সীতাকুণ্ডে এক মাসে চারদফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি : জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ নেই জলাবদ্ধতা নিরসনে

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ।।

সীতাকুণ্ডে এক মাসে চারদফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি :  জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ নেই জলাবদ্ধতা নিরসনে
সীতাকুণ্ডে এক মাসে চারদফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি :  জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগ নেই জলাবদ্ধতা নিরসনে

খাল সংস্কার ও পুনঃ খনন না করা, খালের মুখে স্লুইসগেটগুলো অকেজো হয়ে থাকা, জলাশয় ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর-দোকানপাট নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রেলসড়ক ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে পানি চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা(ব্রিজ-কালভার্ট) না থাকায় সীতাকুণ্ডে জলাবদ্ধতা সমস্যা স্থায়ীরূপ নিয়েছে। সীতাকুণ্ডে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে এবার সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
সীতাকুণ্ড পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে গত দুই মাসে চার দফা বন্যায় বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে সম্পদ নষ্ট হয়েছে। ভেসে গেছে বহু পুকুর ও জলাশয়ের মাছ। মৎস্যসম্পদ ও কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীণসড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমন বীজতলা ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের জলাবদ্ধতা নতুন কিছু নয়, দীর্ঘদিনের পুরোনো। তবে গত পাঁচ বছর ধরে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানেরা তাদের নিজ নিজ এলাকার জলাবদ্ধতার রূপ দেখেছেন। কিন্তু কার্যকরী কোন ভূমিকা পালন করছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জলাবদ্ধতা সমস্যা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অতীতের জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটে জয়লাভ করেও তারা তাদের কথা রাখেননি।
সীতাকুণ্ড অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা যদি এলাকার সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হন তাহলে যেকোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব। প্রশাসন চাইলে এলজিইডি’র মাধ্যমেও খাল-ছরা সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানেরাও নিজনিজ এলাকার খাল-ছরাগুলো শুষ্ক মৌসুমে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সংস্কারের জন্যে ছাত্র ও যুবসমাজকে কাজে লাগাতে পারেন। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা যদি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেন এলাকাবাসী নিজেদের স্বার্থে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল-ছরা সংস্কারকাজে আত্মনিয়োগ করবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা টিআর, কাবিটা, এলজিএসপিসহ বিভিন্ন খাত থেকে বছরে যে এক/দেড়কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ পান তা থেকে ২৫% টাকাও যদি খাল-ছরার সংস্কারে ব্যয় করা হতো তাহলে এলাকা জলমগ্ন হয়ে জনগণকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের ছোটবড় সব খাল ও ছরা দীর্ঘদিনধরে সংস্কার না করায় এগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। বদরখালী খাল, বাঁকখালী খাল, ‘ছোটকুমিরা’ খাল, (সৈয়দপুর ও মুরাদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত)গুলিয়াখালি খাল, বারিয়াখালি খাল, রাজাপুর খাল, গুপ্তাখালি খাল, বাউরিয়া খাল, ছোটকুমিরা খাল, বড়কুমিরা খাল, ফুলছড়ি খাল দিয়ে পাহাড়িঢল ও বৃষ্টির পানি সন্‌দ্বীপ চ্যানেলে গিয়ে পড়ে। এসব খালের মুখের স্লুইসগেটগুলো দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে।
এদিকে বশরতনগর এলাকার অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত রাবার ড্যামটি সীতাকুণ্ড পৌরসভা, মুরাদপুর ও সৈয়দপুর ইউনিয়নের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহিৃত করেছেন একদশক আগে। অথচ জনপ্রতিনিধিরা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো রাবার ড্যামটি অপসারণের কোন উদ্যোগ নেয়নি।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম নিজামী জানান, রাবার ড্যামটি অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যার ফলে এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ড্যামটি বিষয়ে উপজেলা সমন্বয় সভায় জানানো হবে। রাবার ড্যামের প্রসঙ্গে পৌর মেয়র আলহাজ্ব বদিউল আলম দৈনিক আজাদীকে জানান, গত এক মাসে চার দফা ভারী বর্ষনে বন্যা হয়েছে। পৌর সদরের মধ্যে ইদিলপুর, আমিরাবাদ ও শেখপাড়া ছড়া তিনটির পানি গিয়ে পড়ে সৈয়দপুর খালে। এই খালের মুরাদপুর ইউনিয়নের বশরত নগর আছে রাবার ড্যামটি। ওই খাল দিয়েই তিন ছড়ার পানি বঙ্গোপসাগরে যায়। তাই রাবার ড্যামটি সংস্কার প্রয়োজন। এছাড়া অবৈধ দখলদার এবং পর্যাপ্ত খাল খনন না করায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তৎকালীন সময়ে অবৈধ দখলদারদের দখলের সুযোগ দেয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।