সীতাকুণ্ডের শিম ও বিচি রপ্তানি হয় বিশ্বের ১২ দেশে

সীতাকুণ্ডের শিম ও বিচি রপ্তানি হয় বিশ্বের ১২ দেশে
সীতাকুণ্ডের শিম ও বিচি রপ্তানি হয় বিশ্বের ১২ দেশে

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

এখন আর সীতাকুণ্ডের সাধারণ মানুষ শিম ও বিচির নাগাল পায়না। জমি থেকে বাজারে আসার আগেই পাইকাররা নিয়ে যায়।দেশজুড়ে চাহিদা ও সুনাম রয়েছে সীতাকুণ্ডের শিমের। সীতাকুণ্ডে প্রতিবছর গড়ে ১১৫ কোটি টাকারও বেশি শিম উৎপাদিত হয় এবং তা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের শিম ও শিমের বিচি যাচ্ছে বিশ্বের ১২ দেশে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবীবুল্লাহ বলেন, এবার সীতাকুণ্ডে তিন হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার ২৩০ জন কৃষক শিম চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিক টন হিসাবে এ বছর ৪৫ হাজার মেট্রিক টন শিম উৎপাদিত হয়েছে। যার বাজারমূল্য ১১২ কোটি টাকারও বেশি। এই শিম ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাশাপাশি রপ্তানি হয়েছে বিদেশেও।

কর্মকর্তারা জানান, আমেরিকা, সৌদি আরব, কুয়েত এবং ইউরোপ মিলে ১২ দেশে রপ্তানি হচ্ছে শিম ও বিচি।

রোগতত্ত্ববিদ (সংগনিরোধ ) ইমরুল হাসান বলেন, চলতি মৌসুমে সমুদ্রপথে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ১২টি দেশে সীতাকুণ্ডের শিম ও শিমের বিচি রপ্তানি করেছে চট্টগ্রামের ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। গড়ে ৮০ টাকা কেজি দরে ১৪৫ মেট্রিক টন শিম ও শিম বিচি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেছে তারা। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমেও শুধু সমুদ্রপথে আনুমানিক ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার শিম ও শিম বিচি রপ্তানি হয়েছে।

তিনি বলেন, আকাশপথে শিম ও শিমবিচি রপ্তানি হলেও তার কোনো সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই।

সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের ক্ষেত ও বিভিন্ন হাট থেকে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে করে শিম ও শিমের বিচি কিনে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে পাইকাররা।

সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বড় দারোগারহাট টেরিয়াইল ব্লকের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার শিমের বেশ ভালো ফলন হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরীর পরামর্শে আমি চলতি মৌসুমে ৬০ শতক জমিতে শিমের চাষ করি। এতে খরচ পড়েছে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা। আর পাইকারিতে দুই লাখ টাকারও বেশি শিম ও শিমের বিচি বিক্রি করেছি।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের সিটি গেইট থেকে শুরু করে ভাটিয়ারীসহ সীতাকুণ্ড উপজেলার বড়দারোগার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলতি মৌসুমে শিমের আবাদ হয়েছে। এ উপজেলার সর্বত্রই ব্যাপক পরিমাণে শিম চাষ হয়ে থাকে।

সলিমপুরের কৃষক মো. মাহবুবুল আলম বলেন, সীতাকুণ্ডে পাহাড় থেকে সমুদ্র পর্যন্ত সবখানেই ব্যাপক হারে শিমের চাষ হয়। এ এলাকায় শিম চাষের উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে জমির প্রতিটি আইলেও শিম চাষ করেন কৃষকরা। এ ছাড়া হাজার হাজার একর জমি, সাগরপারের বেড়িবাঁধ, বাড়ির উঠানসহ সবখানেই শিম চাষ হয়ে থাকে। চাষযোগ্য কোনো জমিই পরিত্যক্ত রাখেন না কৃষকরা। এর ফলে এখানে প্রচুর শিম উৎপাদন হয়ে থাকে।

বাঁশবাড়িয়ার কৃষক কাইসার আলম বলেন, ‘শিমের মৌসুমে এখানে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের পাইকারদের ভিড় লেগে থাকে। এসব পাইকারের হাত ধরে স্থানীয় শিম চলে যায় বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে। এখানে মৌসুমের প্রথম দিকে প্রতি কেজি শিম যেমন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হয়। মৌসুমের শেষ দিকেও এই শিম প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। আর এই শিমের বিচি বিক্রি হয় অনেক উচ্চমূল্যে। প্রতি কেজি শিমের বিচি সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, সর্বনিম্ন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এ কারণে অনেক কৃষকই শিম বিক্রি করেন এবং তাঁদের কাছ থেকে শিমের বিচি কিনে তা রপ্তানি করেন বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাড়া দেশের আর কোথাও এতো বিপুল পরিমাণ শিমের উৎপাদন হয় না। শুধু চট্টগ্রাম নয়, সীতাকুণ্ডের শিম ও শিমের বিচি চট্টগ্রামের সমুদ্রপথ ছাড়াও ঢাকার কারওয়ান বাজার হয়ে সমুদ্র ও আকাশপথে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, সীতাকুণ্ড অঞ্চল শিমচাষের উপযোগী বলে প্রতিবছর শিমের মৌসুমে শিম বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন কৃষকরা। তাছাড়া সীতাকুণ্ডের মত শিমচাষ দেশের আর কোথাও নেই। শিমের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ছাড়াও ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শিমের বিচি রপ্তানি করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;