দিন দিন বাড়ছে এটিএম কার্ড জালিয়াতি

দিন দিন বাড়ছে এটিএম কার্ড জালিয়াতি

শাহীন হাওলাদার ।।

দেশের অধিকাংশ ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রাজধানীসহ সারা দেশে এটিএম জালিয়াতির ঘটনা নতুন কিছু নয়। এটিএম জালিয়াতি রোধে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিকার না থাকায় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, কিছু কিছু ব্যাংক ভেন্ডর থেকে  সফটওয়্যার নিচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বেড়েছে। সে সঙ্গে এটিএম জালিয়াতিতে ব্যাংকারদের দক্ষতা না থাকা ও ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার জড়িত থাকায় এটিএম জালিয়াতি ক্রমেই বাড়ছে। এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে না পারলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাংকিং খাত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো পরিপালন করতে হবে। যেসব ব্যাংক পরিপালন করছে না তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখনই উচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর আইটি প্রোডাক্ট বা সফটওয়্যার কেনার আগে তার কোয়ালিটি ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। সে সঙ্গে কর্মী নিয়োগের সময় আইটিতে জ্ঞান আছে কি না যাচাই করতে হবে। আবার ব্যাংকগুলোতে কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এটিএম জালিয়াতির সহায়তা করার ঘটনাও রয়েছে। সুতরাং জালিয়াতি রোধে ব্যাংকগুলোর সতর্কতা বাড়ানো জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে বেসরকারি ব্যাংকের এটিএম বুথে (১১ ফেব্রুয়ারি-১৬ থেকে এ পর্যন্ত) ৩৬ জন গ্রাহকের হিসাব থেকে ২১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসালম বলেন, ব্যাংকগুলোর সাইবার নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে এটিএম বুথের নিরাপত্তায় আমাদের পক্ষ থেকে মাস্টার সার্কুলার জারি করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিজস্ব সিকিউরিটির জন্য এসব নির্দেশনাগুলো মেনে চললেই হ্যাকার কিংবা প্রতারক চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

তিনি বলেন, ভারত আইটি খাতে দক্ষ হওয়া সত্বেও বিভিন্ন সময় হ্যাংকিয়ের মাধ্যমে এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। সুতরাং আমাদের তো দুয়েকটি বিষয় হতেই পারে। সুতরাং এটিএম জালিয়াতি রোধে ব্যাংকের সুবিধার্থে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার অপেক্ষায় না থেকে নিজেদেরই উদ্যোগী হয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অন্যদিকে বিআইবিএম (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট) সূত্রে জানা গেছে, বড় সাইবার হামলা মোকাবেলায় অধিকাংশ ব্যাংকের প্রস্তুতি নেই। প্রস্তুতি থাকলেও কিছু ব্যাংকের আংশিক প্রস্তুতি রয়েছে। জালিয়াতির ঘটনার মধ্যে অধিকাংশ ঘটনাই এটিএম কার্ডের মাধ্যমে ঘটে থাকে। এর পরই রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং। প্রায় ২৫ শতাংশ জালিয়াতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঘটেছে। প্রায় ১৫ শতাংশ এসিপিএস ও ইএফটির মাধ্যমে জালিয়াতি ঘটছে ব্যাংকিং খাতে। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১২ শতাংশ, ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারে ৩ শতাংশ, সুইফট ও অন্যান্য মাধ্যমে ঘটেছে ২ শতাংশ।

বেসরকারি এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটে। হ্যাকাররা সবসময় সাইবার অ্যাটাকের জন্য প্রস্তুত। ব্যাংকিং খাত এ ঝুঁকির বাইরে নয়। এজন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে বুঝিয়ে আইটি খাতে বাজেট বাড়াতে হবে। এতে ব্যাংকের নিরাপত্তা জোরদার হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে প্রথম অটোমেটেড টেলার মেশিন যা সংক্ষেপে এটিএম মেশিন নামে পরিচিত তা চালু করা হয়। এরপর ২০০০ সালের পর দ্রুত এ সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ মুহূর্তে সারা দেশে ১০ হাজারেরও বেশি এটিএম বুথ রয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি বুথই ডাচবাংলা ব্যাংকের।

অন্যদিকে দেশে গত কয়েক বছর ধরে ক্যাশ মেশিনের সঙ্গে স্কিমিং যন্ত্র বসিয়ে কার্ড জালিয়াতি, পিন ও পাসওয়ার্ড জালিয়াতির অভিযোগ শোনা গেছে। এ ব্যবস্থায় এটিএম মেশিনের সঙ্গে ছোট্ট একটি যন্ত্র জুড়ে দেওয়া থাকে, যার মাধ্যমে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের সব তথ্য কপি হয়ে যায়, পরে যা ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কোনো অ্যাকাউন্টের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া যায়। এ ধরনের কয়েকটি ঘটনার পর ২০১৬ সালে গ্রাহকের কার্ডের সুরক্ষা দিতে প্রতিটি এটিএম বুথে অ্যান্টি স্কিমিং ও পিন শিল্ড ডিভাইস বসানো বাধ্যতামূলক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।