সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি - জামাত, রাজপথে ভয়ংকর সন্ত্রাস!

সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি  - জামাত, রাজপথে ভয়ংকর সন্ত্রাস!
সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি - জামাত, রাজপথে ভয়ংকর সন্ত্রাস!

বিশেষ প্রতিবেদক।।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচনের মাত্র এক বছর আগে । বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষনেতারা ক্রমাগত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘উৎখাতের’ ডাক দিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঘোষণা দেওয়া হবে সরকার পতনের আগ পর্যন্ত দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির।

সাম্প্রতিক এক জনসমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতা আমানুল্লাহ আমান বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ চলবে জিয়াদের (খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া) নির্দেশনায়।

এটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থী বিরোধীদলীয় জোট রাজপথে সহিংস বিক্ষোভের পথে যাবে এবং সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এমন সময় বিএনপি রাজনৈতিক অস্থিরতার পথে যাচ্ছে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশের জন্য এটি জখমে লবণ লাগানোর মতো।

বিএনপি হয়তো মনে করছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা জোরদার হওয়াকে আসন্ন মন্দা হিসেবে তুলে ধরে সরকারের পতন ঘটাতে পারবে। কিন্তু আন্দোলন যেহেতু উৎপাদন ও বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করে অর্থনীতিকে ব্যাহত করে, রাজপথ থেকে বিএনপির সরকার পতনের ডাক দেওয়া হয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, এখন পর্যন্ত এই দাবির পক্ষে যথেষ্ট জনমতের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে বিএনপি ও দলটির গুরুত্বপূর্ণ মিত্র জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন বয়কট ও আওয়ামী লীগকে উৎখাতে রাজপথে সহিংসতা বেছে নিয়েছে। কিন্তু ব্যারাকে জন্ম নেওয়া দল এবং গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের সংস্কৃতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সংস্কৃতি লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের পর রাজপথে ভয়ংকর সন্ত্রাস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর টার্গেট করে হামলা এবং জামাত কর্তৃক সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হয়, যা বিএনপি-জামায়াত জোটের ‘সবচেয়ে বড় ভুল’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। ফলে কয়েক শ মানুষের প্রাণহানি এবং অসংখ্য আহত হয়েছিলেন।

এখন গত কয়েকটি সমাবেশে বিএনপি নেতাদের ‘ক্ষমতা দখলের’ এক দফা দাবি তুলে ধরার পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা প্রদর্শনে দিকে নিয়ে গেছে। রাজধানীতে আ.লীগে যুব শাখা আয়োজিত সাম্প্রতিক এক সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। দলটির সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ড্রোন ফুটেজ ব্যবহার করেছে, এতে করে বিএনপির সমাবেশের ক্ষমতাসীনদের সমাবেশে যে জনসমাগম বেশি হয়েছে সেই দাবি জোরদার হয়েছে।

দুর্নীতিবাজ নেতৃত্ব

একজন পলাতক ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সহিংস রাজনীতির প্রতীক হিসেবে দীর্ঘ রেকর্ড থাকা তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি যেকোনও নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রথম ও প্রধানতম বাধা হয়ে হাজির হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত শাসনের পতনের পর উইকিলিকস প্রকাশিত সিরিজ মার্কিন ক্যাবল অনুসারে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বাংলাদেশে ঘুষ, আত্মসাৎ এবং দুর্নীতির সংস্কৃতি তৈরি এবং বজায় রাখতে সহযোগিতা করেছেন, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মার্কিন বাণিজ্যের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে, ফলস্বরূপ অনেক সুযোগ নষ্ট হয়েছে।

ক্যাবলগুলোতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি অর্থের লাখো ডলার চুরির কারণে মধ্যপন্থী, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সরকার জোরদার করতে মার্কিন প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করেছে। যা কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

তারেক রহমানকে ‘ক্লেপ্টোক্র্যাটিক সরকার ও সহিংস রাজনীতির’ প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে ওই সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর ওয়াশিংটনে একটি গোপন ক্যাবল পাঠান। এতে আরও বলা হয়েছে, তারেক রহমানের প্রকাশ্য দুর্নীতি মার্কিন মিশনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

সন্ত্রাসীদের সুযোগ না দেওয়া

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার উল্লেখ করে তারেক রহমানের দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ড এই নীতিগুলোকে জটিলতায় ফেলেছে বলে বিবেচনা করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

মরিয়ার্টি তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, তার আত্মসাত, চাঁদাবাজি এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের ঘটনাগুলো আইনের শাসন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ঊর্ধ্বে তুলে ধরার মার্কিন লক্ষ্য হুমকির মুখে পড়েছে। প্রয়োজনীয় বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত এবং মার্কিন কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডকে জটিলতায় ফেলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসারে মার্কিন উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করা তরান্বিত করেছে তারেক রহমানের দুর্নীতিগ্রস্ত বাণিজ্যিক চর্চা এবং ঘুষ চাওয়া।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) পরিচালিত এক তদন্তে উঠে এসেছে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা, তার ছেলে তারেক রহমানকে সিলেটের কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র লিজ দেওয়ার জন্য কানাডাভিত্তিক নাইকো রিসোর্স লিমিটেডের দেওয়া ঘুসের টাকার একাংশ প্রক্সির মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন।

গুরুত্বপূর্ণ হলো, ক্ষমতার পরিবর্তন দিল্লিকে ঢাকার প্রতি আস্থাহীন করে তুলতে পারে। কারণ বিএনপি-জামায়াত জোট দীর্ঘদিন ধরে ভারতবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী ও পাকিস্তান সমর্থিত ইসলামি জঙ্গিদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

‘সন্ত্রাস পাচারকারী’

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ইন্ডিয়া টুডেকে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের ‘আগের শাসকদের আমলে নিশ্চিতভাবে সন্ত্রাসের পাচার হয়েছে’।

বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে (২০০১-২০০৬) সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আসামে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার কথা উল্লেখ করে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা সেখানে ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান আসামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তা স্বীকার করি।

বাংলাদেশে পাকিস্তানের ছায়া

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, ‘দেশে কোনও জঙ্গি নেই এবং জঙ্গিবিরোধী অভিযান সরকার কর্তৃক নাটক বলে মনে হচ্ছে।’

জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা ঘাঁটি হিসেবে আগে পরিচিত পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর মির্জা ফখরুল এই মন্তব্য করেন। তার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক নেটিজেন তাকে ‘পলাতক তারেক রহমান কর্তৃক উৎসাহিত জঙ্গিদের সমর্থক’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম অস্ত্র আটকের ঘটনা ঘটে। এসব অস্ত্র আসামের উলফার মতো ভয়ঙ্কর গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হচ্ছিল। ১০ ট্রাক ভর্তি অস্ত্র আটক করা হয়। আদালতে এই মামলার বিচারে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী লুৎফর রহমান বাবরের সংশ্লিষ্টতা স্পষ্টভাবে নথিবদ্ধ হয়েছে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জঙ্গিবাদের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা উঠে আসা কয়েকটি শিরোনামে শীর্ষস্থানীয় বিশ্লেষক বার্টিল লিন্টনার বাংলাদেশকে ‘সন্ত্রাসের রেশমগুটি’ এবং এলিসা গ্রিসওল্ড আফগান ঘরানার ইসলামি বিপ্লবের আশঙ্কা করছিলেন। (‘এ কুকুন অব টেরর’, বার্টিল লিন্টনার, ফার ইস্টার্ন ইকনোমিক রিভিউ, ৪ এপ্রিল, ২০০২/ ‘দ্য নেক্সট ইসলামিস্ট রেভুল্যুশন?’, এলিসা গ্রিসওল্ড, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ২৫ জানুয়ারি, ২০০৫)।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন, অনেক বিশ্লেষকের কাছে মানব উন্নয়নের মডেল হিসেবে প্রশংসিত স্থিতিশীল বাংলাদেশ গঠনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মনোভাবের জন্য শেখ হাসিনাকে উপযুক্ত কৃতিত্ব দেওয়া উচিত।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;