সীতাকুণ্ডে পুদিনা চাষে কৃষকের মুখে হাসি

সীতাকুণ্ডে পুদিনা চাষে কৃষকের মুখে হাসি
সীতাকুণ্ডে পুদিনা চাষে কৃষকের মুখে হাসি

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

সীতাকুণ্ডের প্রায় দুই শতাধিক পুদিনা চাষির চলছে এখন সুদিন । প্রতিদিনই চাষির জমি থেকে বিপুল পুদিনা পাতা চলে যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। এতে একদিকে উপজেলার কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি লাভবান হচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ । কেননা পুদিনা ক্রয়- বিক্রয়ের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন এলাকার একাধিক নর-নারী।

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, পুদিনা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। সুগন্ধি জনপ্রিয় পুদিনা পাতা ওষুধি হিসেবে বহুল প্রাচীনকাল থেকেই পরিচিত। তরি-তরকারিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীতে সুগন্ধ ছড়াতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা হয়। রমজান মাসে হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে ঘরে ঘরে এর চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পুদিনা চাষে কৃষকরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছে ।

কথা হয় ব্যবসায়ী আলাউদ্দীনের সাথে । সীতাকুণ্ডে সলিমপুরে তার বাড়ি। তিনি সখ করে দু’ছর আগে তার বাগানে কিছু পুদিনা পাতা লাগান। আর এতেই তার সাফল্য আসে। তা দেখে তার অনেক প্রতিবেশী পুদিনা পাতার বাগান করতে শুরু করেন। রোজার মধ্যে তাদের গাছ বড় হয়ে যায়। রোজায় মুড়ি মাখাতে, সালাদ বানাতে, শরবত খেতে নিজের বাগানের পুদিনা পাতাই ব্যবহার করেন তিনি। তাছাড়া তার পুদিনা চাষ তিনি সখের মধ্যে না রেখে ব্যবসায়িক ভাবে শুরু করেন এবং তাতে ব্যাপকভাবে সাফল্য আসে তার হাতে ।

তিনি জানান, আমি শুধু বিক্রি করিনা নিজেও খাই। রোজা ছাড়াও পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিষেধক- এ কথা শুনে সারাবছর মাঝে মাঝেই  পুদিনা পাতার জুস খেয়ে থাকি। ঠান্ডা লাগলে বেশ কাজে দেয় পুদিনা পাতার রস। এছাড়া ভাজা পোড়া খেলে এসিডিটি থেকে বাঁচতে, রুপচর্চায়, পোড়া বা ঘায়ে পুদিনা পাতা বেশ ভালো কাজ করে বলে জানান তিনি ।

উপজেলা কৃষি অফিস জানান, সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্থানে ২০ হেক্টর জমিতে ২১০ কৃষক পুদিনা পাতার চাষ করছেন। আর রমজানকে সামনে রেখে তারা পুদিনা বপন করেন। যাতে রমজান মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুদিনা সরবরাহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। আর প্রতিবছর কৃষকদের এই পুদিনা চাষে সরাসরি সম্পৃক্ত হন উপজেলা কৃষি বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারাও। চাষিরা তাদের পরামর্শ নিয়ে উৎকৃষ্ট মানের পুদিনা উৎপাদন করে লাভবান হবার মধ্য দিয়ে শেষ হাসি হাসেন তাঁরা।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষিবিভাগের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সমগ্র উপজেলায় এ মৌসুমে কমবেশি পুদিনার চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি পুদিনার চাষ হয় দক্ষিণ সীতাকুণ্ডের সলিমপুর, ভাটিয়ারী ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নে।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ডের সলিমপুর গ্রামের কৃষক পুত্র মো. নাজিমউদ্দীন বলেন, রমজানকে সামনে রেখে চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে ১৪০ শতক জমিকে পুদিনা পাতার চাষ করেছি। এ জমি চাষে খরচ পড়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। বর্তমানে পুদিনার দাম অনুসারে বিক্রি হবে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু পুদিনা বিক্রি করেছি। এর আগে গত বছর মাত্র ১০০ শতক জমিতে পুদিনা চাষ করেও লাভবান হয়েছিলাম। তাই এবার চাষ আরো বাড়িয়েছি। এ এলাকায় প্রায় ৫০ কৃষক কম বেশি পুদিনার চাষ করেছেন। সবার জমিতেই ভালো ফলন হয়েছে।

সীতাকুণ্ড অঞ্চলের এই এলাকার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগীতা ও পরামর্শে পাহাড়ের পাদদেশে কৃষক পরিবারগুলো ঔষধি উদ্ভিদ পুদিনা পাতার চাষ করেছেন। প্রতিবছর রমজানের এমন সময়ে এখানকার কৃষক পাইকারিতে পুদিনা বিক্রি করে অর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন। এবারও অধিক লাভের আশায় তারা আগের চেয়েও বেশি পরিমাণ পাহাড়ের পাদদেশে পুদিনার চাষ করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহর সাথে এসব বিষয়ে কথা হয় । তিনি বলেন, গতবছর ১৫ হেক্টর জমিতে ১০৫ কৃষক এই ঔষধি উদ্ভিদ পুদিনা পাতার চাষ করে ছিলেন। চলতি বছরে তা বেড়ে উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে ২১০ কৃষক পুদিনার চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টর জমিতে ফলন হবে ১২০ মে. টন যা বিক্রি করলে অন্তত কোটি টাকা আয় হবে।

তিনি এও বলেন, সারাবছর পুদিনার চাষ হলেও প্রতিটি রমজানে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। এ পুদিনা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। এ পুদিনা বহু রোগের ঔষুধ হিসেবেও কাজ করে বলে জানান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড;