ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ধেয়ে আসছে , সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ, বন্দরে এলার্ট-৩ জারি , বন্ধ পণ্য উঠা-নামা

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ধেয়ে আসছে ,  সারা দেশে নৌযান চলাচল বন্ধ, বন্দরে এলার্ট-৩ জারি , বন্ধ পণ্য উঠা-নামা

বাংলাদেশের উপকূলের দিকে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে এগোতে থাকা ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এরই মধ্যে প্রবল আকার ধারণ করেছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে, আপাতত এর গতিমুখ সুন্দরবনের দিকে। আজ শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার ভোর নাগাদ যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি খুলনা-বরিশাল অঞ্চলে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে ৫-৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ঝড়ের প্রভাবে সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মোংলা ও পায়রা বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। 


ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে আবহওয়া অধিদফতর বিপদ সংকেত জারি করার পর চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে সব ধরনের নৌযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে বলেছে অভ্যন্তরীণ নৌ প‌রিবহন কর্তৃপক্ষ।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আশঙ্কায় সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস উৎসব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাগেরহাটে খোলা হয়েছে ২৩৪ আশ্রয়কেন্দ্র। বরিশালে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কলাপাড়ায় সাগর উত্তাল, ট্রলার থেকে পড়ে নিখোঁজ হয়েছে এক জেলে। পটুয়াখালীতে হয়েছে প্রশাসনের জরুরি প্রস্তুতি সভা। নোয়াখালীতে খোলা হয়েছে কন্টোল রুম, মাইকিংয়ে চলছে সতর্কীকরণ। ওদিকে সাগর উত্তাল থাকায় সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছেন ১২০০ পর্যটক। চট্টগ্রাম বন্দরে রেড এলার্ট-২ জারি করা হয়েছে। সঙ্গে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত। আর মোংলা ও পায়রা বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে।


আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঘূর্ণিঝড়টি কখনও বেশি গতি পাচ্ছে, আবার কখনও থেমে যাচ্ছে। গতিবেগ কখনও বেশি হচ্ছে, কখনও কম হচ্ছে। তবে বঙ্গোপসাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, উপকূলে আঘাত করার আগে সাধারণত সেগুলোর শক্তি বৃদ্ধি পায়। আবার কখনও কখনও দুর্বল হওয়ার নজিরও রয়েছে বলে তিনি জানান। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যেটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।


এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় ২২টি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে সরকার। শুক্রবার বিকালে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান। এর আগে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব মোকাবেলায় মনিটরিং সেলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানতে পারে। তাই এর মোকাবেলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি জানান, সাতটি জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ জন্য ইতোমধ্যেই সাইক্লোন সেন্টারসহ উপকূলের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি সাইক্লোন সেন্টারে দুই হাজার প্যাকেট করে শুকনো খাবারসহ নগদ পাঁচ লাখ করে টাকা পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সর্বশেষ খবর জানুন আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে।


বাগেরহাট : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলায় ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে উপকূলের মানুষদের সরিয়ে নিতে কাজ করবে স্বেচ্ছাসেবকরা। শুক্রবার বেলা ১১টায় দুর্যোগ মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরি সভা করেছে। সভায় ১০ নভেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী সুন্দরবনের দুবলার চরের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হতে যাওয়া রাস উৎসব বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে সকাল থেকে মেঘলা আকাশ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে।


জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সোয়া ২ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। তাদের জন্য এগুলো খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া সব উপজেলাতে একটি করে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। সুন্দরবনে নতুন করে কাউকে যাওয়ার অনুমতি না দিতে বলা হয়েছে।


বরিশাল : ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় বরিশালে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী মজুদ করা হয়েছে। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি রোধে দ্বীপ জেলা ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনা প্রশাসন জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে আগেভাগেই মাঠে নেমেছে। বরিশাল জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান সময়ের আলোকে জানান, জেলার ২৩২টি সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্র প্রস্তুত এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী মজুদ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বরিশালের আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আব্দুর রশীদ সময়ের আলোকে জানান, ইতোমধ্যে বরিশাল জোনের ৬ হাজার ১৫০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত করা হয়েছে।


পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের জরুরি প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় জরুরিভিত্তিতে করণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরা হয়। জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলায় ৪০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে ডাক্তার, স্কাউট এবং যুব রেডক্রিসেন্ট ভলান্টিয়ার রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৬৬ বান্ডিল টিন, ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ১০০ টন চাল, ৪০৩টি সাইক্লোন শেল্টার, ৩ হাজার ৫০০ কম্বল প্রস্তুত রয়েছে। এই তথ্য নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী সময়ের আলোকে জানান, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব উপজেলায় কন্টোল রুম চালু করা হয়েছে। ভোলা প্রশাসনও বুলবুল মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জেলার ৬৬৮টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং গঠন করেছে ৯২টি মেডিকেল টিম। এ ছাড়াও জেলা সদরসহ সাত উপজেলায় আটটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি। জেলায় সিপিপির ১০ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছে।


কলাপাড়া : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সাগর উত্তাল হওয়ায় মাছ শিকার বন্ধ করে উপকূলে ফেরার পথে বেল্লাল হোসেন (৪০) নামের এক জেলে নিখোঁজ রয়েছে। শুক্রবার ভোররাতে কুয়াকাটা ঝাউ বাগান সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এফবি ‘মা কুলসুম’ ট্রলার থেকে ঢেউয়ের তোড়ে ভারসাম্য হারিয়ে সাগরে পড়ে যায় বেল্লাল। মহিপুর থানার ওসি মো. সোহেল আহমেদ জানান, ট্রলার থেকে এক জেলে সাগরে পড়ে যাওয়ার খবর তিনি পেয়েছেন। সাগর উত্তাল থাকায় এখনও তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে কলাপাড়ার গোটা উপকূলীয় এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়ার কারণে ঝড় আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মধ্যে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার্থে বৃহস্পতিবার রাতে দুর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান।
কক্সবাজার : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে কক্সবাজার উপকূলে ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত থাকায় শুক্রবার টেকনাফ-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখতে নোটিস দেন। এদিকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় সেন্টমার্টিনে প্রায় ১২০০ পর্যটক আটকা পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর আহমদ। তবে তারা নিরাপদ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার ও বহুতল কয়েকটি হোটেল রয়েছে। কঠিন দুর্যোগ বা জলোচ্ছ্বাস হলেও আটকে পড়া পর্যটকদের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। সংকেত বাড়লে আমরা তাদের এসব স্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করব।


চট্টগ্রাম : ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে রেড এলার্ট-৩ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্দর চ্যানেলে সব ধরনের জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দুই শতাধিক লাইটার জাহাজকে কর্ণফুলী সেতুর উজানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বহির্নোঙ্গরে জাহাজে মালামাল হ্যান্ডলিং বন্ধ রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, রেডক্রিসেন্ট কন্ট্রোল রুম খুলেছে। উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

৬ নম্বর সংকেত দেখাতে বলায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণভাবে ‘এলার্ট-৩ জারি’ করেছে। ‘এলার্ট-৩ জারি’ করার পর থেকে বন্দরের মূল জেটিতে বন্ধ রাখা হয়েছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং।

এর আগে দুপুরে বহির্নোঙরে (সাগরে) বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য খালাসের পাশাপাশি বন্ধ রাখা হয়েছে বন্দরে জাহাজের প্রবেশ। বন্দরে নোঙর করা ১৮ টি জাহাজের বাইরেও বহির্নোঙরে ছিল ১৪৯টি জাহাজ। আউটারে অপেক্ষারত জাহাজগুলোর মধ্যে বন্দরে প্রবেশ করবে ১৬টি। তবে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর কারণে অপেক্ষারত জাহাজগুলোকে বন্দরে নোঙর করতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ। গতকাল (শুক্রবার) বিকেল সাড়ে ৩ টায় বন্দর ভবনে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নিয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সর্তক সংকেত ৪ জারি হওয়ার সাথে সাথে বন্দরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণভাবে ‘এলার্ট-২ জারি’ করেছে। এরই সাথে দুপুর থেকে বহির্নোঙরে (সাগরে) বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য খালাসের পাশাপাশি বন্ধ রাখা হয়েছে বন্দরে জাহাজের প্রবেশ। আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্তক সংকেত ৫ জারি করলেই চট্টগ্রাম বন্দরে অভ্যন্তরীণভাবে ‘এলার্ট-৩ জারি’ হয়ে যাবে। ‘এলার্ট-৩ জারি’ হওয়ার সাথে সাথে বন্দরে পণ্য উঠা-নামা বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর বন্দর চ্যানেলে অবস্থানরত অভ্যন্তরীণ জাহাজ ও ছোট ছোট নৌযানগুলো শাহ আমানত সেতুর উজানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বহির্নোঙরে (সাগরে) অবস্থানরত বড় জাহাজগুলো ক্রমান্বয়ে কুতুবদিয়া ও কক্সবাজার উপকূলে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এসব বড় জাহাজের ইঞ্জিন সার্বক্ষণিক চালু রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে’।

বন্দর সূত্র জানায়, আজ (শনিবার) বন্দরের মূল জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলো বহির্নোঙরে সরিয়ে নেওয়া হবে। এর আগেই সব কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্যান্য হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট প্যাকিং করা হবে। ঝড়ো হাওয়ায় যাতে কনটেইনার পড়ে পণ্যের ক্ষয়-ক্ষতি না হয় সে লক্ষ্যে একটির ওপর কয়েকটি রাখা কনটেইনার নামিয়ে রাখা হবে। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ‘সাইক্লোন ডিজেস্টার প্রিপার্ডনেস এন্ড পোর্ট সাইক্লোন রিহ্যাবিলেটেশন প্ল্যান ১৯৯২ অনুযায়ী বন্দর চেয়ারম্যান নিজস্ব এলার্ট-৩ জারি করেছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৫-৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখালে এলার্ট-৩ জারি হয়ে যায়। বন্দর চ্যানেল, বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি জাহাজ, মূল জেটি ও টার্মিনালের কার্গো, কনটেইনার, হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট রক্ষায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানলে যাতে ক্ষয়-ক্ষতি কমানো যায় সে লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করেছে। নৌ-বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর হচ্ছে ০৩১-৭২৬৯১৬। বন্দরের অন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বরগুলো হচ্ছে ০৩১-২৫১৭৭১১, ০৩১-২৫১০৮৬৬ ও ০৩১- ২৫১০৮৬৯।

মোংলা : ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে মোংলায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে, বৃষ্টিও হচ্ছে। মোংলা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। শুক্রবার সকাল থেকে মোংলা বন্দরে, উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভায় কন্টোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আকাশ মেঘাছন্ন ও সাগর উত্তল। মোংলা বন্দর ও বন্দরে অবস্থানরত সব বাণিজ্যিক জাহাজ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। খোলা হয়েছে তিনটি কন্ট্রোল রুম। বন্দরে মেশিনারি, ক্লিংকার, সার, জিপসাম, পাথর, সিরামিক ও কয়লাসহ দেশি-বিদেশি মোট ১৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত মান্নান জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় উপজেলার সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছি। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৬৬টি ইউনিটের ৯৯০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।


বরগুনা : বরগুনার পাথরঘাটায় সাইক্লোন বুলবুলির জন্য সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ুন কবির বুলবুলির সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। এ ছাড়া তিনি সব ইউনিয়ন পরিষদে প্রস্তুতিমূলক সভা, আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন নেওয়ার পরামর্শ প্রদান, সাগরে মাছ ধরার ট্রলারসমূহ উপকূলে ফেরত আনার ব্যবস্থা, মেডিকেল টিম গঠনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।


নোয়াখালী : নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের মোকাবেলায় শুক্রবার বিকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীনের সভাপতিত্বে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জানানো হয়, উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। বিকাল থেকে উপকূলীয় এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকরা সতর্কীকরণমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ৪নং বিপদ সংকেত পতাকা ওঠানো হয়েছে।


ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় ৪১৬ ইউনিটের ৬ হাজার ২৪০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের প্লাবিত এলাকাসমূহের লোকজনদের সরিয়ে আনতে উপকূলীয় তিন উপজেলায় ৩৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ১১টি মেডিকেল টিম প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ওষুধসহ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় প্রতি উপজেলায় ২০০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, ৩০০ টন চাল ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য মজুদ রাখা হয়েছে।

সুত্রঃ সময়ের আলো ।