও শিক্ষা অপরিসীম। মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা ‘তাকওয়া’ অর্জন। এ মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে বান্দা তাকওয়া অর্জন করতে পারে। তাকওয়া মানে আল্লাহর ভয়। মানুষ যখন আল্লাহকে ভয় করবে, তখন সে খারাপ পথে ধাবিত হতে চাইবে না। এ জন্য আল্লাহতায়ালা ‘তাকওয়া’ অর্জনকে রোজার উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করে করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)

তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি রমজান সবরেরও মাস। সহনশীলতার মাস। ক্ষুধা যন্ত্রণা সহ্য করার মাস। দরিদ্র মানুষেরা অনাহারে থেকে যে কষ্ট পায়, অনাহারীর সে ক্ষুধার জ্বালা রোজার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। এতে করে ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের প্রতি অনুকম্পা ও সহমর্মিতার অনুভ‚তি জাগ্রত হয়। সমবেদনায় সিক্ত হয়ে তাদের প্রতি অনেকের সাহায্যের হাত প্রসারিত হয়। তাই এ রমজান নানামুখী প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাস।

এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত রাখা হয়। এ মাসে শয়তানকে বেঁধে রাখা হয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমজান মাস এলে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।’ (বুখারি : হাদিস ১৮০০)

এ মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘রমজান মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত স্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদের্শনাবলি ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)।

এই কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণে এ মাসের পবিত্রতা এবং এ মাসের বড়ত্ব-মহত্বেও প্রকাশ ঘটে। এ জন্য এ মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করাও মাহে রমজানের অন্যতম শিক্ষা। সেই সঙ্গে এ মাসের বড়ত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে প্রকাশ্যে খাবার গ্রহণ বর্জন করতে হবে এবং মিথ্যা কথন ও যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মিথ্যা, গর্হিত কথাবার্তা এবং পাপ কাজ পরিত্যাগ করতে পারে না, আল্লাহতায়ালার কাছে তার খাবার এবং পানীয় ত্যাগ করায় কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি : হাদিস ১২৭)

লেখক : প্রিন্সিপাল, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মোহাম্মদপুর, ঢাকা