সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র মাসিক সাহিত্য আসর সম্পন্ন

সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র মাসিক সাহিত্য আসর সম্পন্ন
সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র মাসিক সাহিত্য আসর সম্পন্ন

পলি শাহীনা, নিউইয়র্ক।।

আলোচনা, আবৃত্তি এবং স্বরচিত পাঠের মধ্য দিয়ে গত ২৮ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো 'সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র মাসিক সাহিত্য আসর। গোটা আসর পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। এবারের আসরে সাহিত্য একাডেমির আগামী মাসে যুগ পূর্তি বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পায়।

লেখক ফেরদৌস সাজেদীন বলেন, বাড়ির পথ কী কেউ ভুলে? তীর্থে যাওয়ার পথ কী চিনে নিতে হয়? গত কয়েকটি আসরে উপস্থিত হতে না পেরে আলোচনার শুরুতে এভাবেই তিনি হৃদয়ের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। কবি শামসুর রহমানের 'একটি কবিতার জন্য' কবিতাটি পাঠ শেষে তিনি বলেন, কবি দীর্ঘদিন ধরে কবিতা লিখে লিখে যখন প্রধান কবি হয়ে উঠেছেন তখনও তিনি প্রার্থনা করছেন একটি কবিতার জন্য। লেখার জন্য সাধক হতে হয়। কে জানে, হয়ত এই সাহিত্য একাডেমি হতে একদিন এমন এক কবিতা রচিত হবে যা মানব সভ্যতাকে একটি অন্যরকম বাঁক দিতে সমর্থ হবে। মাসের শেষ শুক্রবার সাহিত্য একাডেমিতে যে সম্মিলন ঘটে, এর জন্য মাসজুড়ে লেখকের মস্তিষ্কে যে সৃষ্টিশীল বিষয়টি দোলা দেয়, সাহিত্য নিয়ে চিন্তা করে, এটিই হলো সাহিত্য একাডেমির স্বকীয়তা। সাহিত্য একাডেমি সার্বজনীন। যারা সাহিত্য ভালোবাসে তাদের জন্য সাহিত্য একাডেমি একটি অনুপ্রেরণার জায়গা।

প্রবীণ সাংবাদিক মোহাম্মদ উল্লাহ অন্য আলোচকদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। তিনি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের লেখার প্রতি মুগ্ধতা জানান। সাহিত্য একাডেমির মাসিক আসর এবং যুগ পূর্তি সফল করে তোলার জন্য তিনি সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে লেখকদের একটি বন্ধুবৃত্ত তৈরি হয়েছে। যুগ পূর্তি সামনে রেখে তিনি প্রকাশনা, সংকলন বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন।

কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, কাউকে মাড়িয়ে কেউ উঠে যেতে পারে না। যার যার প্রতিভার মধ্য দিয়ে তাকে উঠে আসতে হবে। ঈর্ষাকাতরতা পরিহার করে স্ব-সৃষ্টিতে মনোযোগী হলে সৃষ্টিশীল কাজগুলো উন্নত হবে। যারা আজ পড়লো, কিছু লেখা খুব ভালো লেগেছে। প্রতিনিয়ত চর্চার মাধ্যমে সকলের লেখা উত্তরোত্তর ভালো হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। জেমস জয়েস, ফ্রাঞ্জ কাফকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, লেখককে ঠিক করতে হবে তিনি কী জনপ্রিয়তার দিকে যাবেন, না কী সত্যি সত্যি সাহিত্য সৃষ্টি করবেন। উল্লেখিত লেখকদ্বয় জনপ্রিয়তার দিকে হাঁটেন নি, কিন্তু তাঁদের সৃষ্টিতে ডুবে আমরা মণি মাণিক্য আহরণ করি।

লেখক এ.বি.এম সালেহ উদ্দিন বলেন, সাহিত্য একাডেমির এই ঘরটি যখন সাহিত্যমোদীদের উপস্থিতিতে ভরে উঠে, ভালো লাগে। নিয়মিত আসরের মতো সাহিত্য একাডেমির যুগ পূর্তিতেও সকলের উপস্থিতিতে দিনটি উদযাপিত হবে।

নীরা কাদরী বলেন, অসুস্থতার জন্য কিছুটা দেরিতে আসায় অনেকের পড়া শুনি নি বলে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। সাহিত্য একাডেমি আমাদের সকলের। আশা করি সকলের সহযোগিতায় যুগ পূর্তির আসরটি আনন্দঘন উৎসবে পরিণত হবে।

সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরণ বলেন, সাহিত্য একাডেমির এই মিলনমেলায় ছিলাম, আছি, থাকবো।

লেখক রুপা খানম বলেন, শত ব্যস্ততার মাঝেও সাহিত্য একাডেমিতে না এসে এই দিনটিতে ঘরে থাকতে পারি না।

লেখক সুলতানা ফেরদৌসী বলেন, দেশ ছেড়ে প্রবাসে আসার পর সাহিত্য নিয়ে ভাববার, কিংবা কিছু বলবার সুযোগ প্রথম তৈরি করে দিয়েছে সাহিত্য একাডেমি।

আসরে আবৃত্তি করেন, আবীর আলমগীর, পারভিন সুলতানা ও নাসিমা আক্তার।

এবারের আসরে যাঁরা স্বরচিত কবিতা ও লেখা পাঠ করেন, কাজী আতীক, রানু ফেরদৌস, মাইন উদ্দিন আহমেদ, ফারহানা হোসেন, মনিজা রহমান, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, তাহমিনা খান, বেনজির শিকদার, সুরীত বড়ুয়া, সুমন শামসুদ্দিন, মিশুক সেলিম, মোহাম্মদ আলী বাবুল, সোহানা নাজনীন, রাজিনা চৌধুরী, সবিতা দাস, সৈয়দ মামুনুর রশীদ, কামরুজ্জামান বাচ্চু, আব্দুস শহীদ, পলি শাহীনা প্রমুখ।

আসরে উপস্থিত ছিলেন, আবেদীন কাদের, শামস আল মমীন, আহমাদ মাযহার, নিনি ওয়াহেদ, সোবহান চৌধুরী, রাহাত কাজী শিউলি, আনোয়ারুল হক লাভলু, নাসির শিকদার, শামস চৌধুরী রুশো, খালেদ সরফুদ্দীন, স্বপ্ন কুমার, তাহরীনা প্রীতি, শুক্লা রায়, ফরিদা চৌধুরী, মোঃ ফজলে আলী কচি, ফরহাদ হোসেন, কামরুন নাহার রীতা, এম.এ সাদেক, আজিজুল হক মুন্না প্রমুখ।

সকলকে যুগ পূর্তি আসরে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন মোশাররফ হোসেন। 

খালেদ / পোস্টকার্ড;