বাড়ীর মালিকের চাপাচাপি ভাড়ার জন্য, বিপাকে চট্টগ্রামের ভাড়াটিয়ারা

বাড়ীর মালিকের চাপাচাপি ভাড়ার জন্য, বিপাকে চট্টগ্রামের ভাড়াটিয়ারা

মনজুর আলম সুমন।।

নগরীর ভবন / ফ্ল্যাট মালিকরা মাস শেষ না হতেই ভাড়ার টাকার জন্য চাপাচাপি শুরু করেছেন । এতে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে লাখ লাখ ভাড়াটিয়া। বাড়ি মালিকের ভয়ে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নগরীর দিদার মাকের্ট এলাকায় ব্যাচালার ভাড়া থাকতেন সুমি ও ঝুমু (ছদ্ম নাম) নামে দু বোন। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনী করে চলতেন তারা। করোনার প্রার্দুভাবে ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তাদের সমস্ত টিউশনী। কিন্তু বাড়ি মালিক নাছোড় বান্দা, মাস শেষ হতে না হতেই ভাড়ার টাকার জন্য চাপাপাপি শুরু করেন। শুধু তাই নয় ভাড়ার জন্য অপমান শুরু করলে দুবোন পালিয়ে আশ্রয় নেন আন্দরকিল্লার মামার বাসায়।
শুধু এইাই নয় নগরীর একে খাঁন এলাকায় ভাড়া বাসায় ফ্যামেলী নিয়ে বসবাস করেন এক সংবাদ কর্মী। মাস শেষ হতে না হতেই ভাড়ার জন্য মালিকের চাপাচাপিতে চরম চিন্তাগ্রস্থ তিনি হতাশা প্রকাশ করেন প্রতিবেদকের কাছে। ওই ভাড়াটিয়া বলেন, ভাড়া মওকুফের দাবি ওঠায় বাড়িওয়ালা ভাড়া আদায়ের জন্য মাসের প্রথম দিন থেকেই চাপ দিচ্ছেন। বেতন পাওয়া অনিশ্চিত হওয়ায় ভাড়া পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন।
কর্ণেলহাট আবাসিক এলাকার এক ভাড়াটিয়া জানান, তাদের বাবা অসুস্থ থাকায় চিকিৎসার জন্য পরিবার নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে এসে ভাড়াবাসায় উঠেছেন। তারা কেউ টিউশনী করে, কেউ ক্ষুদ্র চাকরিজীবী। কিন্তু করোনার কারণে চলতি মাসের মাঝখান থেকে তাদের টিউশনী বন্ধ, অন্যজনের চাকরি বর্তমানে বন্ধ। মাস শেষ বেতন পাওয়া অনিশ্চিত। কিন্তু মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছে।
আবদুল আলিম রান্টু নামে এক ভাড়াটিয়া বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গত একসপ্তাহ ধরে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবী ও চাকরিজীবী মানুষ। এতে হঠাৎ করে আয় ও রোজগার বন্ধ হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ভাড়াটিয়ারা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাস করেন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ লোকই অন্যের ঘরে ভাড়ায় থাকেন।
এদিকে চট্টগ্রামের ভাড়াটেদের ভাড়া মওকুফের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংস্থা, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, করোনায় স্বল্প, নিম্ন ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের আয় ও রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় চট্টগ্রামের ভাড়াটিয়ারা মাস শেষে এই বাড়িভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। মানবিক বিবেচনায় অন্তত একমাসের ভাড়া মওকুফ করা হলে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের উপকার হবে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি গর্ভনর আমিনুল হক বাবু বলেন, চট্টগ্রামের যেসব দুর্বল ও শ্রমজীবী ভাড়াটিয়া, তাদের জন্য মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ রইল স্বাবলম্বী বাড়িওয়ালাদের প্রতি। একই সঙ্গে স্বাবলম্বী ভাড়াটিয়াদের প্রতি অনুরোধ এই মহামারী দুর্যোগে তাদের আয়ের একটি অংশ যেন কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষের পেছনে ব্যয় করেন।
চট্টগ্রাম নগরীর বেশ কয়েকজন ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, তাদের সবারই কর্মস্থল বন্ধ। নিজেরা হয়ে আছেন ঘরবন্দি। তাই আয়-রোজগারও নেই। খাবারের ব্যবস্থা করতেই তাদের হিমশিম অবস্থা। তাই মানবিক বিবেচনায় তারা বাড়ির মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, অন্তত মার্চ ও এপ্রিল মাসের ভাড়া যেন মওকুফ করা হয়।