সু চি শান্তির প্রতীক না ,আমরা ঘৃণা করি সু চিকে ,' সে রক্ষক না ভক্ষক’

সু চি শান্তির প্রতীক না ,আমরা ঘৃণা করি সু চিকে ,' সে রক্ষক না ভক্ষক’
সু চি শান্তির প্রতীক না ,আমরা ঘৃণা করি সু চিকে ,' সে রক্ষক না ভক্ষক’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার বিচারের শুনানি শুরু হয়েছে। নেদারল্যান্ডের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানিতে আছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের দল। বিশ্বের নিপিড়িত-নির্যাতিত- গণহত্যার স্বীকার মানুষের নজর আজ হেগের এই মামলার শুনানির দিকে। যাদের জন্য  এই মামলা সেই রোহিঙ্গারা কি বলছেন সু চি ও এই  গণহত্যা মামলা সম্পর্কে।

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বর্তমানে জীবন রক্ষার তাগিদে বসবাস করছে চট্রগ্রামের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। ক্যাম্পগুলোতে ভূক্তভোগী রোহিঙ্গাদের সাথে এই বিচারের বিষয়ে কথা বলেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্টার। রোহিঙ্গাদের একটাই দাবি- যারা আমাদের স্বজনকে হত্যা করেছে, কোলের শিশুকে আগুনে ছুঁড়ে মেরেছে, নারীদের ধর্ষণ করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের শাস্তি চাই। শান্তির প্রতীক হয়ে সু চি গণহত্যাকারিদের সাথে হাত মিলিয়ে রক্ষক থেকে হলেন ভক্ষক। তিনি শান্তি নয় গণহত্যার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।

 
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নিধনের সময় ২০১৭ সালে নুর আলমের ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনারা। ৬৫ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে করে বলেন, ‘এক সময় অং সান সু চি ছিলেন শান্তির প্রতীক। আমাদের আশা ছিলো তিনি ক্ষমতায় এলে নির্যাতন বন্ধ হবে। আমরা তার জন্য দোয়া করেছি; কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসেই গণহত্যার প্রতীকে পরিণত হলেন। আমাদের রক্ষা করার বদলে, তিনি হত্যাকারীদের সাথে হাত মেলালেন। এখন তিনি হত্যাকারীদের রক্ষা করতে গেছেন। তাকে আমরা ঘৃণা করি, তার জন্য এটি লজ্জার।'

 

নেদারল্যান্ডের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে  সু চি

নেদারল্যান্ডের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে সু চি

এই বৃদ্ধ বলেন, সু চি ও তার সেনাবাহিনী এবং আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। এই দিনের জন্য আমি অপেক্ষায় আছি। তাদের শাস্তি হয়েছে সেটা দেখতে পারলে আমার জীবনে আর কোন আক্ষেপ থাকবে না

১৯ বছর বয়সী মোহাম্মাদ জোবায়র বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশুদের পড়ান। তিনি বলেন, হত্যা, ধর্ষণ নির্যাতন দেখেছি আমরা। আমাদের চোখের সামনে অনেককে হত্যা করা হয়েছে। ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পর আমরা পালিয়ে এসেছি। এটিই সময় বিশ্বসম্প্রদায়ের জন্য মিয়ানমারের বিচার করার। তারা যে নারকীয় কাণ্ড করেছে- তার বিচার হতেই হবে। রোহিঙ্গাদের বিপক্ষে গণহত্যায় তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।  সু চি এক সময় বলতেন তিনি ক্ষমতায় আসার আগে ধর্ষণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে সেনারা। এখন তিনিই সেই সেনাদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। এটি লজ্জাজনক! আমরা মামলার শুনানির জন্য অপেক্ষা করছি..... এখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা খুব ভালো নয় তাই আমরা সেটি শুনতে পারব কি না বুঝতে পারছি না।

রশিদ আহমেদের পরিবারের ১২ সদস্যকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনারা। ৩৫ বছর বয়সী এই যুবক বলেন, একমাত্র উপযুক্ত শাস্তিই আমার সান্ত্বনা দিতে পারবে। যাদের হারিয়েছি তাদের তো আর কোনদিন ফিরে পাবো না। কিন্তু খুনিরা শাস্তি পেলে তাদের রুহ শান্তিতে থাকবে।

৩১ বছর বয়সী মমতাজ বেগম বলেন, তারা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমাকে ধর্ষণ করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার ছয় বছর বয়সী মেয়েটার মাথায় কোপ মেরেছে। শুনেছি সু চি ও তার সেনবাহিনীর বিচার শুরু হবে। আমরা চাই তাদের শাস্তি যথাযথ হোক। নিরীহ মানুষগুলোকে, নিরাপরাধ শিশুদের কেন তারা হত্যা করেছে? কেনা নারীদের ধর্ষণ করেছে- আমরা এর বিচার চাই।

আরেকজন নির্যাতিত নারী জমিলা বেগম(২৯)। ২০১৬ সালে তার স্বামীকে হত্যা ও তাকে ধর্ষণ করা হয়। তিনি বলেন, সেনারা আমার বাড়িতে এসে স্বামীকে হত্যা করে ঘরটা পুড়িয়ে দিল। তিন সেনা আমাকে একটি ঝোপের মধ্যে নিয়ে বন্দুকের মুখে ধর্ষণ করেছে যতক্ষণ আমার হুশ ছিলো।

 

‘শান্তির প্রতীক সু চি রক্ষক থেকে হলেন ভক্ষক’

‘শান্তির প্রতীক সু চি রক্ষক থেকে হলেন ভক্ষক’

এরপর বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দেয়ার কারণে সেনারা আমাকে খুঁজে পেতে পোস্টারিং করেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করেছে। জীবন বাঁচাতে আমি পালিয়ে এসেছি বাংলাদেশে।
 

জমিলা বলেন, এই নৃশংসতার ন্যায় বিচার চাই। যারা আমাকে ধর্ষণ করেছে, স্বামীকে হত্যা করেছে, ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে আমাদের সন্তানকে আগুনে ছুড়ে মেরেছে তাদের সবার বিচার চাই।
 
গণহত্যার দোষ স্বীকারে সু চি’কে ৭ নোবেল বিজয়ীর আহ্বান

এদিকে  রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে করা অপরাধের ব্যাপারে প্রকাশ্যে স্বীকার করার জন্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বের ৭ নোবেলজয়ী। একইসঙ্গে এই গণহত্যার জন্য সু চি ও মিয়ানমারের সেনা কমান্ডারদের জবাবদিহিতার আহ্বানও জানান তারা।

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) এক যৌথ বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানের শিরিন ইবাদি, লাইবেরিয়ার লেমাহ গবোই, ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কার্মান, উত্তর আয়ারল্যান্ডের মাইরেড মাগুয়ের, গুয়েতেমালার রিগোবার্টা মেনচ তুম, যুক্তরাষ্ট্রের জোডি উইলিয়ামস ও ভারতের কৈলাশ সত্যার্থী। খবর ইউএনবি

 

‘শান্তির প্রতীক সু চি রক্ষক থেকে হলেন ভক্ষক’

‘শান্তির প্রতীক সু চি রক্ষক থেকে হলেন ভক্ষক’

বিবৃতিতে নোবেল বিজয়ীরা বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হওয়া গণহত্যাসহ অপরাধগুলো প্রকাশ্যে স্বীকার করার জন্য শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হিসেবে আমরা অং সান সু চির প্রতি আহ্বান জানাই। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, এই নৃশসংসতায় নিন্দা জানানোর পরিবর্তে সেটা অস্বীকার করেছেন সুচি।

বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর ঘটনায় মিয়ানমারকে দায়ী করার জন্য এই পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা গাম্বিয়ার প্রশংসা করেন ওই সাত নোবেলজয়ী।

নেদারল্যান্ডের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার  আদালতে ১৫ জন বিচারপতির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন দুজন এডহক বিচারপতি। ওই দুজন গাম্বিয়া ও মিয়ানমারের মনোনীত। আদালতের সিদ্ধান্ত হবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।  হেগের এই আদালতের যেকোনো রায়ই চূড়ান্ত, পালন বাধ্যতামূলক। আপিলের কোনো সুযোগ নেই চূড়ান্ত রায়ের পর ।

সুত্রঃ সময়ের আলো ।