পেশাজীবীদের করোনায় উদ্বেগ বেশি

পেশাজীবীদের করোনায় উদ্বেগ বেশি
পেশাজীবীদের করোনায় উদ্বেগ বেশি

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

নভেল করোনাভাইরাস এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও শনাক্ত হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী জনমনে চলতে থাকা গুঞ্জনের অবসান ঘটেছে রোববার (৮ মার্চ)।

এদিন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, দুই জন ইতালি ফেরত বাংলাদেশের নাগরিক ও একজন বাংলাদেশের অভ্যান্তরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ তথ্য প্রচারের পর থেকে সব শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। ডাক্তার থেকে শুরু করে রিকশা চালকের মধ্যে এ উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন।

এমনকি চুপ করে বসে নেই সরকার প্রধানও। সোমবার সচিবালয়ে কেবিনেট মিটিংয়ে নির্ধারিত আলোচনার বিষয়বস্তুর বাইরেও করোনায় করণীয় কি সে বিষয় নিয়ে মন্ত্রীদের নিয়ে পৃথক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

যদিও ইতিমধ্যে জনসচেতনতায় সরকারি-বেসরকারি গবেষণা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট মাধ্যম এবং সরসারি তথ্য প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস থেকে প্রতিকার, প্রতিরোধের উপায়ের তথ্য সংশ্লিষ্ট লিফলেট ও স্থির চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে, করোনাভইরাসে কী করবেন, কী করবেন না। আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১ ভাইরাল হয়েছে।

সোমবার (৯ মার্চ) রাজধানী ব্যাংক পাড়া মতিঝিল, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, আদালত পাড়া, স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, শফিংমল, গণপরিবহন, নিত্যপণ্যের বাজার এবং আড্ডারস্থানে চলছে ভাইরাসের তাত্ত্বিক ও কাল্পনিক আলোচনা। সবার মধ্যে বিরাজ করছে এক চাপা আতঙ্ক।

সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, সরকারের ঘোষণা পর থেকে সারাদেশে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা ও একই সঙ্গে হতাশা-ভীতির জন্ম দিয়েছে। সোমবার আদালত পাড়ায় আইনজীবীদের মধ্যে উদ্বেগের চিহ্ন ফুটে উঠেছে।

সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ বলছে, জনসমাগম স্থান এড়িয়ে চলার জন্য। কিন্তু আইন ও বিচার ব্যবস্থা তো একটি রুমে পক্ষে-বিপক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে হয়ে থাকে। করোনা যদি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে বিচার ব্যবস্থাও স্থবিরতা নেমে আসবে।

সব থেকে বেশি সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, সেবাদানকারী পেশাজীবী চিকিৎসা ও এই খাত সংশ্লিষ্টরা। এজন্য হাসপাতাল এলাকাগুলোতে নেয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। তারপরেও যেন উদ্বেগ কাটছে না ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে।

যোগাযোগ করলে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মহসীন আহমেদ জানান, সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ, করোনাভাইরাস সারাবিশ্বে দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবেশি ভারতের পর এখন বাংলাদেশে। এর প্রতিরোধে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে মহামারী আকারে ধারণ করতে পারে। সরকারের প্রতি আন্তরিক আবেদন, এখনো সময় আছে প্লিজ করোনার বিরুদ্ধে জনগণকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলুন।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, করোনা এখন আর চীনের সমস্য নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই বলছেন, করোনাভাইরাসের কারনে দেশের শিল্প উৎপাদন, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য, সরবরাহ ব্যবস্থায় ও সেবাখাতে প্রভাব পড়বে। কারন সরবরাহ ব্যবস্থায় কাঁচামালের সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। এর ফলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।

কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও প্রভাব দেখা দেবে। কাঁচামালের সংকটের কারণে রফতানি খাতেও বিরাট প্রভাব পড়বে। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা মানেই হচ্ছে সেবা খাতেও সংকট দেখা দেবে। দেশের আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংক বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রেও সংকট দেখা দিবে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থায় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে প্রভাব পড়বে।

আর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে বাংলাদেশে বাণিজ্য ক্ষেত্রে এর প্রভাব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। প্রয়োজনে সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এদিকে, সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গনেও চলে করোনাভাইরাসের চুলচেড়া বিশ্লেষণ। বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা কী বলেছে, ভারত কী পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং বাংলাদেশের কী করা উচিৎ।

সব মিলিয়ে সাংবাদিকরা বলছেন, গণসংযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) আতঙ্ক বা গুজব ছড়াচ্ছে কিনা তা নজরদারি জরুরি। একি সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে চলমান সংকট মোকাবেলায় সঠিক তথ্য প্রচার হওয়াও জরুরি। আর জনগণের উচিৎ আতঙ্কিত না হয়ে এর প্রতিকারে বিশেষজ্ঞদের মতামত মেনে চলা।