প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের যে তথ্য সামনে এলো

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের যে তথ্য সামনে এলো
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের যে তথ্য সামনে এলো

পোস্টকার্ড ডেস্ক।।

করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জন। রোববার মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৬ জনই ভাইরাসের উৎসস্থল হুবেই প্রদেশের। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত সাড়ে তিনশ’ জন।  

নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে এখনও চিকিৎসা বিজ্ঞানে রহস্য হয়ে রয়েছে । তবে এবার এসব নিয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে  চীনের উহানের জিনিতান হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উহানের ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া প্রথম ৯৯ জন রোগী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে ল্যানসেন্ট মেডিকেল জার্নাল।

ফুসফুসে আক্রমণ
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৯৯ জন রোগীর সবার নিউমোনিয়া ছিল- তাদের ফুসফুসে প্রদাহ এবং ফুসফুসের অ্যালভিওলাই, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যেসব প্রকোষ্ঠের মধ্য দিয়ে রক্তে অক্সিজেন মেশে, সেগুলোতে পানি জমে ছিল।

অন্যান্য উপসর্গ
৮২ জনের জ্বর, ৮১ জনের কফ, ৩১ জনের শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, ১১ জনের শরীর ব্যথা, ৯ জনের প্রলাপ বকা কিংবা স্মৃতি বিভ্রম, ৮ জনের মাথা ব্যথা, ৫ জনের গলা ব্যথা।

প্রথম মৃত্যু
করোনাভাইরাসে প্রথম যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে তারা দেখতে স্বাস্থ্যবানই ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধূমপানের কারণে তাদের ফুসফুস আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে।

প্রথম জন ৬১ বছরের বৃদ্ধ হাসপাতালে এসেছিলেন প্রচণ্ড নিউমোনিয়া নিয়ে। তিনি তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন, অর্থাৎ তার ফুসফুস শরীরকে জীবন্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারছিল না। ভেন্টিলেটরে রাখার পরেও তার ফুসফুস বিকল হয়ে পড়ে এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ১১ দিন পর তার মৃত্যু হয়।

দ্বিতীয় জন, ৬৯ বছর বয়সী বৃদ্ধেরও তীব্র শ্বাসকষ্ট ছিল। তাকে কৃত্রিম ফুসফুস বা একস্ট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন (ইসিএমও বা একমো) দেওয়া হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। সিভিয়ার নিউমোনিয়া ও রক্তচাপ কমে সেপটিক শকে তার মৃত্যু হয়।

অন্তত ১০ শতাংশের মৃত্যু
২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই ৯৯ জন রোগীর মধ্যে ৫৭ জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ৩১ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। আর ১১ জন মারা গেছেন। তার অর্থ এই নয় যে, এই রোগে মৃত্যুর হার ১১ শতাংশ। এখনো অনেকে হাসপাতালে থাকায় তাদের কেউ কেউ মারাও যেতে পারেন, আবার অনেকের উপসর্গ মৃদু হওয়ায় তারা হয়তো হাসপাতালেই যায়নি।

মার্কেটকর্মী
২০১৯-এনসিওভি নামে এ করোনাভাইরাসের সঙ্গে উহান শহরের একটি সি ফুড মার্কেটের যোগাযোগ পাওয়া যায়। ওই বাজারে মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ, সামুদ্রিক প্রাণীসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বিকিকিনি হতো। গত ১ জানুয়ারি এই বাজারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

প্রথম আক্রান্ত ৯৯ জনের মধ্যে ৪৯ জন এই মার্কেটের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ৪৭ জন সেখানে কাজ করতেন, হয় দোকানের ম্যানেজার বা কর্মী ছিলেন তারা। দুজন ছিলেন ক্রেতা, যারা সদ্যই ওই বাজার ঘুরে এসেছিলেন।

মধ্যবয়সীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে
ওই ৯৯ রোগীর অধিকাংশই মধ্যবয়সী, তাদের গড় বয়স ৫৬ এবং ৬৭ জনই পুরুষ। সাম্প্রতিক তথ্যেও নারীর চেয়ে পুরুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি দেখা গেছে। চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেন্টার বলছে, একজন নারীর বিপরীতে ১ দশমিক ২ জন পুরুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এই ব্যবধানের পেছনে দুই ধরনের সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে- করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরুষের গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবং প্রাদুর্ভাবের প্রথম ধাপে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণে পুরুষের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমণের সুযোগ বেশি থাকা।

উহানের জিনিতান হাসপাতালের চিকিৎসক লি ঝাং বলছেন, নারীদের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা কম হওয়ার পেছনে এক্স ক্রোমোসোম ও সেক্স হরমোনের ভূমিকা থাকতে পারে। এগুলো রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আগে থেকে অসুস্থতা
এই ৯৯ জনের বেশির ভাগই আগে থেকে অসুস্থ ছিলেন। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় সহজেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ৪০ জন আগে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর ১২ জনের ছিল ডায়াবেটিস।

মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে চীন থেকে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান। ফিলিপাইনসহ অনেক দেশই এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন থেকে আগতদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক দেশের এয়ারলাইন্স চীনগামী ফ্লাইটও বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর সেটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ২০টি দেশে। চীনের বাইরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ফিলিপাইনে।