চেক ডিজঅনারের মামলা দায়ের পদ্ধতি

চেক ডিজঅনারের মামলা দায়ের পদ্ধতি

আদলত ডেস্ক ।।

আমাদের সকলেরই চেক ডিজঅনারের মামলা দায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু না কিছু ধারনা থাকা উচিত।

কেননা এ আইনে মামলা দায়েরের পদ্ধতি একটু ভিন্ন । আমাদের দেশে চেক ডিজঅনারের মামলার পদ্ধতি সম্পর্কে বহু ভুল ধারণা রয়েছে। ফলে দেখা যায় পদ্ধতিগত কারণে অনেকের মামলার অধিকারই নষ্ট হয়ে যায়। চেকের মামলা করতে ৩ (তিন) বার চেক ডিজঅনার করাতে হয় মর্মে একটি ভুল ধারণা আমাদের দেশে সর্বসাধারণে প্রচলিত রয়েছে। । এটা একটা প্রচলিত নিয়মে পরিনত হয়েছে। যা একটা অত্যন্ত ভুল পরামর্শ। প্রকৃত পক্ষে আইনে এ ধরণের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এ ব্যাপারে এন.আই এ্যাক্টের বিধান মতে চেক ৬ মাসের মধ্যে যেদিন ডিজঅনার হবে সে দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে লিগ্যাল ডিমান্ড নোটিশ প্রদানের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি তার কোন ঋণ বা দায় হতে অব্যাহতি পেতে তার ব্যাংক একাউন্ট হতে পাওনাদার ব্যক্তিকে কোন পরিমাণ টাকা প্রদানের জন্য চেক কাটেন বা ইস্যু করেন কিন্তু চেকটি নগদায়নের জন্য উপস্থাপন করা হলে ব্যাংক কর্তৃক চেকটি ডিজঅনার হয়ে ফেরত আসে তাহলে নেগোশিয়েবল ইনষ্ট্রুমেন্ট এ্যাক্টের ১৩৮ ধারার বিধান অনুযায়ী দেনাদারের বিরুদ্ধে ফৌজদারী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে সরাসরি মোকদ্দমা দায়ের করতে হয়। ১৪০ ধারায় ফার্মের অংশীদার ও কোম্পানীর সংশ্লিষ্ট পরিচালকগণ চেক প্রতারণার মামলায় আসামী হবেন।
চেক ডিজঅনারের মামলায় কতিপয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়:-
চেকের মেয়াদ: চেকে প্রদত্ত তারিখ হতে এর মেয়াদ ৬ (ছয়) মাস। এ ছয় মাসের মধ্যে কমপক্ষে একবার কিংবা সুষ্পষ্ট কারণে একাধিকবার উক্ত চেক নগদায়নের জন্য উপস্থাপন করা যেতে পারে। নূন্যতম ১ বার ডিজঅনার হওয়ার কথা বলা হয়েছে বেশী কতবার তা সীমা বর্ণিত না হলেও ৬ মাসের মধ্যে যতবার ইচ্ছা করা যায়। তবে এর যথেষ্ঠ কারণ থাকতে হবে। কোন অজুহাত ছাড়া বার বার চেক ডিজঅনার করা যাবে না।
যে দিন চেকটি ডিজঅনার হয়েছে সে তারিখ থেকে বা সর্বশেষ ডিজঅনারের তারিখ থেকে ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেক প্রদানকারী ব্যক্তি বা ফার্মকে চেকের টাকা পরিশোধের জন্য ফেরৎ রশিদ সহ রেজিষ্ট্রার্ড লিগ্যাল ডিমান্ড নোটিশ প্রদান করতে হবে।
ধারকের পক্ষে তার আইনজীবী কিংবা চেকটির ধারক (হোল্ডার) নিজেও উক্ত নোটিশ দিতে পারেন। তবে এখানে সতর্ক থাকতে হবে যেন নোটিশটির আইনগত ত্র“টি না থাকে। কেননা এটি পরবর্তীতে মামলা দায়েরের ভিত্তি হবে। তাই চেকের মামলা সম্পর্কে অভিজ্ঞ আইনজীবী হতে পরামর্শ গ্রহণ করা উত্তম। বর্তমান সংশোধিত বিধান মতে ৩ ভাবে নোটিশ দেয়া যায়- (১) সরাসরি নোটিশ হস্তান্তরের মাধ্যমে (২) রেজিঃ ডাক যোগে লিখিত নোটিশ (৩) দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে। নোটিশে চেকের উল্লেখিত টাকা পরিশোধের জন্য চেক প্রদানকারী ব্যক্তি কিংবা ফার্মকে নোটিশ প্রাপ্তির দিন হতে টাকা আদায়ের জন্য ৩০ (ত্রিশ) দিন সময় দিতে হবে। দেনাদারের সর্বশেষ জানা সঠিক ঠিকানায় নোটিশ দিলে তা প্রাপক গ্রহণ না করলে, ফেরত আসলে/ প্রত্যাখান করলে তাতে মামলার কোন ক্ষতি হবে না। তবে আইনের বিধান হচ্ছে লিখিতভাবে নোটিশ দিতেই হবে এবং নোটিশে প্রাপককে টাকা আদায়ের জন্য নোটিশ প্রাপ্তির দিন হতে ৩০ (ত্রিশ) দিন সময় দিতে হবে। এর আগে মামলা করা যাবে না। নোটিশ গ্রহণ বা প্রত্যাখানের দিন থেকে উক্ত সময় গননা হবে।
নোটিশটি গৃহীত কিংবা প্রত্যাখান হওয়ার তারিখ হতে ১(এক) মাস অতিবাহিত হওয়ার পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সি,আর, সংশ্লিষ্ট ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।
১৩৮ ধারার সীমাবদ্ধতা: নেগোশিয়েবল ইনষ্ট্রুমেন্ট এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারা শুধু মাত্র ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। চেক ডিজঅনারের মামলায় সঠিক সময়ে চেক ডিজঅনার না করা, সঠিক সময়ে নোটিশ প্রেরণ না করা ও সঠিক সময়ে আদালতে নালিশ দায়ের না করায় মামলাটি প্রাথমিকভাবে খারিজ হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ বিজ্ঞ আদালত মামলাটি এ সকল কারণে আমলে গ্রহণ না করতে পারেন। নেগোশিয়েবল ইনষ্ট্রুমেন্ট এ্যাক্টের ১৩৮ ধারার মামলায় উল্লেখিত সময় বা দায়েরের মেয়াদ কোন অবস্থাতেই কিংবা যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে হ্রাস বৃদ্ধি করা যায় না।
১৩৮ ধারায় চেক ডিজঅনারের মামলায় অপরাধীর শাস্তি হলো সর্বোচ্চ এক বৎসর মেয়াদের যে কোন মেয়াদে কারাদণ্ড অথবা চেকে বর্ণিত অর্থের তিনগুণ পর্যন্ত পরিমাণ অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ড প্রদান।