জমজ বাছুর জন্ম দেবে গাভী।। নতুন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি শিগগির মাঠপর্যায়ে

জমজ বাছুর জন্ম দেবে গাভী।। নতুন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি শিগগির মাঠপর্যায়ে

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

ভ্রূণ স্থাপন প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি গাভীর গর্ভ থেকে জোড়া বাছুর উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট। ইনভারট্রো অ্যামব্রায়ো প্রডাকশন বা আইভিপি প্রযুক্তিটি অচিরে মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আশা করছেন গবেষকরা। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথুরাম সরকার বলেন, জোড়া গরু উৎপাদনে গত বছর আমরা সাফল্য পেয়েছি। এটা গবেষণার বিষয়। এর অগ্রগতি আছে। তবে এটা নিশ্চিত যে, আমরা জোড়া বাছুর জন্মানোর প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি। 

দুই বছর আগে আইভিপি প্রযুক্তির মাধ্যমে একটি গাভী থেকে দুটি বাছুর জন্মানোতে সফল হন গবেষকরা। এরপর গত বছর আরও একটি গাভী থেকে জোড়া বাছুরের জন্ম দেওয়া হয়। মাঠপর্যায়ে ভ্রূণ স্থাপনে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জামের স্বল্পতা ছিল। তবে এখন তা-ও কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেছে বলে জানিয়েছেন এক গবেষক।

ইনস্টিটিউটের নিজস্ব তহবিল থেকে গবেষণার খরচ মেটানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকদলের প্রধান ড. গৌতম কুমার দেব। চার বছরের টানা গবেষণার ফলে তারা এ সাফল্য অর্জন করেছেন। কবে নাগাদ এই প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে আগামী বছরের প্রথম দিকে আমরা কয়েকজন খামারির মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে যাব। জোড়া বাছুর জন্ম দেওয়ার ব্যাপারটাও আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। অনেক ছোট ছোট যন্ত্রপাতি আছে, যা বিদেশ থেকে আনতে হয়। সেগুলো আনার চেষ্টা করছি।

আইভিপি প্রযুক্তিতে জন্মানো বাছুরগুলো বর্তমানে পরিণত বয়সে পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এদের এখন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সময় চলে এসেছে। তবে এদের মধ্যে ভ্রূণ স্থাপন করা হয়নি।

গবেষক গৌতম কুমার দেব বলেন, এ প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে ব্যবহারের জন্য দাতা গাভী থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ এবং ভ্রূণ ক্রায়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তির ব্যবহার প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন হবে কোনো দুধেল গাই বা উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের গাভী। আমরা প্রথমে ওই গাভী থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করব। সেই ডিম্বাণু ল্যাবে পরিপক্ব, নিষিক্তকরণ এবং কালচার শেষে তা ভ্রূণে পরিণত করা হয়। সাতদিন ল্যাবে থাকার পর অপেক্ষাকৃত দুর্বল বা দুধ কম দেয় এমন গাভীর জরায়ুতে তা স্থাপন করা হয়। এভাবে নির্ধারিত সময়ে ভ্রূণ বেড়ে ওঠে। কম-বেশি ১০ মাসের মধ্যে সেই গাভী থেকে দুটি বাছুর পাওয়া যায়।

তবে জোড়া বাছুর উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণার সাফল্য সম্পর্কে এখনও অবগত নন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেন, আমি এই দপ্তরে নতুন এসেছি। বিষয়টি সম্পর্কে তেমন জানা নেই। খোঁজ নিয়ে কী করা যায় দেখব।

বিবিসি বাংলা জানায়, ড. গৌতমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার গাভী প্রজনন করানো যায়। দেশে গরুর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। গবাদি পশুর বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ-এমন খবর এসেছিল গত বছরের শুরুতে। তবে গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল মিলিয়ে গবাদি পশু উৎপাদনে বাংলাদেশ তখন বিশ্বে বারোতম অবস্থানে ছিল।