ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঘটনায় ঢাকার দুদক টিম চট্টগ্রামে, ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঘটনায় ঢাকার দুদক টিম চট্টগ্রামে, ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ
ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ঢাকার দুদক টিম চট্টগ্রামে, ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রোহিঙ্গাদের অবৈধ উপায়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনায় ফের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে । একই সাথে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের বাইরে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট পাওয়ার ঘটনায়ও পৃথকভাবে পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত একাধিক কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক।

শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ের দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া নির্বাচন অফিসের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনসহ তিনজনকেও কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী দুদকের এ জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।

এর আগে একই ইস্যুতে গত বছরের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুনীর হোসাইন খানসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ ক্ষমতার অপব্যহারের অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।

দুদক জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে দুদকের গঠিত টিম লিডার মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে আসে। গত রবিবার থেকে কমিশনের এ টিম সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে পৃথক পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর বাইরে সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলরকে দুদক কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার পেছনে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তার-কর্মচারী জড়িত রয়েছে। যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থের বিনিময়ে এমন অবৈধ কাজ করেছেন। তাদের সকলকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর বাইরে পাসপোর্ট পাওয়ার ঘটনায়ও পুলিশের বিশেষ শাখা ও পাসপোর্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সকলের কাছ থেকে লিখিত ও মৌখিকভাবে এ সংক্রান্ত তথ্য নেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তারা ছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরও এ অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। যারা রোহিঙ্গাদের নাগরিক সনদপত্র দিয়েছেন। এরমধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে বহুসংখ্যক রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্মসনদ দিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত আগে থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান শেষে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুদকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পাসপোর্ট পেতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখা তথ্য-যাচাই বাছাই করে থাকেন। কিন্তু তারাও যাচাই বাছাই না করে তথ্য প্রদান করেছেন। এর জন্য তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাকিদেরও পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

উল্লেখ্য: রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিনদিন অভিযান চালায় দুদক। যাতে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য পায় দুদক। এরমধ্যেই ১৬ সেপ্টেম্বর রাতেই নগরীর ডবলমুরিং থানার একটি বাসা থেকে জয়নাল আবেদীনসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় নির্বাচন কমিশন। এসময় নির্বাচন অফিসের হারিয়ে যাওয়া লাইসেন্সকৃত একটি ল্যাপটপ, মডেম, সিগনেচার প্যাড ও মডেম উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বাদি হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে পুলিশ ওই মামলায় জড়িত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেন। এই ১৩ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।