সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে চসিকের নয় প্রকল্প, ১২০ একর ভূমি বরাদ্দের প্রস্তাব

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে চসিকের নয় প্রকল্প, ১২০ একর ভূমি বরাদ্দের প্রস্তাব
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে চসিকের নয় প্রকল্প, ১২০ একর ভূমি বরাদ্দের প্রস্তাব

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে হকার পুনর্বাসনে হলিডে মার্কেট প্লেসসহ ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় । চসিকের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণসহ তিনটি প্রকল্পও রয়েছে। এছাড়া বিনোদনের সুবিধা বৃদ্ধিসহ জনগুরুত্বপূর্ণ খাত গুরুত্ব পেয়েছে বাকি প্রকল্পগুলোতে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজন ১২০ একর ভূমি। ইতোমধ্যে সহজ শর্তে কাঙ্খিত ভূমি বরাদ্দে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে প্রস্তাবও করেছে সংস্থাটি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরসহ সরকারি অন্যান্য সংস্থার নানা কার্যক্রম জঙ্গল সলিমপুরে হতে যাচ্ছে। ওই হিসেবে আমরাও বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে ভূমি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছি। এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা খুব আন্তরিক। জেলা প্রশাসকেরও আন্তরিকতার অভাব নাই। যেহেতু সবাই আন্তুরিক তাই আশা করছি কাক্সিক্ষত ভূমি আমরা বরাদ্দ পাব। ভূমি বরাদ্দ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শুরু করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ কমানো ও নগরবাসীর বিনোদন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিসর বৃদ্ধির জন্য গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে জঙ্গল সলিমপুরে খাস জমি বরাদ্দ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মেয়র।

চসিককে প্রস্তাবিত ভূমি বরাদ্দ দেয়া সম্ভব কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, অবশ্যই সম্ভব। জঙ্গল সলিমপুরে অনেক জায়গা। সেখানে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে আমরা প্রস্তাব পেয়েছি। সবাইকে নিয়েই সেখানে সরকারের নানা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। কাজেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন যে প্রস্তাব করেছে সেগুলোও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সেখানে স্থানান্তর করা হবে। ইকো পার্ক, স্পোর্টস ভিলেজ, বিশেষায়িত হৃদরোগ হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, নাইট সাফারি পার্ক, একটি নান্দনিক মসজিদ, উচ্চ শক্তির বেতার সমপ্রচার কেন্দ্র, আনসার ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পুলিশ ক্যাম্প, র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপনসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে জঙ্গল সলিমপুরে। সবকিছুই করা হবে। সেখানে যেসব পাহাড় অক্ষত আছে সেগুলো আমরা কাটবো না।

উল্লেখ্য, জঙ্গল সলিমপুরে প্রায় তিন হাজার একর খাস ভূমি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ চক্র সেখানে ১৩টি সমবায় সমিতির নামে পাহাড় কেটে অবৈধভাবে প্লট তৈরি করে বিক্রি করে আসছে। সমিতির নেতারা ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্টাম্পের মাধ্যমে খাস জমির দখল বিক্রি করে থাকে। স্থাপত্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তিন হাজার একর জায়গার মধ্যে মাত্র এক হাজার একর জায়গায় বিভিন্ন প্রকল্প স্থাপন করা যাবে।

চসিকের পরিকল্পনায় যা আছে :

চসিকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভূমি বরাদ্দ পেলে সাফারি পার্ক ও এন্টারটেইনমেন্ট জোন করা হবে। এজন্য প্রয়োজন ৬০ একর ভূমি। এছাড়া বাণিজ্য মেলাসহ বিভিন্ন ধরনের মেলা ও পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনের সুবিধা সংবলিত একটি মাল্টিপারপাস কনভেনশন সেন্টার নির্মাণও রয়েছে পরিকল্পনায়। এজন্য দরকার হবে ২০ একর ভূমি।

এদিকে নগরে যত্রতত্র বসা হকারদের পুর্নবাসনের দাবি আছে দীর্ঘদিন ধরে। উপযুক্ত জায়গা না পাওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও অতীতের কোনো মেয়র পুর্নবাসনে কার্যকর কোনো প্রদক্ষেপ নিতে পারেনি। জঙ্গল সলিমপুরে ভূমি বরাদ্দ পেলে হকার পুর্নবাসনের দাবিটি পূরণ করতে পারবে চসিক। এ লক্ষে জঙ্গল সলিমপুরে ১০ একর জায়গায় একটি হলিডে মার্কেট প্লেস করার পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটির।

বলা হয়ে থাকে, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ, রাস্তাঘাট সংস্কার ও আলোকায়ন। তবে এর বাইরে স্বাস্থ্যসেবা খাতেও সুনাম আছে চসিকের। বর্তমানে ৫১টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং পাঁচটি হাসপাতাল ছাড়াও মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল রয়েছে সংস্থাটির। তবে নতুন করে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, একটি নাসিং কলেজ এবং একটি মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট করতে চায় সংস্থাটি। জঙ্গল সলিমপুরে ১৭ একর জায়গায় এসব নির্মাণের পরিকল্পনা আছে চসিকের। এর মধ্যে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য ১০ একর, নার্সিং কলেজ কলেজের জন্য পাঁচ একর এবং মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট নির্মাণে প্রয়োজন হবে দুই একর ভূমি। এছাড়া বরাদ্দ পেলে পাঁচ একর ভূমিতে পাইকারি আড়ত সুবিধাসহ কিচেন মাকের্ট এবং তিন একর ভূমিতে মাংস সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজসহ অত্যাধুনিক স্লটার হাউজ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। পাঁচ একর ভূমিতে একটি শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণেরও পরিকল্পনা আছে চসিকের। আজাদী

খালেদ / পোস্টকার্ড ;