বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে: একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী 

বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে: একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী 
বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে: একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী 
বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকে: একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী 

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে আরও উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, আমরা বাঙালি। আমাদের সাহিত্য, সংস্কৃতি এটা যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিস্তার লাভ করে সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে একুশে পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, আজকের পৃথিবীতে কোনো দেশ একা চলতে পারে না, সারা বিশ^কে নিয়েই চলতে হয়। তাই অন্য ভাষা শেখাও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তাই বলে নিজের ভাষাকে ভুলে যাওয়া এটা আমাদের জন্য মোটেই ঠিক নয়। ‌ভাষার মর্যাদা আমাদের সব সময় দিয়ে যেতে হবে।

ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভুমিকার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ গড়ে তোলেন। তারই প্রস্তাবে সে সময় ভাষা আন্দোলনের জন্য ছাত্র সমাজকে নিয়ে, অর্থাৎ তখনকার ছাত্রলীগ, তমুদ্দিন মজলিসসহ আরও কিছু প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ছিল, তাদের নিয়ে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এটা ছিল (ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের) ফজলুল হক হলে, ২ মার্চ। সে অনুষ্ঠানের পরেই তারা ঘোষণা দেন ১১ মার্চ হবে ভাষা দিবস। সে ১১ মার্চ থেকেই মূলত ভাষা আন্দোলন শুরু। এরপর থেকে ১১ মার্চ এ ভাষা দিবস হিসেবেও পালন করা হতো।

সে আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে, নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে, সে কথাও স্মরণ করেন তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর এ আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয়ে আপনারা জানতে পারেন তার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে, সেখানে তিনি স্পষ্টভাবে এ কথাগুলো লিখে দিয়ে গেছেন যে কীভাবে তিনি ভাষা আন্দোলন করেন। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, একসময় তার নামটা এ ভাষা আন্দোলন থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে ইতিহাস ইতিহাসই। সেটা কেউ মুছে ফেলতে পারে না।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ অনুষ্ঠানে ২০ ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এবারের একুশে পদক দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে সে পদক তুলে দেন। ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা নথিগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো প্রকাশ করার উদ্যোগের কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। বলেন, আমি এটা করেছি। কেন করেছি? তার কারণ হচ্ছে আমি যখন দেখেছি একটার পর একটা ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন বা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম সবকিছু থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলার একটা অপচেষ্টা দীর্ঘদিন দেশে চলেছে। প্রায় একুশটা বছর। কাজেই আমি চেয়েছিলাম মানুষের সত্যটা জানা দরকার। আর এ সত্যটা জানানোর জন্যই আমি এই দায়িত্বটা নিই এবং এটা আজকে প্রকাশ হচ্ছে। এটা ১৪ খন্ডে পুরো প্রকাশ হবে। এর মাধ্যমে আমাদের দেশের ভাষা আন্দোলনের অনেক ইতিহাস জানা যাবে।

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সেই স্বপ্নপূরণ করা, লক্ষ্য পূরণ করা এটাই আমাদের লক্ষ্য।

সেই স্বপ্নপূরণে সবার সহযোগিতা চেয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এ মাতৃভ‚মিকে আমাদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। যেন বিশে^র কোথাও গিয়ে আর ‘বাংলাদেশ’ শুনলে যেন আমাদের আর কেউ অবহেলা করতে না পারে। ‘বাংলাদেশ’ শুনলে যেন সবাই আমাদের সম্মানের সঙ্গে দেখে, বাঙালিকে এবং বাংলাদেশকে সেভাবে আমরা একটা আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্নপূরণ করতে চাই।

জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন ’৯৬ সালে সরকারে আসি, আমরা আমাদের স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী পালন করেছিলাম। আর আজকে ২০২১ সালে আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করে যাব।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।