পশুর হাট নিয়ে চট্টগ্রামে হতাশ  খামারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, ৫ কোটি টাকার রাজস্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় চসিক

পশুর হাট নিয়ে চট্টগ্রামে হতাশ  খামারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, ৫ কোটি টাকার রাজস্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় চসিক
পশুর হাট নিয়ে চট্টগ্রামে হতাশ  খামারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, ৫ কোটি টাকার রাজস্ব নিয়ে দুশ্চিন্তায় চসিক

জসীম চৌধুরী সবুজ , চট্টগ্রাম ।।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবার সবকিছু ওলট-পালট করে দিয়েছে। গড়বড় করে দিয়েছে স্বাভাবিক সব হিসাব-নিকেশ। তেমনি আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি নিয়েও কোনো রকম হিসাব মিলাতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ-ই। যারা কোরবানি দিতেন তাদের অনেকের আয় রোজগার বন্ধ। অনেকের আয় কমে গেছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে ভুগছেন গভীর হতাশায়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার অংশ হিসেবে অনেকে পশু বাজারে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সুপারিশ করেছে চট্টগ্রামসহ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে পশুরহাট না বসাতে। ঈদের আগে পরে এই চার নগর জেলায় যাতায়াতও বন্ধ রাখতে বলেছে কমিটি। এতে দোদুল্যমান অবস্থায় থাকা খামারি ও মৌসুমি পশু ব্যবসায়ীরা দারুণভাবে হতাশ হয়ে পড়েছে। দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) কর্তাব্যক্তিদের কপালে।
চসিক রাজস্ব বিভাগ জানায়, এবার কোরবানি পশুহাট ইজারা দিয়ে আশাতীত রাজস্ব আহরণ হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া ইজারা দরপত্রে প্রত্যাশার চেয়েও কয়েক কোটি টাকা বেশি পাওয়া গেছে। যদি জাতীয় কমিটির সুপারিশ মেনে পশুর বাজার বসতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে তাহলে চসিক নিশ্চিত ৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এবার নগরীতে পশুরহাট বসবে সাতটি। এর মধ্যে তিনটি অস্থায়ী বাজার গত ১৪ এপ্রিল ইজারা দেওয়া হয়। বাকি চারটি অস্থায়ী পশুরহাটের ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন হয় গত ২৯ জুন। কর্ণফুলী পশুহাটের জন্য কোনো দরপত্র জমা পড়েনি। অন্য তিনটি অস্থায়ী হাট হচ্ছে কমল মহাজন হাট, সল্টগোলা বাজার এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন টিকে গ্রুপের খালি মাঠ। ইজারায় যে দর পাওয়া গেছে তাতে বিস্মিত চসিকের কর্মকর্তারা। এই তিনটি অস্থায়ী পশুহাট ইজারা দিয়ে চসিকের প্রত্যাশা ছিল সাড়ে ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের। কিন্তু পাওয়া গেছে ১ কোটি ৮৩ লাখ ২ হাজার ৫২ টাকা। যা গতবারের চেয়ে ১ কোটি ৭০ লাখ ৬৯ হাজার ৫২ টাকা বেশি। গত বছর এই তিনটি হাট ইজারা দিয়ে চসিকের আয় হয়েছিল মাত্র ১২ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
এবারে আশাতীত দর পাওয়ার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে করোনাকালে অস্বাভাবিক সময়ে যদি এত বিপুল রাজস্ব পাওয়া যায় তাহলে গতবার স্বাভাবিক সময়ে কেন এত কম হয়েছিল। এখানে আন্ডারহ্যান্ড লেনদেন ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখার বিষয়টি চলে আসে সামনে।
এবার কর্ণফুলী পশুহাটের জন্য কোনো দরপত্র জমা না পড়লেও এই হাট থেকে গতবার চসিকের আয় ছিল ২ কোটি ৭৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। সিন্ডিকেটের কারণে এবার কোনো দরপত্র জমা পড়েনি বলে সর্বত্র বলাবলি হলেও চসিক বলছে এটির জন্য ফের দরপত্র আহ্বান করা হবে।
চসিকের যে স্থায়ী পশু হাটগুলো রয়েছে তার মধ্যে সাগরিকা ও বিবিরহাট সবচেয়ে বড় পশু বাজার। এগুলো একবছরের জন্য ইজারা দেওয়ার কাজটি ১ বৈশাখেই সম্পন্ন হয়েছে। এতে বিবির হাটে পাওয়া গেছে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং সাগরিকা বাজারের জন্য পাওয়া যায় ৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। পোস্তারপাড় ছাগলের হাটের জন্য পাওয়া গেছে ৭৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এই স্থায়ী পশুহাটগুলোতে সাড়া বছর পশু বিক্রি হলে মূলত কোরবানি ঈদেই হয় বাম্পার বিক্রি। ইজারাদারও দর দেন কোরবানি বাজারকে সামনে রেখে।
চসিক রাজস্ব বিভাগ সূত্র আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এবার জাতীয় কমিটির সুপারিশ মেনে যদি কোরবানির পশুরহাট বসতে দেওয়া না হয় তাহলে স্থায়ী বাজারের ইজারাদারের আয় হবে না। তারা দর অনুযায়ী সিংহভাগ টাকা দেবে না। আবার অস্থায়ী হাটসমূহ থেকে আয়ও বন্ধ হয়ে যাবে। সবমিলিয়ে চসিক ৫ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীর আনাগোনা বাড়ে। অনেকে গ্রুপ করে পশু কেনাবেচা করে বেশ ভালো অঙ্কের অর্থ আয় করেন। এবারও তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। কিন্তু কোরবানি নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম থাকায় তারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। পশুহাট বসতে না দেওয়ার সুপারিশ জানার পর তারা আরও হতাশ হয়ে পড়েছেন।
খামারিরাও আছেন মহাদুশ্চিন্তায়। সারা বছর গরু লালন-পালন করে তারা অপেক্ষা করেন কোরবানি বাজারের জন্য। এবার করোনার কারণে এমনিতেই তারা শঙ্কিত ছিলেন। হাট না বসানোর পরামর্শে তারা আরও হতাশ। অনলাইনে পশু বিক্রির ব্যবসা জমে উঠবে বলে ধারণা করা হলেও অধিকাংশ খামারি এই প্রযুক্তি সুবিধা ব্যবহারে অভ্যস্ত নন বলে জানান ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা।