শেখ হাসিনার সেকেন্ড হোম তদন্তের নির্দেশ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

শেখ হাসিনার সেকেন্ড হোম তদন্তের নির্দেশ
শেখ হাসিনার সেকেন্ড হোম তদন্তের নির্দেশ

শুধুমাত্র ক্যাসিনো এবং টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে অভিযান নয়, সেকেন্ড হোমের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করছে সরকার। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানাচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুদ্ধি অভিযানের বিষয়ে যে নির্দেশনা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দিয়েছেন সেই নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, কাদের সেকেন্ড হোম রয়েছে, সেসব ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধানেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে যে, গত ১০ বছরে কোন কোন আওয়ামী লীগ নেতা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছে, কারা সিঙ্গাপুরে এবং অন্যান্য দেশে অবৈধ প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার করেছে তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে গোয়ন্দা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন।

আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন করেছেন, ক্যাসিনো বাণিজ্য করেছেন, তাদের অধিকাংশ টাকাই বিদেশে পাচার হয়েছে বলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা মনে করছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন যে, যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রথমেই শুরু হচ্ছে, যারা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছে তাদের তালিকা সংগ্রহ।

আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে যে, প্রাথমিক তদন্তে তারা পেয়েছে অন্তত তিন শতাধিক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছেন। তবে এরা সবাই যে অবৈধ প্রক্রিয়ায় বা অনিয়ম করে সেকেন্ড হোম করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এমনটি মনে করছে না।

প্রাথমিক তদন্তে তাদের কাছে মনে হয়েছে যে, ১১০ থেকে ১২৫ জন অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করেছেন। ১০ বছর আগে যাদের কিছুই ছিল না তারা ফুলেফেঁপে উঠেছেন। এদের প্রায় সবাই অবৈধ প্রক্রিয়ায় টাকা উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন। এদের বিরুদ্ধে অভিযান খুব শিগগিরই শুরু হবে বলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে।

সম্রাটের ব্যাপারে তিনবার ক্ষোভ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের শুদ্ধি অভিযানের আগে গত এক বছরে সম্রাটসহ যুবলীগের বিভিন্ন নেতার অপকর্মের ব্যাপারে অন্তত তিন দফা সতর্ক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত যুবলীগ নেতা, বিশেষ করে সম্রাটের আইনশৃংখলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে প্রকাশ্যে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতা শুরু হয়েছিল ঠিক গত বছর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরের আগে। এ বছরের মতো গত বছরও সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য ঢাকা থেকে নিউইয়র্কে যান।

যেদিন তিনি নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছিলেন, সেদিনই তিনি গণভবনে যুবলীগের চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘সম্রাট আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছে। আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামে আমি, রেহানা অনুদান দেই। আর সেখানে এরা চাঁদা চেয়েছে। এরা কীভাবে দল করে? এদের বহিষ্কার করো।’

যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এটি জানার পর তার নিজস্ব ট্রাইবুনালে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেন। সে সময় আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয় যে, সম্রাটের বিরুদ্ধে এ ধরণের কোনও অভিযোগ তাদের নাই। সম্রাট নামের কেউ তাদের কাছে কোনও চাঁদা দাবি করেনি। ফলে সে সময় বহিষ্কার হওয়া থেকে বেঁচে যান সম্রাট।

সম্রাটের ব্যাপারে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন সাংবাদিক ইউনিয়নের ইফতার পার্টিতে। সেখানে একজন সাংবাদিক নেতা বলেছিলেন যে, ঢাকা দক্ষিণের যূবলীগ নেতা সম্রাট অত্যন্ত ভালো কাজ করছে। একথা শুনে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘সম্রাটকে ভালো হয়ে যেতে বলো। ও যে সমস্ত কাজ করছে সব কিন্তু আমার নলেজে আছে। ও কিন্তু ধরা পড়ে যাবে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় যে, ওই সাংবাদিক নেতা সম্রাটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল।

দু’মাস আগে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যানকে ডেকে নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সম্রাটের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় প্রধানমন্ত্রী সম্রাটের বিভিন্ন অপকর্মের ফিরিস্তি দেন। সম্রাটের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী অ্যাকশনে যাবেন বলেও জানিয়ে দেন।

উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনদফা সম্রাটের ব্যাপারে সতর্ক বার্তা দেওয়ার পরও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে কেউই তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি আজ যখন সম্রাটের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তখনও যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সভাপতির পদ থেকে তাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না।