সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথে হুড়োহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কিতে ৫ পুণ্যার্থী আহত, অসুস্থ দুই হাজার

সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথে হুড়োহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কিতে ৫ পুণ্যার্থী আহত, অসুস্থ দুই হাজার
সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথে হুড়োহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কিতে ৫ পুণ্যার্থী আহত, অসুস্থ দুই হাজার

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

গুজবকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে হুড়োহুড়িতে আহত হয়েছেন পাঁচজন। অতিরিক্ত মানুষ, আতঙ্ক আর চাপাচাপিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ২ হাজারের বেশি মানুষ। "পাহাড় থেকে নামার সিঁড়ি ভেঙে দুজন মারা গেছেন" শনিবার রাতে এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে পুণ্যার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পাহাড়ে ওঠা–নামার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভোরের আলো ফোটার পর বিকল্প পথে নামতে অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় হুড়োহুড়ি আর ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে আহত হন পাঁচজন। এ ছাড়া মানুষের চাপাচাপিতে ২৪ ঘণ্টায় অসুস্থ হয়েছেন অন্তত ২ হাজারেরও বেশী তীর্থযাত্রী।

জানা যায়, তীর্থযাত্রীদের মূল লক্ষ্য থাকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চুড়ায় থাকা চন্দ্রনাথধাম পরিক্রমা করা। প্রতিবছর শিবচতুর্দশীতে এ মন্দির পরিক্রমায় আঁকাবাঁকা পাহাড়িপথ পাড়ি দিয়ে চন্দ্রনাথ ধামে উঠেন পূর্ণ্যার্থীরা। মেলায় চতুর্দশী তিথিতে ব্যাসকুণ্ডে স্নান-তর্পন, গয়াকুণ্ডে পিণ্ডদান করে তীর্থ যাত্রীরা। তাছাড়া সীতাকুণ্ডে থাকা প্রায় ৫০টি মঠ-মন্দির পরিক্রমা করবেন। প্রতিবছর এ মেলা তিন দিনের হলেও এবার তিথির কারণে চার দিন মেলা চলবে। গতকাল ছিল এ মেলার দ্বিতীয় দিন। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অন্তত ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর সমাগম হয়। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, ভারতসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পুণ্যার্থীরা। 

মেলা কমিটির অতিরিক্ত সম্পাদক দুলাল দে বলেন, কোথাও সিঁড়ি ভাঙার খবর তাঁদের কাছে নেই। রাত আড়াইটার দিকে জটলা অসহনীয় হয়ে পড়ায় স্বয়ম্ভুনাথ মন্দিরের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়ার পর । ফলে ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। ভোরে বিকল্প পথে তীর্থযাত্রীদের নামানোর কাজ করছেন তাঁরা। এ ছাড়া ঠেলাঠেলিতে ওঠার পথে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তীর্থযাত্রীর সমাগম অতীতের রেকর্ড ভেঙেছে। অতীতে এত মানুষ আর হয়নি। 

মেলা স্থলে কথা হয় প্রবীর কুমার দাস নামের এক পুণ্যার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটার দিকে চন্দ্রনাথ ধাম পরিক্রমা শেষে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে কিছু দূর নেমেছিলেন তিনি। এরপর তাঁরা শুনতে পান, নামার পথের ৪০০ ফুট নিচে দুটি সিঁড়ি ভেঙে খাদে পড়ে দুই তীর্থযাত্রী নিহত হয়েছেন। এরপর ওই পথে নামা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ওপরের মানুষের চাপের কারণে ওপরের দিকেও উঠতে পারছিলেন না তাঁরা। ফলে সারা রাত একটি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। ভোরে ইকোপার্কের রাস্তা (বিকল্প পথ) দিয়ে চলাচল উন্মুক্ত করার পর উল্টো পাহাড়ে উঠে বিকল্প পথ ধরে নামতে শুরু করেন তিনি। 

এ দিকে পাহাড়ে মানুষের চাপ কমাতে রাত আড়াইটার পর পাহাড়ের ৪০০ ফুট ওপরে থাকা পানিঘাটা এলাকায় ওঠার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভোররাতে মানুষের জটলায় ওপর থেকে নিচের দিকে চাপের ঢেউ লাগে। এতে পড়ে গিয়ে ৫ পুণ্যার্থী গুরুতর আহত হন। আহত ব্যক্তিরা হলেন বীনা দাস (৫০), লিপি কর্মকার (৩২) কমলা কর্মকার (৪০), সুশেন দাস (৩০) ও চম্পা হাওলাদার (৪৪)।

লিপি কর্মকারের স্বামী নান্টু কর্মকার বলেন, ভোররাতে তাঁরা চন্দ্রনাথ ধামের দিকে উঠছিলেন। হঠাৎ ওপর থেকে নিচের দিকে মানুষ চাপ দেয়। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁর স্ত্রী মাটিতে পড়ে গেলেও একটুর জন্য খাদে পড়েননি। তবু তাঁর হাতে ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে। তাঁর আত্মীয় কমলা কর্মকারের মাথা জখম হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, পাঁচ-ছয়জন গুরুতর আহত পুণ্যার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ ছাড়া মেলা এলাকায় তাঁদের অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্পে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৭০০ জন। তাঁদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মেলা এলাকায় বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, জন্মাষ্টমী পরিষদ, হিন্দু মহাজোটসহ কয়েকটি সংস্থা। তারাও ৫০০ রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, এত মানুষের চাপ আগে কখনো হয়নি। পাহাড় থেকে নামার পথে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে তাঁরা নামার পথ বন্ধ করে দেন। পরে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক হয়ে বিকল্প পথে পুণ্যার্থীদের নামিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;