জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে জিতল বাংলাদেশ

জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে জিতল বাংলাদেশ
জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে জিতল বাংলাদেশ

রাজু আহাম্মেদ, ঢাকা।।

আলোর রেখা ফুটল অবশেষে , টেস্ট ক্রিকেটে পরাজয়ের দুষ্টুচক্র ভেঙে বেরিয়ে এলো বাংলাদেশ। সিরিজের একমাত্র টেস্টে মঙ্গলবার সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ইনিংস এবং ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে মুমিনুল হকের দল। মুশফিকুর রহিম আর দলপতি মুমিনুল হকের দুর্দান্ত ব্যাটিং প্রদর্শনীর পর নাঈম হাসান আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণি জাদুতে টানা ছয় টেস্ট হারের পর পরম আরাধ্য জয় দেখল টাইগাররা।
শক্তি-সামর্থে অনেকটাই পিছিয়ে জিম্বাবুয়ে, তাদের বিপক্ষে জয়টা ছিল প্রত্যাশিত। সেটা নিয়ে তাই খুব বেশি উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা নেই টাইগার শিবিরে। তবে স্বস্তি আছে। পরাজয়ের দুষ্টুচক্র ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারার স্বস্তি। স্বস্তি দিচ্ছে জয়ের ব্যবধানটাও। ২০০০ সালে টেস্ট আঙিনায় পা রাখার পর এর আগে একবারই ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ২০১৮ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস এবং ১৮৪ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা।
এ পর্যন্ত ১১৯টি টেস্ট খেলা বাংলাদেশের ওটা ছিল এই সংস্করণে ১৩তম জয়। এরপর ১৪তম জয়ের দেখা পেতে প্রায় বছর দেড়েকের অপেক্ষা। মাঝে ছয়টি টেস্ট খেলেছে তারা, হেরেছে প্রতিটিতেই। পাঁচটি আবার ইনিংস ব্যবধানে। এবার জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েই দুঃসময়ের বলয় থেকে বেরিয়ে এলো টাইগাররা। ভারত এবং পাকিস্তানের কাছে তিন টেস্টে হারের পর চতুর্থ ম্যাচে এসে ‘অধিনায়ক মুমিনুল’ পেলেন প্রথম জয়ের স্বাদ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সব মিলে সপ্তম টেস্ট জয়ের মঞ্চটা তৃতীয় দিনেই তৈরি করে রেখেছিল বাংলাদেশ। অতিথিদের ২৬৫ রানের জবাবে ৫৬০ রান তুলে প্রথম ইনিংসে ২৯৫ রানের লিড নেয় মুমিনুলের দল। এরপর শেষ বিকালে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। তখনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, এই টেস্টে স্বাগতিকদের দ্বিতীয়বার ব্যাট হাতে নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। দুই স্পিনার নাঈম আর তাইজুলের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর প্রয়োজন পড়েওনি। সকাল থেকেই মিরপুরের আকাশ ছিল মেঘলা। 

হারের দুষ্টুচক্র ভাঙল বাংলাদেশ
চারপাশ ছিল ঘোলাটে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল ফ্লাডলাইট। এরপরও নাঈম আর তাইজুলের ঘূর্ণিতে চোখে অন্ধকারই দেখেছে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। ঠিকঠাক লড়াইটাও গড়তে পারেনি ক্রেইগ আরভিনের দল। প্রথম সেশন ভালো-মন্দের মিশেলে কাটিয়ে দিলেও দ্বিতীয় সেশনেই অলআউট তারা। টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারে মতো ৫ উইকেট নিয়ে নাঈম আর ৪ উইকেট পাওয়া তাইজুল ১৮৯ রানেই গুটিয়ে দেন জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংস।
ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছেন নাঈম। তবে এই তরুণ অফস্পিনারকে ছাপিয়ে ম্যাচসেরার খেতাব নিজের করে নিয়েছেন হার না মানা ২০৩ রানের ইনিংস খেলা মুশফিকুর রহিম। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরি আর প্রথম জয়ে টেস্টটা রাঙিয়েছেন মুমিনুল। তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত আর লিটন দাস ব্যাট হাতে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ রাহী বুঝিয়ে দিয়েছেন, টেস্টে দলের পেস আক্রমণের নেতা এখন মানতে হবে তাকেই।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বরাবরই সফল তাইজুল, ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছেন ৭৮ রান খরচায়। ২ উইকেটে ৯ রান নিয়ে মঙ্গলবার ব্যাটিং শুরু করা জিম্বাবুয়েকে প্রথম ধাক্কাটা তাইজুলই দিয়েছেন। দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন ওপেনার কেভিন কাসুজাকে। আস্থার সঙ্গে খেলতে থাকা অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেলর ভুল করে বসেন নাঈমকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে, স্কয়ার লেগে তার ক্যাচটা তাইজুলই তালুবন্দি করেন।
১৭ রান করা টেলর ফিরে যাওয়ার পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন অধিনায়ক আরভিন আর সিকান্দার রাজা। তাদের ৬০ রানের জুটি কিছুটা আশার সঞ্চার করেছিল জিম্বাবুয়ে শিবিরে, সেই আশায় জল ঢেলে দেন মুমিনুল। তার সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে ফেরেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান আরভিন। ৪৩ রান করে দ্বিতীয় ইনিংসেও জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১ রান টিমিসেন মারুমার। ৩৭ রান করে তাইজুলের বলে মুশফিকুর রহিমদের দুর্দান্ত এক ক্যাচে আউট হয়ে রাজা ফেরার পর মারুমাই কিছুটা লড়াই করেছেন।
তাইজুলের বলে লংঅনে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে রেগিস চাকাভার ১৮ রানের ইনিংসের সমাপ্তি টানের তামিম ইকবাল। এরপর আইন্সলে এনডিলভু আর মারুমাকে নিজের শিকার বানিয়ে ৫ উইকেটের কোটা পূরণ করেন নাঈম। এরপর চার্লটন টিসুমাকে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলে ম্যাচের ইতি টেনে দেন তাইজুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
জিম্বাবুয়ে : ২৬৫ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৭.৩ ওভারে ১৮৯ (কাসুজা ১০, টেলর ১৭, আরভিন ৪৩, রাজা ৩৭, মারুমা ৪১, চাকাভা ১৮; নাঈম ৫/৮২, তাইজুল ৪/৭৮)
বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংসে ৫৬০/৬ ডিক্লে.
ফল : বাংলাদেশ ইনিংস এবং ১০৬ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : মুশফিকুর রহিম