সীতাকুণ্ডের ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলো যেন ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া

সীতাকুণ্ডের ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলো যেন ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া
সীতাকুণ্ডের ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলো যেন ঘুষ-দুর্নীতির আখড়া

এম কে মনির ।।

গত ১৪ জুলাই ছেলেকে নিয়ে সত্তরোর্ধ্ব আ ফ ম ইউসুফ সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়েছিলেন জঙ্গল সোনাইছড়ি মৌজায় নিজের মালিকানায় থাকা সাড়ে ৩৬ শতাংশ কৃষি জমির ৭ বছরের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে। এসময় জঙ্গল সোনাইছড়ি মৌজার দায়িত্বে থাকা ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এ বি এম মাসুদ হোসেনের কাছে গিয়ে নিজের জমির খতিয়ান দেখিয়ে ৭ বছরের ভূমি উন্নয়ন কর কত টাকা পরিশোধ করতে হবে জানতে চান।

কিছুক্ষণ পর দায়িত্বরত এ বি এম মাসুদ হোসেন হিসাব শেষ করে আ ফ ম ইউসুফকে ভূমি উন্নয়ন কর হিসেবে প্রায় ১৬ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানান। কৃষি জমির মাত্র ৭ বছরের ভূমি উন্নয়ন কর এতো বেশি হওয়ার বিষয়টি নিয়ে খটকা লাগে ইউসুফের। এসময় প্রতি শতাংশে ভূমি উন্নয়ন করের হার কত জানতে চাইলে উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন ৫০ টাকা বলে জানান। নিজের ভূমি কৃষি বা নাল জানিয়ে নিয়মানুযায়ী প্রতি শতাংশে ২ টাকা হার কেন প্রযোজ্য হবে না জানতে চাইলে মাসুদ হোসেন বলেন, নাল-কৃষি কিংবা বাড়ি যাই হোক না কেন সর্বক্ষেত্রেই ৫০ টাকা হার প্রযোজ্য হবে। আপনি কর পরিশোধ করলে করতে পারেন। না করলেও আপনার ইচ্ছা। এতে আমার কিছু করার নেই।

পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে মাসুদ হোসেনের হিসাবমতে আ ফ ম ইউসুফ কর পরিশোধ করলে তাকে ১৫ হাজার ৩৭৯ টাকার একটি দাখিলা কেটে দেয়া হয়। যাতে ভূমির শ্রেণি নাল উল্লেখ করা হয়েছে। বাড়িতে ফিরে বিষয়টি নিয়ে কয়েকজনের সাথে আলাপ করে ইউসুফ জানতে পারেন তার কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করা হয়েছে।

পরদিন ২ টাকা হারে কেন কর আদায় করা হয়নি তা জানতে চেয়ে ইউসুফের ছেলে মো. মিজান সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলমের কাছে অভিযোগ করেন। সেদিন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাকে অভিযোগটি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করলে তিনি ফিরে আসেন। পরে ওইদিন দুপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম কল করে মিজানকে জানান, তার বাবার কাছ থেকে ভুলে বেশি কর আদায় করা হয়েছে। একইসাথে কারণ হিসেবে অফিস রেকর্ডে তাদের জমি ভূলবশত আবাসিক হিসেবে এন্ট্রি থাকার কথা জানান। এ ঘটনার একদিন পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম আবার কল করে মিজানকে জানান, তার বাবার কাছ থেকে আদায় করা বাড়তি টাকা ফেরত দেয়া হবে। এজন্য পুনরায় ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যেতে বলা হয়। পরে ১৮ জুলাই এসিল্যান্ডের কথা অনুযায়ী ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে আগের দাখিলাটি জমা নিয়ে পুনরায় ৬১৬ টাকার একটি ভূমি উন্নয়ন করের দাখিলা দেয়া হয় এবং অবশিষ্ট টাকা ফেরত দেয়া হয়।

ভুক্তভোগী আ ফ ম ইউসুফের ইউসুফের অভিযোগ, বারবার জমির শ্রেণি নাল বলে উল্লেখ করলেও তার কাছ থেকে এতো বেশি টাকা আদায় করা হয়েছে। ২ টাকা হার প্রযোজ্য হবে না কেন জানতে চাইলেও সব ক্ষেত্রেই ৫০ টাকা হার বলে জানানো হয়েছিল। ইউসুফের প্রশ্ন, তিনি যদি অভিযোগ না করতেন তবে এ টাকা কোথায় যেত? আবাসিক হিসেবে ভুল এন্ট্রি হওয়ার কথা বলা হলেও দাখিলায় নাল উল্লেখ করেই দাখিলা কাটা হয়েছে। তাছাড়া জঙ্গল সোনাইছড়ি মৌজায় আবাসিক ভূমি নেই বললেই চলে।

এদিকে আ ফ ম ইউসুফের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে করের হার সম্বলিত কোন তালিকা প্রদর্শিত নেই। অফিসে দায়িত্বরতরা সেবা প্রার্থীদের একটি হিসাব দিয়েই দায় সারছেন। কেউ কেউ হিসাবের ব্যাখ্যা চাইলেও তা দেয়া হচ্ছে না। কারও জমির শ্রেণি কি তা-ও বিবেচনা করা হচ্ছে না হিসাবের বেলায়। এমনকি সরেজমিনেও যাওয়ার নজির মেলেনি ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের আগে। এসময় ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে এসে হয়রানি ও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা। তবে বিপদের আশঙ্কায় নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি তারা।

তাদের অভিযোগ, ভূমি অফিসে কোন সেবার জন্য কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তার তালিকা দৃশ্যমান জায়গায় প্রদর্শিত থাকার কথা থাকলেও তা নেই। এতে কোন খাতে কত টাকা দিতে হবে তা জানতে পারছেন না সেবাপ্রার্থীরা। জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলেই ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করেন ওই অফিসের কর্মকর্তারা। খতিয়ানে জমির প্রকৃত শ্রেণি নাল হলেও সবক্ষেত্রেই ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হচ্ছে বাড়ি বা আবাসিক শ্রেণির হারে। নানা ছলচাতুরী করে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে ইচ্ছেমতো কর আদায় করে নিচ্ছেন তারা। এতে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন বকেয়া কর দিতে আসা গরীব-অসহায় ভূমি মালিকরা। অফিসের কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের ভূমি উন্নয়ন কর চাপিয়ে দেয়ায় অনেকেই ভূমি উন্নয়ন কর দিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। আবার অনেকেই কর দিতে না পেরে ভূমি বিক্রয় কিংবা নামজারি (মিউটেশন) সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি ভূমি সেবা না পেয়ে দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেবা প্রার্থীদের।

ভূমি অফিসে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভূমি মালিক বলেন, ‘ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন তার ইচ্ছে মতোই কর আদায় করেন। তার হিসাবই এখানে চূড়ান্ত। কারও ২’শ টাকা কর আসলেও তিনি বাড়িয়ে সেটিকে কয়েক হাজারের অংকে দেখান। তিনি যা বলেন তাই পরিশোধ করতে হয়। অন্যথায় পরবর্তীতে নানা কারণ দেখিয়ে জমির নামজারি আবেদন আটকে দেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী নাল জমির ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে ২ টাকা হার প্রযোজ্য হলেও এ অফিসে এ নিয়মের তোয়াক্কা হয় না। সাধারণ মানুষ জানতে চাইলেও তারা জানাতে বাধ্য নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন। এতে নিরুপায় হয়ে তাদের হিসাব মতেই কর পরিশোধ করতে হয় সেবা গ্রহীতাকে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ভূমি মালিকও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এ অফিসের (ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিস) কর্মকর্তারা যা ইচ্ছে তাই কর আদায় করেন। অফিসে কোন কর তালিকা প্রদর্শিত নেই। বেশিরভাগ সেবা গ্রহীতা ভূমির করের হার সম্পর্কে অজ্ঞ বলে তারা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের সুযোগ লুফে নেন৷ কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করা হলেও দাখিলা দেয়া হয় কম টাকার। যা কেউ সহজে টের পান না। এমনকি শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে বছর, হার ও চক্রবৃদ্ধি হারের সুদের জটিল হিসাব দিয়ে বেশি টাকা আদায় করে নেন কর্মকর্তারা। যা মূলত ঘুষ হিসেবেই আদায় করা হয়। অথচ সরকারি কোষাগারে প্রকৃত হারে অনেক কম টাকা জমা দেয়া হয়।’

তবে শুধু ভূমি উন্নয়ন কর নয় ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অন্যান্য সেবা গ্রহণেও কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সেবা গ্রহীতারা। তারা বলছেন, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে প্রতিনিয়ত আসা নামজারি (মিউটেশন) ফাইল পাঠাতেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন কর্মকর্তারা। প্রতিটি নামজারি থেকে নামজারি আবেদন ফাইলে কর্মকর্তারা ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন এবং বিএস খতিয়ান থেকে নামজারি ফাইল হলে সেক্ষেত্রে এ টাকা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, নামজারি প্রস্তাব দেয়ার ক্ষেত্রে সরেজমিনে সার্ভে (পরিমাপ) করার কথা থাকলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সার্ভে ছাড়াই ফাইল ছেড়ে দেন কর্মকর্তারা। এতে অনেক সময় বেদখলকৃত জায়গাও নামজারি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। পরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেক ভূমি মালিককে মামলার আশ্রয় নিতে হয়।

একজন ভুক্তভোগী ঘুষ-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সব সরকারি অফিসের মতো ভূমি অফিসেও সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোজনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ভূমি অফিসে সবচেয়ে বেশি ঘুষ-বাণিজ্য হয়। অথচ এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়নি। ভূমি অফিসগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হলে ঘুষ-বাণিজ্য কমে আসবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এ বি এম মাসুদ হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ভূমির বর্তমান ব্যবহার দেখে কর আদায় করি। খতিয়ানে নাল লেখা থাকলেও বর্তমানে সেই ভূমি কোন অবস্থায় ব্যবহার হচ্ছে তা বিবেচনা করা হয়।’ এক্ষেত্রে ভূমির বর্তমান অবস্থা কীভাবে যাচাই করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ভূমির মালিককে জিজ্ঞেস করি। তারা যাই বলে তার উপর কর আরোপ করি। কেউ যদি তার ভূমির প্রকৃত অবস্থা গোপন করে সেক্ষেত্রে কীভাবে কর আরোপ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে পরিদর্শনও করি।’

অথচ ভুক্তভোগী আ ফ ম ইউসুফের কথামতে, তার ভূমির অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়নি৷ এমনকি খতিয়ানে নাল উল্লেখ থাকলেও বাড়ি বা আবাসিক হারের কর আদার করা হয়েছিল তার কাছ থেকে।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুরুল আহসান বলেন, ‘আমরা ভূমি মালিককে জিজ্ঞেস করি তার ভূমি বর্তমানে কোন অবস্থায় আছে। এ বিষয়ে কেউ মিথ্যা বলে না। আমার চাকরি জীবনে কাউকে এ বিষয়ে মিথ্যা বলতে দেখিনি।’ এসময় কীভাবে সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। অফিসে করের হারের তালিকা কেন টাঙানো হয়নি তাও জানাতে পারেননি তিনি।

জানতে চাইলে সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘অভিযোগটি আমি শুনেছি। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান বলেন, ‘একই জমির ভূমি উন্নয়ন কর দুইবার আদায় করার সুযোগ নেই। দাখিলা কেটে ফেললে সেই টাকা ফেরত দেয়ারও সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি দেখছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে হোল্ডিং এন্ট্রি করা থাকলে সেবা প্রার্থীরা অনলাইনেই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন। একই সাথে সেবাগ্রহীতা একটি অনলাইন দাখিলাও পেয়ে যাবেন। এতে কাউকে কষ্ট করে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে ভূমি অফিসে যেতে হবে না। জনসাধারণকে জানাতে আমরা এসব বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভূমি অফিসে কোন সেবায় কত টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং অনলাইনে হোল্ডিং এন্ট্রি করে নেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। মানুষের জানার সুবিধার্থে অফিসে তালিকা রাখার নির্দেশনাও আছে।’

পরবর্তীতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান এ প্রতিবেদককে ফিরতি ফোন কল করে বলেন, ‘আমি বিষয়টি নিয়ে এসিল্যান্ডের সাথে কথা বলেছি। যে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করা হয়েছিল তার হোল্ডিংয়ে ভুল হয়েছিল। ভুলের কারণে তার কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করা হয়েছিল। আর ওই টাকা তখনও ব্যাংকে জমা দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে সেবাগ্রহীতা অভিযোগ জানালে সেটি সংশোধন করা হয়েছে। এতে কোন অনিয়ম হয়নি। যেটি ভুল হয়েছিল সেটি ঠিক করা হয়েছে।’

এদিকে রিপন হোসেন নামের ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এক সেবাগ্রহীতা বলেন, ‘আমি মাত্র ২ শতক জমির ভূমি উন্নয়ন কর দিতে যাই। আমার কর বকেয়া ছিলো ৫-৭ বছরের। অফিস আমার কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা আদায় করে। প্রথমে ১৮ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমি দিতে না চাইলে দরকষাকষি করে পরে ১১ হাজার টাকা দিয়ে দিই। কিন্তু রশিদ দিয়েছে মাত্র দেড় হাজার টাকার। জিজ্ঞেস করলে তারা আমাকে বললো আপনার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে গেছে। আপনি এখন আসতে পারেন।’ তবে অনিয়মের এই অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুরুল আহসান।

শুধু ভাটিয়ারী ইউনিয়ন ভূমি অফিস নয়, চট্টগ্রামসহ সারাদেশের ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোতে কম-বেশি একই চিক্র বলে অভিযোগ আছে। ২০১৫ সালে ভূমি খাতে বিদ্যমান দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে ১২ দফা সুপারিশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা প্রতিবেদনে বলছে, ভূমি উন্নয়ন করের ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ১০ হাজার টাকা, নামজারির ক্ষেত্রে ৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা, রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, হাট-বাজার ইজারার ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদান প্রদান হচ্ছে। জমির ধরন ও স্থানভেদে ঘুষের পরিমাণ নির্ভর করে।

টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, ভূমি জরিপের সময় জরিপ কর্মী জমির পরিমাণ কম দেখান। খতিয়ানে ভুল তথ্য লেখার ভয় দেখিয়ে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করা হয়। ঘুষের বিনিময়ে খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত ও কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর সম্পত্তি দখলকারী ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীদের নামে রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়। তহসিল অফিস ঘুষের বিনিময়ে নামজারির প্যাকেজ নির্ধারণ করে। কোনো কোনো ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধ দখল করা খাসজমি, কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর এবং অর্পিত ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি ক্ষমতাবান ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের নামে নামজারি করা হয়। কৃষি খাস জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের প্রভাব ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি ও করের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। ভূমি সেবায় সুশাসনের জন্য ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আরও অগ্রগতির প্রয়োজন রয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত মামলা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ভূমি সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;