সীতাকুণ্ডের ডিসি পার্কে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুল উৎসব

সীতাকুণ্ডের ডিসি পার্কে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুল উৎসব
সীতাকুণ্ডের ডিসি পার্কে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুল উৎসব

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সদ্য ঘোষিত ডিসি পার্কে আগামী শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি ) থেকে চট্টগ্রাম ফ্লাওয়ার ফেস্ট-২০২৩ আয়োজন করতে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। । যা চলবে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত । ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়ক মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ডিসি পার্কে প্রথমবারের মতো হবে এ ফ্লাওয়ার ফেস্ট। শতাধিক বাহারি ফুল, বৃক্ষ, লতা-গুল্মের অপার সৌন্দর্যের ভিড়ে মূল আকর্ষণ থাকবে এখানকার মাটিতে প্রথমবারের মত ফোটা টিউলিপ ফুল। এছাড়া থাকবে কায়াকিং, ঘুড়ি উৎসব, বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুব্যবস্থা এবং শিশুদের জন্য কিডস জোন। ব্যস্ততম নাগরিক জীবন থেকে একটুখানি প্রশান্তি পেতে চট্টগ্রামের নাগরিকদের জন্য এ আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন

উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট বাইপাসের পশ্চিমে উত্তর সলিমপুর বেড়িবাঁধ। বিশাল জলাধার ও বেড়িবাঁধের মাঝে একখণ্ড খালি জায়গা। যার মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে চলছে এক বাগান তৈরির কাজ। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ ফুল গাছের চারা রোপণ, কেউ মাটি তৈরি করছে , কেউ বা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এর মধ্যে নানা রঙের বাহারি ফুলে সেজে উঠেছে পুরো এলাকা। আগামী শুক্রবার জেলা প্রশাসনের আয়োজনে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো ফুল উৎসবের জন্য চলছে এ প্রস্তুতি।

গত দুই দশকেরও বেশি সময় অবৈধ দখলে থাকা সৈকত সংলগ্ন এ জায়গাটি এখন সেজে উঠছে নতুনভাবে। আউটার রিং রোডকে দৃষ্টিনন্দন করতে গত বছর নতুনভাবে বনায়নের উদ্যোগ নেয় উপকূলীয় বনবিভাগ । চট্টগ্রামের শেষ অংশ সলিমপুর পর্যন্ত রোপণ করা হয় লক্ষ লক্ষ গাছের চারা। তবে সলিমপুর থেকে ফৌজদারহাট লিংক রোডের আগ পর্যন্ত বেড়িবাঁধের পুরো অংশটাই ছিল অবৈধ দখলদারদের দখলে। এর মধ্যে শেষ প্রান্তে উত্তর সলিমপুর এলাকায় গত ৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ১৯৪ একর খাস জমি দখলমুক্ত করেছে। এতে রয়েছে দুটি বিশাল জলাশয়।

উদ্ধারকৃত পুরো জায়গায় আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন পার্ক গড়ে তুলতে চায় জেলা প্রশাসন। তার আগে আগামী শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানে অনুষ্ঠিত হবে ৯ দিনব্যাপী চট্টগ্রাম ফুল উৎসব ২০২৩। উৎসবকে ঘিরে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন নার্সারি থেকে আসা অভিজ্ঞ কর্মচারীরা বাগান তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। এরমধ্যেই নানা রঙের বাহারি ফুলের চারায় ভরে গেছে পুরো এলাকা । জাম্বু গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডায়ান্থাস, পিটুনিয়া, ভারবেনা, মোরগ ঝুঁটি, ডালিয়া, হাইব্রিড গাঁদা, সালভিয়া, অ্যান্টিরিনাম, জিনিয়া, বাইকালার সালকিয়া, দোপাটি, গোলাপ, ডায়ান্থাস বেবিডলসহ নানা জাতের ফুলে সেজে উঠেছে বাগান। টিউলিপ ও ফুটেছে কয়েক রঙের। যা চট্টগ্রামে প্রথম। আরও বিভিন্ন জাতের চারা রোপণ করা হবে। চারা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ইফা ল্যান্ডস্কেপ নার্সারির কর্মচারীরা জানান, ‘ঢাকা-যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফুলের চারা সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হচ্ছে। উৎসবের আগে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় তিন লক্ষ ফুলের চারা রোপণ করা হবে।'

গত মঙ্গলবার প্রস্তুতি তদারকি করতে আসলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এনডিসি মো. তৌহিদ বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখলে ছিল জায়গাটি। তারা কোন প্রকার ইজারা না নিয়ে পার্ক গড়ে তুলেছিল। এছাড়া মাছ চাষের জন্য বড় বড় জলাশয় সৃষ্টি করে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ধ্বংস করেছে।' তিনি জলাশয়ের পশ্চিম পাশে পুড়ে যাওয়া গাছ দেখিয়ে বলেন, বিশেষ প্রক্রিয়ায় গাছগুলো মেরে ফেলা হয়েছে। এরপর সেখানে আরও জলাশয় খনন করতে চেয়েছিল অবৈধ দখলদাররা। উদ্ধার করা না হলে পুরো এলাকার বনায়ন ধ্বংস করে ফেলতো।'

তিনি আরও বলেন, 'চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামানের নির্দেশে এটি উদ্ধার করা হয়। এখানে লাগানো হয়েছে টিউলিপসহ নানা জাতের ফুল গাছ । উদ্ধারকৃত বিশাল এ এলাকায় দৃষ্টিনন্দন পার্ক তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন । যা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।'

এ দিকে ফুল উৎসব ২০২৩ উপলক্ষে আজ ( ০৮ ফেব্রুয়ারি ) ডিসি পার্ক প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু জাফর মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, পাহাড় সমুদ্রে ঘেরা অনন্য অসাধারণ চট্টগ্রামকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে আমরা বদ্ধপরিকর। একদিকে সমুদ্র অন্যদিকে মেরিন ড্রাইভ ঘিরে উদ্ধার হওয়া সরকারের ১৯৪ একক জায়গাকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা করে দেশবাসীকে আমরা একটি নান্দনিক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট উপহার দিতে চাই। সর্বোপরি, আমাদের এই আয়োজন চট্টগ্রামের মানুষকে মেধা, মনন ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করবে বলে প্রত্যাশা করছি।

সংবাদ সন্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলমসহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ ।

খালেদ / পোস্টকার্ড;