দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে দেশের সব ভূমি অফিসে - টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে দেশের সব ভূমি অফিসে  - টিআইবি
দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে দেশের সব ভূমি অফিসে - টিআইবি

দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে দেশের সব ভূমি অফিসে । যে কোনো ভূমির নিবন্ধনের জন্য ঘুষ দিতে হয় এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা। আর এসব নিয়ম বহির্ভূত অর্থ সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের সবাই পদ অনুযায়ী ভাগ পান। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা চালিয়ে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল সোমবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমি অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। আর্থিক যে অনিয়ম হচ্ছে বা নিয়মবহির্ভূত যে অর্থের লেনদেন হচ্ছে সেটা এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। উদ্বেগের বিষয়, পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হচ্ছে। তিনি বলেন, ভূমি অফিস এমন একটি খাত, যেখানে এমন কোনো জায়গা নেই যে সেবা পেতে দুর্নীতি-অনিয়মের স্বীকার হতে হয় না। এটা খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ অনিয়মের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। বিশেষ করে ভূমি অফিসের লোকবল নিয়োগ, পদোন্নতি বা বদলির ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়। এটা আগেও ছিল, এখনও আছে। দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে এ খাতকে পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশন করার প্রতি জোর দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবি তার গবেষণা প্রতিবেদন উল্লেখ করে, ‘অনেক ক্ষেত্রে নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ আদায় যোগসাজশের মাধ্যমে হয় এবং সঙ্গে সাব রেজিস্ট্রার, সহকারী সাব রেজিস্ট্রার, মোহরার, নকলনবিশ ও দলিল লেখকদের একাংশ জড়িত। অভিযোগ রয়েছে এ অর্থের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সবার মধ্যে পদ অনুযায়ী ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
টিআইবির দাবি, দলিল নিবন্ধনের জন্য দলিল প্রতি এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা, দলিলের নকল উত্তোলনের জন্য এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকা ও দলিল লেখক সমিতিকে বাধ্যতামূলক চাঁদা পাঁচশ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এ অর্থের পরিমাণ আবার এলাকাভেদে বাড়ে।
এছাড়া নিবন্ধন ফি পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণের মধ্যেও রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও পেয়েছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে জমির মূল্য কম দেখিয়ে নিবন্ধন করা হয়। আবার ব্যাংক লোন পেতে জমির মূল্য বাড়িয়েও নিবন্ধন করার মতো ঘটনাও ঘটে।
ভূমি অফিসগুলোর দৈন্যদশার কথাও তুলে এনেছে টিআইবি। দুর্নীতি হয় প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও। এ অর্থে টিআইবি আরও দাবি করে, সাব-রেজিস্ট্রারকে বদলি হতে হলে তিন থেকে ২০ লাখ টাকা গুনতে হয়। এলাকভেদে এ অর্থের পরিমাণও বাড়ে। অবস্থায় টিআইবি সরকারের কাছে বেশকিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে। এগুলো হলো- কাজের গতি বাড়ানো, অবকাঠামো, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিতকরণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া, পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন করা, ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপন ইত্যাদি।
বিদেশিদের শেখানো বুলি আওড়ায় টিআইবি- ডেপুটি স্পিকার : এদিকে সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া অভিযোগ করে বলেন, দুর্নীতিবিরোধী গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বিদেশিদের শেখানো বুলি আওড়ায়। সংসদের আইপিডি সম্মেলন কক্ষে গতকাল এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বিদেশিরা যেভাব বুলি শিখিয়ে দেয় তারা সেভাবে তা আওড়ায়। আমরা (সংসদ সদস্য) সেভাবে করি না। গত ২৮ অগাস্ট দশম জাতীয় সংসদের ওপর টিআইবি পরিচালিত ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দশম সংসদের প্রথম থেকে শেষ অধিবেশন (মোট ২৩টি) পর্যন্ত কোরাম সঙ্কটের কারণে মোট ১৯৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট অপচয় হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ১৬৩ কোটি ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।
২০১৪ সালের জানুয়ারির প্রথম থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করে টিআইবি। পরে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ টিআইবির ওই প্রতিবেদনকে ‘উদ্দেশ্যমূলক’ বলেন। ফজলে রাব্বী বলেন, কিছুদিন আগে টিআইবি সংসদ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। উনারা উনাদের মত করে কথা বলেন। উনাদের সম্পর্কে আমরা যদি বলি তাহলে তো মাথায় হাত পড়বে। প্রস্তাবিত ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন-২০১৯’ নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় ডেপুটি স্পিকার টিআইবির কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে কত টাকা বেতন নেন? আমরাও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে আইন পাস করি। কারও দয়ার টাকা নিয়ে নয়। জনগণের টাকায়, তাদের রায় নিয়ে।’