শোভন-রাব্বানীকে নিয়ে এবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন ঢাবি অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

শোভন-রাব্বানীকে নিয়ে এবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন ঢাবি অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান

চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগে শীর্ষ নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানীকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর পরই ভ্রাতৃপ্রতীম এই সংগঠনের শীর্ষ দুই পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন এই দুই নেতা। 

এছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতির  নির্দেশে ও সংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রথম সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে। একইসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাশেদা রওনক খানও শোভন-রাব্বানিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দনও জানান তিনি।

তার ফেসবুক স্ট্যাট্যাসে তিনি লিখেন, ‘ছাত্রলীগের শোভন-রব্বানি বাদ’! বিষয়টিকে খুব সাদা-কালো ফ্রেমে দেখার সুযোগ নেই, বরং এতটাই রঙিন যে এই রঙের খেলায় অনেকেই বা অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে, সেগুলোও কি এখন বের হয়ে আসবে কি না কে জানে!

ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা বলি, রোকেয়া হলের ৭ মার্চ ভবনে যেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গেলেন, সেদিন আমি সেখানে ছিলাম। প্রক্টরিয়াল কমিটির দায়িত্ব ছিল আমাদের, স্টেজ ও অনুষ্ঠানরুম। প্রধানমন্ত্রী আসার সাথে সাথে আমরা বসতে গিয়ে দেখলাম, তেমন কোনো সিট খালি নেই, একদম শেষ দিকে একটা সিট পেয়েছি কিন্তু সেটা তৃতীয় সিট, দুটো ছেলেকে ডিঙিয়ে আমার ওই সিটে বসতে হবে। কিন্তু আমি তা না করে ওদের দুজনকে বললাম, তোমরা এক সিট করে ওই দিকে যাও, আমি এই সাইডে বসি। ওরা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, যেন আমি ভুল কিছু ভুল কাউকে বলে ফেলেছি! কিন্তু আমি খুব স্পষ্ট করে, তাদের সেই দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, এবার চোখ দিয়ে ইঙ্গিত করে হাসি মুখে বললাম, এক সিট আগাও! আমি এই সিটে বসি...(কারণটা ওদের না বললেও জানি, আমার যে কোনো সময় উঠতে হতে পারে, তাই আইলের পাশে বসলে উঠতে সুবিধা হবে, তাই)। এবার আর ওদের উপায় নেই, এক সিট করে সরে গেল, আমি বসলাম, হাসি দিয়ে থ্যাংকস জানালাম। তারপর পুরো অনুষ্ঠানে তাদের মনোযোগ যতটা না অনুষ্ঠানের, তারচেয়ে বেশি আমি কে, আমার এই আচরণে তারা যেন কিছুটা অবাক হয়েছেন। ওদের এতে দোষ দেখি না আমি, আমিতো দেখি প্রতিদিন তাদের প্রতি অন্যদের কি তোষামোদি ব্যবহার! সেই ব্যবহার আমার থেকে তো পাই-ই নাই, বরং এক সিট ছেড়ে বসতে বলেছি, সেটা হজম করা কষ্টের হবে, এটাই স্বাভাবিক! ভাবছে, আমি বোধহয় তাদের চিনি নাই! কিন্তু কথা হলো, ছেলে দুটো কে আমি জানি, আমি খুব ভালো করেই জানি, ওরা কারা? কিন্তু আমি ওদের তা বুঝতে দেইনি। হতে পারে তারা ছাত্রলীগের অমুক-তমুক, কিন্তু আমার কাছে ওদের পরিচয় কেবল আমার ছাত্র। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ওরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। এর বেশি ওদের কোনো পরিচয় আমার কাছে বড় নয়।

এই অভিজ্ঞতা এখানে বলার একটাই কারণ, ছাত্র নেতাদের এতটা ক্ষমতাধর ভেবে তোষামোদি, ভাগ বাটোয়ারা, কমিশন দেয়া- এসব আমাদের বাদ দিতে হবে। ক্ষমতার লোভে বড়রা (রূপক অর্থে নয়, আক্ষরিক অর্থেই) যদি ছোটদের তোষামোদি করে, তাহলে ছোটরা আশকারা পেয়ে একসময় লাগামহীন ঘোড়া হবে, শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করবে, উপাচার্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে, এটাই স্বাভাবিক! ষাটের দশক কিংবা সত্তরের দশকের ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষকদের সাথে কী আচরণ করত, সেটা আমার মা একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা ছিলেন বলে প্রত্যক্ষসূত্রেই জানি, তাই আজকের দিনের কিছু কিছু ছাত্রনেতাদের আস্ফালন কেবল ছাত্রদের একার দোষ দিলে হবে না, অন্যান্য রংগুলোও আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে!

বলা হচ্ছে, শোভন-রাব্বানিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্বাচন করেছিলেন, মেধাবীও ছিল, ভদ্র-মার্জিত-পারিবারিক পরিচিতও অনেক ভালো ছিল। তাহলে হটাৎ কী এমন হলো যে একবছরে এইরকম ছেলেগুলো বদলে গেল? ছাত্রলীগের নেতা হলেই তাদের কী এমন ক্ষমতার বা দুর্নীতির হাতছানি আসে যে, ছেলেগুলো পালটে গেল? অনেক বিচার বিবেচনায় আনা ছেলেগুলো কেন এতটাই ভুল পথে হাঁটল যে, নেত্রী তাঁর পছন্দের নেতাদেরই বাদ দিলেন?

শফিউল আলম প্রধানের পর ছাত্রলীগের ইতিহাসে এত বড় ঘটনা ঘটেছে কী আর? এই দুজন অনেক বছর ধরে নেতৃত্বে আছে, তাও না। তাহলে কেন এত দ্রুত ছেলেগুলো পালটে গেল? তাদের এভাবে পথ হাঁটতে কারা ইন্ধন জুগিয়েছে? কারা প্রশ্রয় দিয়েছে? সেই তারাই আবার রং মেখে এবার নতুনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়-ইন্ধন দেবার জন্য তৈরি হচ্ছে কি না? তাই নতুনদের পথ হাঁটতে হবে খুব সাবধানে! নেতৃত্ব মানে অন্যের হাতছানিতে লোভী হয়ে ওঠা না, বরং বিনয়ী ও সেবক হয়ে ওঠা! তাই দুটো ভাবনা থাকল-

১| কেউ কেউ দাবি করছে, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কমিটিকে কেউ কেউ ভুল পথে হাঁটিয়ে ভুল প্রমাণিত করার রাজনীতি করেছে। রাজনীতি মানেই তো কাউকে ট্র্যাপে ফেলে অন্যের স্বার্থ হাসিল হওয়া...হতে পারে এমনটি! কিন্তু এতো বড় দায়িত্বের জায়গা থেকে স্বার্থান্বেষী মহলের ট্র্যাপে পড়বে কেন? কেউ তো এখানে শিশু নয়, তাহলে এতো ভুল পথে হেঁটে যাওয়া কেন? নতুনরা নিশ্চয়ই এসব মাথায় রেখে পথ চলবে।

২| ছাত্রলীগের এই নেতাদের দুর্নীতি/ নৈতিক স্খলনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পর্দা-কেটলি-বালিশ কাহিনীর রাঘব-বোয়ালদের দুর্নীতির কথা ফেসবুকে কিংবা সংবাদপত্রে আসলেও, তাদের বিরুদ্ধে কি গোয়েন্দা সংস্থা কোনো রিপোর্ট দিচ্ছেন উনাকে? নিশ্চয়ই দিচ্ছেন, এবং খুব অচিরেই আমরা এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও কঠিন শাস্তি দেখতে পাব, সেই প্রত্যাশায় রইলাম!

শেষ কথা একটাই, ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে একটা গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দেবার জন্য!! যে ছেলেদুটো বাদ পড়ল, তারা এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে (হয়তো শাস্তিও পেতে হতে পারে, সেই শাস্তি মাথা পেতে নিয়ে) নিজেকে সামলে নিইয়ে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে, সেই প্রত্যাশা রইলো। আর যারা নতুন করে যুক্ত হলো, তাদের ওপর পাহাড় সমান দায়িত্ব ছাত্রলীগের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের! অভিনন্দন রইল!