কোনো ব্যক্তির ঘরে অনুমতি প্রার্থনায় ইসলামের শিক্ষা

কোনো ব্যক্তির ঘরে অনুমতি প্রার্থনায় ইসলামের শিক্ষা

মাওলানা আব্দুর রহমান ।।

ইসলামে বিধান রয়েছে অন্য কোনো ব্যক্তির ঘরে বা রুমে প্রবেশ করার জন্য পূর্ব অনুমতি নেওয়ার । অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করা সামাজিকভাবে যেমন অভদ্রতা তেমনি ইসলামের শিষ্টাচারেরও বাইরে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে বিশ^াসীরা! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যদের ঘরে প্রবেশ কর না, যতক্ষণ না তোমরা তাদের অনুমতি নাও আর ঘরের অধিবাসীদের প্রতি সালাম কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম।’ (সুরা নুর : ২৪/২৭)। ইবনুল জাওজি (রহ.) বলেন, ‘এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অনুমতি ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করা জায়েজ নয়।’ (আল-আদাবুশ শারঈয়াহ : ২১২)। তাই অন্য কারও ঘরে বা রুমে প্রবেশের সময় অনুমতি নেওয়া। নিচে এ সম্পর্কে ইসলামের কিছু শিক্ষা তুলে ধরা হলো।
প্রথমে সালাম দেওয়া : অনুমতি গ্রহণের সময় সালাম দেওয়া সুন্নত। হাদিসে এসেছে, হজরত কালাদাহ ইবনে হাম্বাল (রহ.) হতে বর্ণিত, ‘একদিন হজরত সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া (রা.) কিছু দুধ, একটি হরিণ ছানা ও কিছু শসাসহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলেন। তখন নবীজি (সা.) মক্কার উঁচু স্থানে অবস্থান করছিলেন। (সাফওয়ান রা. বলেন) আমি সালাম না দিয়েই তাঁর নিকট প্রবেশ করলে তিনি বললেন, তুমি ফিরে যাও এবং ‘আসসালামু আলাইকুম’ বল।’ (আবু দাউদ : ৫১৭৬; তিরমিজি : ২৭১০)। অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে প্রথমে সালাম না দেয়, তোমরা তাকে প্রবেশের অনুমতি দিও না’। (সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহিহা : ৮১৭)
তিনবার অনুমতি চাওয়া : কারও বাসায় প্রবেশ করতে চাইলে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ তিনবার পর্যন্ত অনুমতি চাওয়া। এরপরও অনুমতি না মিললে ফিরে আসতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন ‘তোমাদের কেউ যদি তিনবার অনুমতি চায়, কিন্তু তাতে অনুমতি দেওয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়।’ (সহিহুল
জামে : ৩১৮)। তিনবারের বেশি অনুমতি চাওয়া ঠিক না। কারণ এতে রুম বা বাসার ভেতরের লোকের কাজের বিঘœ ঘটতে পারে বা তিনি বিরক্ত বোধ করতে পারেন। হজরত আবুল আলানিয়া (রহ.) বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর বাড়িতে এসে সালাম দিলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হলো না। আমি পুনরায় সালাম দিলাম, কিন্তু অনুমতি প্রাপ্ত হলাম না। আমি তৃতীয়বার উঁচু আওয়াজে বললাম, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাদ দার। এবারও আমি অনুমতি প্রাপ্ত হলাম না। তখন আমি একপাশে সরে গিয়ে বসে
থাকলাম। ঘরের ভেতর থেকে একজন গোলাম বের হয়ে এসে বলল, প্রবেশ করুন। আমি প্রবেশ করলে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বললেন, তুমি আরও অধিকবার অনুমতি প্রার্থনা করলে তোমাকে অনুমতি দেওয়া হতো না।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ : ১০৭৭)
অনুমতি গ্রহণকারীর পরিচয় দেওয়া : অনুমতি গ্রহণের সময় অনুমতি প্রার্থীর নিজের পরিচয় দেওয়া। হাদিসে এসেছে, হজরত জাবির (রা.) বলেন,. ‘আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল, এ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আমি নবী করিম (সা.)-এর কাছে আসলাম এবং দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আমি। তখন তিনি বললেন, ‘আমি আমি’, যেন তিনি তা অপছন্দ করলেন’। (বুখারি : ৬২৫০; মুসলিম : ২১৫৫)। অর্থাৎ নাম না বলে শুধু ‘আমি’ বলায় নবীজি রাগ হয়ে গেলেন।
দরজায় খুব শব্দ না করা : কারও বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি গ্রহণের সময় খুব জোরে দরজা ধাক্কানো বা বিকটভাবে কড়া না নাড়ানো। কারণ এতে ভেতরের লোকদের অসুবিধা হতে পারে। কেউ ঘুমন্ত থাকলে তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে। রোগী থাকলে তার বিশ্রামে বিঘœ ঘটবে। শিশুরা থাকলে ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর দরজায় নখ দ্বারা হালকাভাবে আঘাত করা হতো।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ : ১০৮০)
দরজা বরাবর না দাঁড়ানো : অনুমতি গ্রহণের সময় দরজা বরাবর দাঁড়ানো যাবে না। বরং ডান বা বাম দিকে সরে দাঁড়ানো। কারণ ঘরের ভেতর দৃষ্টি পড়তে পারে। এটা অনুচিত। হাদিছে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কারও কাছে এলে সরাসরি দরজায় মুখ করে দাঁড়াতেন না, বরং দরজার ডান অথবা বাম পাশে সরে দাঁড়িয়ে বলতেন, আসসালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম।’ (আবু দাউদ : ৫১৮৬)
ঘরের ভেতর না তাকানো : ঘরের মালিকের অনুমতি ছাড়া ভেতরে তাকানো নিষেধ। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দৃষ্টির কারণেই প্রবেশের অনুমতির বিধান করা হয়েছে।’ (বুখারি : ৬২৪১; মুসলিম : ৫৭৬৪)। অর্থাৎ দৃষ্টি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যেই এ নির্দেশ। এ সম্পর্কে নবীজি কঠোর কথা উচ্চারণ করেছেন, তিনি বলেছেন ‘কোনো ব্যক্তি যদি বিনা অনুমতিতে তোমার প্রতি উকি-ঝুঁকি দেয়, আর তুমি তাকে কংকর মেরে তার চোখ ফুঁড়ে দাও, তাহলে তোমার কোনো দোষ নেই।’ (বুখারি : ৬৮৮৮; মুসলিম : ২১৫৮)। অর্থাৎ এটা খুব ঘৃণ্য কাজ। ঘৃণার মাত্রা বোঝাতেই নবীজি এমন শক্ত কথা বলেছেন।