বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমাপ্তি, ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন

বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমাপ্তি, ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন
ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার ঘোষণা দিচ্ছেন ইলেলিক্ট্রক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সায়েম। ছবি : সংগৃহীত

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

বুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমাপ্তি টেনে ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।  সকল দাবি মেনে নেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান আন্দোলনকারীরা।  এ ছাড়া আবরার হত্যাকাণ্ডে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে সোচ্চার থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ জনিয়েছেন তারা।

আজ বুধবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণার কথা জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন ইলেলিক্ট্রক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সায়েম।

লিখিত বক্তব্যে সায়েম বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৮ অক্টোবর থেকে আবরার হত্যার বিচার এবং একই সাথে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে প্রথমে ৮ দফা এবং পরে সংশোধিত ১০ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন শুরু করি।’

তিনি বলেন, ‘এরপর আমরা নিয়মিত বুয়েট প্রশাসনের সাথে বিভিন্ন দফার অগ্রগতি নিয়ে আপডেট নিতে থাকি। এরমধ্যে তদন্তকারী সংস্থা অত্যন্ত নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে ১৩ নভেম্বর আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে শুরু থেকেই সচেষ্ট ছিলেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমরা আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। একই সাথে আইনমন্ত্রী মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার ব্যাপারে জানান।’

লিখিত বক্তব্যে সায়েম আরও বলেন, ‘এর আগে গত ২ নভেম্বর কাউন্সিল অফিসে উপাচার্য স্যারের সাথে ডিএসডব্লিউ স্যার ও বিভিন্ন অনুষদের ডীন স্যারদের উপস্থিতিতে মিটিং করি এবং বুয়েটকে দ্রুত সচল করার জন্য আমরা সবশেষে কেবল তিনটি পয়েন্টের কথা বলি। এ তিনটি পয়েন্টের প্রথম দুটি মেনে নেওয়া হলে আসন্ন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ নেওয়া হবে এবং তৃতীয়টি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শুরুর অন্তত এক সপ্তাহ আগে মেনে নেওয়া হলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হবে বলে জানাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ২১ নভেম্বর বুয়েট প্রশাসন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ২৬ জনকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে এবং ছয় জনকে বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক বহিষ্কার করে যা আমাদের তিনটি পয়েন্টের প্রথমে ছিল। এরপর গত ২৭ নভেম্বর বুয়েট কর্তৃপক্ষ আহসানউল্লাহ হল এবং সহোরাওয়ার্দী হলে ঘটা আগের র‌্যগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি প্রদান করে নোটিশ দেয় যা আমাদের দেওয়া দ্বিতীয় পয়েন্ট ছিল। যেহেতু এসব মেনে নেওয়া হয়েছে সেজন্য আমরা গত বুধবার পরীক্ষার তারিখের ব্যাপারে এক্সাম কগোলার, রেজিস্ট্রার, সকল অনুষদের ডীন স্যারদের উপস্থিতিতে উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলি এবং পরীক্ষা প্রস্তুতির সময় চেয়ে ২৯ ডিসেম্বর পরীক্ষা শুরু করার কথা বলি। তখন স্যাররা ২৮ তারিখে পরীক্ষা শুরু করার অনুরোধ করলে আমরা এতে সম্মত হই।’

সায়েম বলেন, ‘সবশেষ গত ২ ডিসেম্বর বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থী র‌্যাগ এবং সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জটিত থাকলে সেটার শাস্তির নীতিমালা বিষয়ে বুয়েট প্রশাসন একটি নোটিশ প্রকাশ করে এবং সকালে এই নোটিশ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানায়। একই সঙ্গে এখন থেকে নবাগত ছাত্রদের ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোড অব কস্ট’ জানিয়ে অঙ্গীকার নেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলে স্যাররা জানান। তখন একটি সুস্থ ও নিরাপদ বুয়েটের স্বার্থে বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও প্রযোজনে এমন অঙ্গীকারনামা দিতে সম্মত আছি বলে আমরা জানিয়ে আসি। বুয়েট তাদের প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যেই আমাদের দেওয়া তিনটি পয়েন্ট মেনে নেওয়ায় আমরা বুয়েট প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের দেওয়া রায় মেনে নিয়ে আন্দোলনের সমাপ্তি টানছি। আমরা আশা করি বুয়েট প্রশাসন আবরার এর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যাপারেও সচেষ্ট হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরেক মুখপাত্র অন্তরা মাধুরীও বক্তব্য দেন।