প্রেমিককে নিয়ে স্বামী-সন্তানকে জবাই করল স্ত্রী হাছিনা

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

প্রেমিককে নিয়ে স্বামী-সন্তানকে জবাই করল স্ত্রী হাছিনা

নিমতলায় ৩ তলা ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষ বাবা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের একদিন না পেরুতেই খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।

রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সংবাদ সম্মেলনে খুনের রহস্য জানিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, স্ত্রী হাছিনা আক্তারের পরকীয়ার বলি হলেন দিনমজুর স্বামী মো. আবু তাহের ও চার বছরের শিশু কন্যা বিবি ফাতেমা।

তিনি আরও বলেন, নিহত আবু তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তারের সঙ্গে শনিবার (২০ অক্টোবর) সকালে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সময় তাহেরের মেয়ে বিবি ফাতেমা সব দেখে ফেলে। এ সময় ফতেমা বিষয়টি তার বাবা বাড়ি ফিরলে জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে কথিত প্রেমিক মাইন উদ্দিন ও হাছিনা মিলে শিশুটিকে জবাই করে হত্যা করে।

কিছুক্ষণ পর আবু তাহের বাড়িতে ফিরলে তাকেও দু’জনে জোরপূর্বক আটকে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে মাইন উদ্দিন ও হাছিনা বেগম।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নগরীর বন্দর থানার নিমতলা এলাকায় স্থানীয় বুচুইক্যা কলোনির ওই বাসা থেকে বাবা মেয়ের লাশ উদ্ধারের পর স্ত্রী হাছিনা, হাছিনার বোন, বোনের স্বামী ও দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।

হাছিনার দেওয়া তথ্যে তার কথিত প্রেমিক মাইন উদ্দিনের অবস্থান শনাক্ত করে নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত আবু তাহেরের ভাই নুরুল আলম বাদি হয়ে তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তার ও প্রতিবেশী মাইন উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পরকীয়ার বিষয়টি মাথায় নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রথম থেকেই পুলিশের ধারণা ছিলো পরকীয়ার কারণে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী হাছিনা আক্তার পরিকল্পিতভাবে স্বামী ও শিশু সন্তানকে হত্যা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সিএমপির বন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, লাশ উদ্ধারের পর গলায় ছুরিকাঘাতের দাগ ও রক্তমাখা ছুরি উদ্ধারে প্রথম থেকেই এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ধরে নিয়েই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তাই স্ত্রী হাছিনা আক্তারসহ চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।

আটকের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী হাছিনা আক্তার একেক সময় একেরকম তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এতে পুলিশের আরো সন্দেহ হলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পরকীয়াকে কেন্দ্র করে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। এছাড়া স্ত্রী হাছিনা আক্তারের মোবাইল ফোনে খুনের দিন এবং এর দুইদিন আগ পর্যন্ত কাদের সঙ্গে বেশি কথা হয়েছে তা চিহ্ণিত করে খুনের কারণ এবং খুনের অবস্থান অনেকটা নিশ্চিত হয় পুলিশ।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী রোববার ভোররাতে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হাছিনা আক্তারের কথিত প্রেমিক মাইন উদ্দিনকে নোয়াখালী থেকে আটক করার তথ্যটি নিশ্চিত করেন।

প্রতিবেশিদের সূত্র ধরে পুলিশ জানিয়েছেন, হাছিনা মানুষের বাসায় কাজ করতেন। আর স্বামী আবু তাহের গুদাম শ্রমিকের কাজ করতেন। যে গুদামে তাহের শ্রমিকের কাজ করতো সে গুদামের শ্রমিক নেতা ছিলেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার বাসিন্দা মাইন উদ্দিন। তার বাসাও তাহেরের পাশাপাশি হওয়ার সুবাধে মাইনুদ্দিনের সঙ্গে হাছিনার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। মঈনুদ্দিনও বিবাহিত। তার পরিবার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতেই থাকে। সে এখানে একা থাকে।

কয়েকদি আগে হাছিনাকে একটি লাল রঙের শাড়ি উপহার দেন মাইন উদ্দিন। এ শাড়ির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়দিন ধরে আবু তাহেরের সঙ্গে তার হাছিনার ঝগড়া ও পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়।

আরও জানা যায়, গুদাম শ্রমিক নেতা মাইনুদ্দিন মাঝে মাঝে হাছিনার ঘরে আসতো। মাইন উদ্দিনের সাথে অনৈতিক কিছু দেখে ফেলার কারণে তাহের ও তার শিশু কন্যা খুনের শিকার হয়েছে বলে তাদের ধারণা ছিল।

এদিকে ঘটনার পর থেকে গুদাম শ্রমিক নেতা মাইন উদ্দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেলেও থানায় নিয়ে আসা হয় স্ত্রী হাছিনাকে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ মাইন উদ্দিনের অবস্থান নিশ্চিত হয় এবং নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে শনিবার রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর জোন) হামিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘সকালে আবু তাহের ও তার মেয়ে দোকানে নাস্তা করতে যায়। হাসিনা তখন ভবনের মালিকের বাসায় কাজ করতে গিয়েছিল। ওই বাসার কাজের ফাঁকে সে কলসী নিয়ে নিচ থেকে পানি নিতে আসলে মাইন উদ্দিন তাকে ইশারা দিয়ে রুমে নিয়ে যায়। পরে মেয়ে এসে দেখে ফেলার তারা এ হত্যাকাণ্ড দুটো ঘটায়। ঘটনা অন্যখাতে নেওয়ার জন্য সে বাড়িওলার বাসায় পানি দিয়ে নিচে এসে চিৎকার করে বিষয়টি সবাইকে জানান দেয়।’