শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ, বিজয় অর্জনে বুদ্ধিজীবীদের অবদান 

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ, বিজয় অর্জনে বুদ্ধিজীবীদের অবদান 
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ, বিজয় অর্জনে বুদ্ধিজীবীদের অবদান 

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা পাকিস্তানি হানাদারদের জিঘাংসার প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াইয়ে বিজয় আসে এ ডিসেম্বর মাসে। আর এ ডিসেম্বর মাসেই বিজয়ের প্রাক-মুহূর্তে বাঙালি জাতির জাগরণে অগ্রণী ভূমিকার কারণে বুদ্ধিজীবীদের নিধন করা হয় পরিকল্পিতভাবে। ২৫ মার্চ রাতেই খুনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহিদ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা অধ্যাপকসহ শতাধিক বুদ্ধিজীবী। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে এ হত্যাকাণ্ড অব্যাহত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ের মাত্র এক দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর আলবদর বাহিনীর সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে বিপুলসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। 

মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বুদ্ধিজীবী দেশ ও জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তার মধ্যে আছেন অধ্যাপক জি সি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজ উদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজাম উদ্দীন আহমেদ, গিয়াস উদ্দীন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী ও সাহিত্যিক-সাংবাদিক সেলিনা পারভীনসহ নাম জানা-অজানা অনেকে। বুদ্ধিজীবী হত্যায় মূলত ভূমিকা রেখেছে পাকিস্তানি হানাদারদের এ দেশীয় দোসররা। আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর মনুষ্যবেশি পশুরা বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানা না দিলে, তাদের চিনিয়ে না দিলে তারা যে প্রাণ হারাতেন না তা সহজেই অনুমেয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তারা পাকিস্তানিদের মুখোশ খুলে দিতে শুরু করেন এবং পাকিস্তানিদের সীমাহীন শোষণ ও বৈষম্যের নানা দিক তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তোলেন। তাই তারা পাকিস্তানি শাসক ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন। ৯ মাস হত্যাযজ্ঞ চালিয়েও খুনিরা যখন বুঝে যায়- পরাজয় আসন্ন, তখন তারা বাঙালি জাতিকে মেধা ও মননে পঙ্গু করে দেওয়ার শেষ অপচেষ্টায় নামে। তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীদের ওপর। আর এ কাজে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চেয়েও বেশি নৃশংসতার পরিচয় দেয় জামায়াতে ইসলামীর অনুসারীরা এবং তাদের নিয়ে গঠিত রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। তবে তাদের শোচনীয় পরাজয়বরণ করতে হয়েছে। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশে যে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছিল তার প্রমাণ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো। এগুলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরের প্রজন্মের যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখতে উদ্যোগী হবেন, তখন তাদের জন্য এসব গণকবর ও বধ্যভূমি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, এতে সন্দেহ নেই। 

বড়ই পরিতাপের বিষয়, এই কর্তব্য আমরা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারিনি। এখনও দেশের সব গণকবর ও বধ্যভূমি শনাক্ত করা যায়নি। যেগুলো শনাক্ত করা হয়েছে সেসব গণকবরের বেশিরভাগই সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। যেগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে তার বেশিরভাগই প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পরিচর্যার ব্যবস্থা না থাকায় বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। দেশের গণকবর ও বধ্যভূমির সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। এ ছাড়া অনেক জায়গায় গণকবর ও বধ্যভূমিতে কোনো স্মৃতিসৌধ নির্মাণ বা সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিয়ে শুধু জায়গাটি শনাক্ত করে এ বিষয়ে নির্দেশিকা দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে অনেক জায়গা বেদখল হয়েছে বা দখলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে বধ্যভূমিগুলো সংস্কারের। বিজয়ের মাসে এটাই আমার প্রত্যাশা।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;