উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উসকানিদাতা সাত এনজিও

নিউজ ডেস্ক ।।

উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উসকানিদাতা সাত এনজিও
যে সাতটি এনজিও রোহিঙ্গাদের উসকানিদাতা

উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে উগ্রবাদ এবং মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ঠেকাতে সাতটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) কলকাঠি নাড়ছে বলে জানা গেছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এসব এনজিওকে অর্থায়নসহ রোহিঙ্গাদের বিপথগামী করতে ইন্ধন দিচ্ছে পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সুপারিশে এরই মধ্যে কক্সবাজারে ওই সাত এনজিওর কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। এনজিওগুলো হলো মুসলিম এইড ইউকে, ইসলামিক এইড, ইসলামিক রিলিফ, স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ, বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি, নমিজান আফতাবি ফাউন্ডেশন (এএনএফ) এবং মুক্তি কক্সবাজার।

তবে কক্সবাজারে কার্যক্রম বাতিল করা হলেও সারাদেশে এর মধ্যে পাঁচটি এনজিওর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধন ছাড়াই দেশি-বিদেশি সাব-কন্ট্রাক্টে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিচালিত আরও ৩৩ বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রমও সন্দেহজনক বলে প্রমাণ পেয়েছে বিভিন্ন সংস্থা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুসলিম এইডের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ইসলামিক রিলিফ ও ইসলামিক এইডের নিবন্ধন বাতিলেরও সুপারিশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্মল কাইন্ডনেস বাংলাদেশ বন্ধ করা হয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের সুপারিশে জামায়াতে ইসলামী নেতার চাষী কল্যাণ সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। উগ্রবাদে অর্থায়ন, বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে ওই সময়ে চাষী কল্যাণ সমিতির ৮ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

সর্বশেষ গত ২৬ আগস্ট উখিয়ার কোটবাজার-ভালুকিয়া সড়কের একটি কামারের দোকান থেকে মুক্তি কক্সবাজারের অর্ডার নেওয়া ছয় শতাধিক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন। সে সময় মুক্তি কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে দাবি করেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডে ৬০০ স্থানীয় উপকারভোগী পরিবারে সবজি চাষের নিড়ানি হিসেবে এসব সরবরাহ করতে তারা বানাচ্ছিলেন।

তবে এনজিও ব্যুরো বলছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের কারণে ফসলি জমিসহ স্থানীয় জনগোষ্ঠী নানাভাবে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন। স্থানীয় এসব জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধন কর্মসূচি হিসেবে বিদেশি অর্থায়ন পায় মুক্তি কক্সবাজার। আর আয়বর্ধন কর্মসূচি হিসেবে সাধারণত বীজ প্রদান, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনে সহায়তা করা হয়। কিন্তু কৃষি জমিতে চাষাবাদের নামে নিড়ানি বা দেশীয় অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহের ঘটনা বিরলএবং রহস্যজনক। এমনকি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নামে তৈরিকৃত এসব অস্ত্র রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওটির সরবরাহের টার্গেট ছিল কিনা সেটি খতিয়ে দেখতে পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে।

এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক কেএম আবদুস সালাম বলেন, মুক্তি কক্সবাজারকে যে উদ্দেশ্যে বিদেশি ফান্ড অনুমোদন দেওয়া হয় তারা সেই আইন মানেনি। এমনকি তাদের আয়বর্ধন এফডি-৬ প্রকল্পে নিড়ানি প্রদানের কথাও ছিল না। তা হলে তারা কেন এগুলো তৈরি করল, বিষয়টি সন্দেহজনক।

গত শনিবার সিলেটে অনুষ্ঠিত এক সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, অপকর্মে লিপ্ত থাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত প্রায় ৪১টি এনজিও ওই এলাকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। আরও অনেক এনজিও এখনো একই কাজ করছে। এদের কার্যক্রমে নজরদারি হচ্ছে। তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনজিও ব্যুরোর এক কর্মকর্তা বলছেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, জয়েন্ট স্টক কোম্পানির মাধ্যমে সোসাইটি বা সমিতির অনুমোদন নেওয়া যায়। এসব সমিতি এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধন পেলেই কেবল এনজিও হিসেবে গণ্য হয়। বিদেশি ফান্ড পেতে হলেও নিতে হয় এনজিও ব্যুরোর অনুমোদন। কিন্তু কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনেকগুলো সংগঠন এনজিওর নাম ব্যবহার করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিদেশি বা দেশীয় এনজিওর কাছ থেকে সাব-কন্টাক্টে তারা ফান্ড বা অর্থ সংগ্রহ করে। এসব সংগঠনের মধ্যে অনেকগুলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতে নানা ধরনের অপপ্রচারসহ উগ্রবাদে উসকানি দিচ্ছে।

জেলা প্রশাসন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে এমন ৪১টি এনজিওর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। তবে গোয়েন্দাদের যাচাই-বাছাই শেষে অনেকগুলো সংস্থাকে ফের কার্যক্রম চালানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। এ মুহূর্তে ক্যাম্পে এনজিও ব্যুরো থেকে অনিবন্ধন ও সাব-কন্ট্রাক্টে পরিচালিত ৩৩টি বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।

সিআইডি সূত্র জানায়, ১৯৭৭ সালে ‘বাংলাদেশ চাষী কল্যাণ সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর কার্যক্রম জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলকে চিঠির মাধ্যমে লিখিতভাবে জানানো হতো। আর চাষী কল্যাণের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে উগ্রবাদে অর্থায়ন করে ওই এনজিওটি।