সীতাকুণ্ডের নৌকার টিকিট চান মোহাম্মদ ইমরান!

সীতাকুণ্ডের নৌকার টিকিট চান মোহাম্মদ ইমরান!
রেডিসন ব্লুতে জিপিএ ৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনায় বক্তৃতা দিচ্ছেন মোহাম্মদ ইমরান। ছবি : সংগৃহীত।

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

সীতাকুণ্ড আওয়ামী ঘরানার মানুষ মোহাম্মদ ইমরান। সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট এলাকার দুল্লভের বাড়ীর সন্তান। পরিবারের সব ভাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তিনি নিজেও সুপ্রতিষ্ঠিত, শিল্পপতি। তিনি বেশ ক'বছর ধরে চাইছেন সীতাকুণ্ডের নৌকার টিকিট। এই নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়ও করেছিলেন এক সময় । 

ইমরানের বড়ভাই ইকবাল হোসেনকে বাংলাদেশের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের জনক বলা হয়। তার হাত ধরেই এদেশে শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের গোড়াপত্তন ও সম্প্রসারণ মনে করেন অনেকে। অবশ্য এখন আর এই ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত নন তারা। মেজো ভাই ইমতিয়াজ ইকরাম ১৯৯০ থেকে ‘৯১ পর্যন্ত দেড় বছরের জন্য সীতাকুণ্ড উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন।

সীতাকুণ্ডের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ইমরান দলের কোনো পদে নেই, নেই কোনো কর্মসূচিতে। দুর্যোগ-দুুর্বিপাকে, অতিমারিতে, সামাজিক প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াতেও দেখা যায় না তাকে। পুরোটা সময়ই থাকেন নিরব, নিষ্ক্রিয়। কিন্তু সংসদের ভোট এলেই তাকে অন্যভাবে সরব হয়ে উঠতে দেখা যায়।

তারা বলেন, সারাবছর কিছুতেই না থেকে মনোনয়নপ্রাপ্তি বা মনোনয়ন-আলোচনায় থাকার জন্য আলোচিত মন্ত্রী-নেতাদের সাথে কয়েকটি অনুষ্ঠানে ‘অতিথি হওয়াকে’ মনোনয়ন চাওয়ার বা পাওয়ার অন্যতম যোগ্যতা বা মাপকাটি মনে করছেন আলোচ্য মোহাম্মদ ইমরান।

গত ২৮ জানুয়ারি নগরের পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে বঙ্গবন্ধু শিশুকিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া দেড় হাজার কৃতী শিক্ষার্থীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

জানা যায়, এর আগেও গত গত জাতীয় নির্বাচনের আগে একই আয়োজক সংস্থার একই ধাঁচের অনুষ্ঠানে ঢাকা-চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মাহবুব উল আলম হানিফ, আমিনুল ইসলাম আমিনসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতা-মন্ত্রীদের সাথে মঞ্চে বসে দুই মিনিটের বক্তব্য দিয়ে ফটোসেশান করে সেগুলোকে অবলম্বন করে দলীয় মনোনয়ন চাইতে গেছেন। আগ মুহূর্তে সীতাকুণ্ডের কয়েকজন চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এলাকায় ছোটখাটো কয়েকটি অনুষ্ঠানও করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আলোচিত মন্ত্রী-নেতার উপস্থিতি সম্বলিত অনুষ্ঠানে যাবার জন্য ইমরানের সন্তান ও আত্মীয়স্বজনই আয়োজক সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেন। আবার তার আগ্রহ বুঝতে পেরে আয়োজক সংস্থাও কখনো কখনো তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আয়োজক সংস্থা তার অনুরোধে কখনো-সখনো দুই মিনিট বক্তব্যের স্ক্রিপ্টও লিখে দেয়।

সীতাকুণ্ডের রাজনীতি সচেতনরা বলছেন, কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে, লিখিত বক্তব্য পড়ে, বড় নেতাদের সাথে ছবি তুলে তা পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করে এমপির মনোনয়ন পাওয়া যায় না, চাওয়া যায় শুধু।

সচেতন মহলের মতে, বছরের পর বছর দল ও মানুষের পেছনে অর্থ, ঘাম, শ্রম ঢেলে যেখানে আওয়ামী লীগের এমপি মনোনয়ন পাওয়া যায় না, সেখানে ভিন্ন প্রক্রিয়ায় সাময়িকের ‘শোআপ’ প্রদর্শনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করা বোকার স্বর্গে বসবাস ছাড়া আর কিছুই নয়।

সীতাকুণ্ড আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল কয়েকজন বলেন, ‘ইমরান সাহেবরা পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, সজ্জন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এলাকা ও মানুষের কিছুতেই তারা নেই। তাদেরকে আগে মানুষের শরীরের ঘ্রাণ গ্রহণে অভ্যস্ত হতে হবে। মনুষ্য শরীরের দুর্গন্ধকে ভালোবাসতে জানতে হবে। মাটির গন্ধে মাতোয়ারা হতে হবে। আর তখনই তারা এমপি পদের মতো কিছু চাইতে পারেন।’

সীতাকুণ্ড আ.লীগের এক নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘সারাবছর কোনো খোঁজ নেই, ভোট ঘনিয়ে এলেই মনোনয়ন চাইতে দেখা যায় আপনাকে, অথচ ৫ বছর সীতাকুণ্ডের জনগণ আপনার দেখা পান না। মনোনয়ন তো আর একদিনের ব্যাপার নয়, যে হুট করে চাইলেই পেয়ে গেলেন। এটিতো দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া ও লেগে থাকার বিষয়’–এমন প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ ইমরান বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। পরক্ষণে বলেন, আমি মনোনয়ন চাইব কিনা এখনও ঠিক করিনি। এরপর আর কিছু বলার নেই জানিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি। 

খালেদ / পোস্টকার্ড;