যথাসময়ে হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন, খুনিদের সঙ্গে সংলাপ নয় : প্রধানমন্ত্রী 

যথাসময়ে হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন, খুনিদের সঙ্গে সংলাপ নয় : প্রধানমন্ত্রী 
যথাসময়ে হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন, খুনিদের সঙ্গে সংলাপ নয় : প্রধানমন্ত্রী 

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং কেউ তা ঠেকাতে পারবে না। আন্দোলনের নামে বিএনপি–জামায়াত চক্রের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, খুনিদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। খুনিদের সঙ্গে কোনো সংলাপ বা আলোচনা হবে না এবং বাংলাদেশের জনগণও তা চায় না।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সব সংশয় আর অনিশ্চয়তার কথা উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথাই বলতে পারি, নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে। ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে তার এ বক্তব্য আসে। গত কিছুদিনে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তার কাছে একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে? নির্বাচন আদৌ হবে কিনা, সময়মতো হবে কিনা, আবার জরুরি অবস্থা আসবে কিনা–এসব প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। 

নির্বাচন সময়মতোই হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তা উত্তরে বলেন, কে চোখ রাঙালো, আর কে ব্যাঁকালো, আমরা ওটার পরোয়া করি না। অনেক সংগ্রাম করেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতন্ত্র থাকলে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থাকলে দেশের উন্নতি হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন তো শুধু মেট্রো রেল আর টানেল দিয়ে না, যান না গ্রামে ঘুরে আসুন না। উন্নয়নটা আমি তৃণমূল থেকে করে দিয়েছি।

কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে–এই প্রশ্ন যিনি রেখেছিলেন তাকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন, আপনাকে আমার বলতে হবে কেন? আপনারা বোঝেন না? ডায়লগ করতে হবে! ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন কি ডায়লগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন ডায়লগ করবে, সেদিন আমি করব।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মধ্যে আগামী দ্বাদশ সংসদের ভোটের আগে নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনা করা হয়েছিল এবারও একই রকম পরিকল্পনার কথা বলেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও কানাডার মতো সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার থাকে, সেভাবে চলবে। অর্থাৎ সে সময় আমরা যারা থাকব, আমরাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক দায়িত্ব পালন, দৈনন্দিন কাজকর্ম করব, যাতে সরকার অচল হয়ে না যায়, সেটা আমরা করব, সেভাবে চলবে।

২০১৮ সালের নভেম্বরে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন টেকনোক্র্যাট চার মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলা হয় এবং তারা পদত্যাগপত্র জমাও দেন। বাকি মন্ত্রীরা সবাই রুটিন কাজ করে গেছেন। সে সময় যেসব মন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন, তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয় এক মাস পর অর্থাৎ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর ঠিক আগের দিন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আরপিও অনুযায়ী যখন নির্বাচনের সময় ঘোষণা হবে, মনোনয়নপত্র দাখিল হবে, তখন থেকে আর সরকারি কোনো সুযোগ–সুবিধা মন্ত্রীরা ব্যবহার করতে পারবে না, পতাকা বা কোনো সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে না। তখন একজন প্রার্থী হিসেবেই তাদেরকে ভোট চাইতে হবে।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা ছোট করা হলেও এবার তেমন পরিকল্পনা না থাকার কথা বলেছেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ১৪–তে আমি কিছু মন্ত্রী অন্যান্য দল থেকে নিয়োগ করেছিলাম, এরপর ১৮–তে সেই পদ্ধতি করি নাই, যেটা অন্যান্য দেশে হয়, এইবারও সেভাবে হবে।

এবারও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু হলে মন্ত্রীরা আর সরকারি সুযোগ–সুবিধা ব্যবহার করবেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ। এই নির্বাচনী প্রচারণার সময় কোনো মন্ত্রী কোনো ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে না আর কোনো রকম সরকারি সুযোগ–সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে না, এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকার থেমে থাকবে না, সরকারি দৈনন্দিন যে কাজগুলো, রুটিন ওয়ার্ক যাকে বলে, সেটা কিন্তু করত হবে। নইলে তো স্থবির হয়ে যাবে, দেশ তো চলবে না।

তিনি বলেন, কাজে এখন ওই নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে, সেদিকে আমরা আর যাচ্ছি না। আমরা যেভাবে চলার ওইভাবেই… অন্যান্য দেশ, আমি এটা ইংল্যান্ডেও আলাপ করেছি, তাদেরও, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, অর্থাৎ যেসব দেশের সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, সেভাবে যারা চলে সেইভাবেই করা হবে।

সরকারের আকার কী রকম হবে, সে বিষয়ে কোনো ঘোষণা না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আকার ছোট করলে যেটা সমস্যা হয়, ওইটা ১৪–তে দেখেছি, অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ আর হয় না, কাজগুলি যাতে বাধাগ্রস্ত হয়ে যায়। কাজগুলি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, আমাদের উন্নয়নের ধারাটা যাতে অব্যাহত থাকে, আমাদের সেটাই প্রচেষ্টা। সেজন্য বলছি, যেভাবে আছে সেভাবে।

২০১৮ সালের মতো এবারও নিজের জন্য পৃথক কার্যালয়ের ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নিজেও যখন প্রার্থী হব, তখন এখানে বসে ভিডিও কনফারেন্সিং করব না। আমি আমার অফিস আলাদা, যেমন গতবারও করেছিলাম ৫ নম্বরে, এবার আলাদা একটা অফিসের ব্যবস্থা করেছি।

বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন সংলাপ করবেন সেদিন তিনিও বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করবেন। তিনি বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলটা কে? বিরোধী দল হচ্ছে, যাদের সংসদে আসন আছে। বাইরের দলগুলোকে আমেরিকায়ও বিরোধী দল হিসেবে দেখে না। ট্রাম্পকে তারা কী বলবে? তারা তো তাদের বিরোধী দল। যদিও আমরা তাদের পদ্ধতিতে না। তিনি বলেন, ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করছেন? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ, খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ, কিসের আলোচনা? খুনিদের সঙ্গে সংলাপ, এটা বাংলাদেশের জনগণও চায় না। সে (পিটার হাস) বসে ডিনার করুক, আলোচনা করুক।

২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই যে মানুষগুলো হত্যা করা হলো, তখন তাকে (পিটার হাস) প্রশ্ন করা হলো না কেন? যখন একটা উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছে, তখন তারা বিচার দাবি করেছে। এখন যখন পুলিশ হত্যা করল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল তখন বিচার দাবি করল না কেন?

এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত ভাষণে ব্রাসেলস সফরকে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে বলেন, এই সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে অংশীদারিত্ব একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

যেমন আচরণ করছে, তেমন শিক্ষাই বিএনপি পাবে

গত কয়েকদিনের সংঘাত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে আবারো ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের যেভাবে শিক্ষা দিতে হয়, সেটাই এবার বিএনপিকে দেওয়া হবে।

ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে তার এ বক্তব্য আসে। তিনি বলেন, আজকে তারা এখানে ওখানে চোরা পথে গাড়ি পোড়াচ্ছে। যারা গাড়ি পোড়াচ্ছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা এবং তাদেরকে যথাযথ শাস্তি দেওয়া, আর যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, আমার তো মনে হয় যার গাড়ি যেখানে পোড়াবে, যদি ধরা পড়ে, ওই গাড়ি পোড়ানো হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া উচিত। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে, তাছাড়া শিক্ষা হবে না। তাদের শিক্ষাটা ওইভাবেই করতে হবে। শঠদের সাথে শঠের মতোই করতে হবে। তার আচরণের জন্য ঐরকমই শিক্ষা দিতে হবে। 

গত শনিবার বিএনপির সমাবেশ ঘিরে সংঘাতে হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং তারপর হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক। জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি–জামায়াত জোট, এরা আসলে যে সন্ত্রাসী এবং বিএনপি যে একটা সন্ত্রাসী দল এটা তারা পুনরায় প্রমাণ করল। কানাডা কোর্ট কিন্তু এ বিষয়টা কয়েকবার বলেছে। এখান থেকে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যারা আশ্রয় চেয়েছিল, তারা সেখানে কিন্তু পায়নি, সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। এদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই। এদের সাথে আমরা যতই ভালো ব্যবহার করি না কেন, এদের কখনোই স্বভাব বদলাবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এরা বিশ্বাস করে। কারণ অবৈধভাবে অস্ত্র হাতে ক্ষমতা দখলকারীর হাতেই তাদের জন্ম। এটাই তারা ভালো বোঝে।

শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমার যেটা ধারণা, এরা তো নির্বাচন চায় না, এরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন, ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আজকে ২০২৩ সাল, এই বাংলাদেশ তো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। অস্বীকার করতে পারবেন না। আজকে আনাদের কাছে কেউ ভিক্ষা চাইতে আসবে না। প্রত্যেকের খাবারের ব্যবস্থা, ভূমিহীনদের ভূমির ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা। কেউ কাজ করলেই কিন্তু খেতে পায়, অন্তত সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। তারা নানাভাবে, আসলে মানুষকে কষ্ট দেওয়াটাই তাদের চরিত্র। এখানে আমার বলার কিছু নেই। আন্তর্জাতিকভাবে সবাই আমাদের প্রসংশা করে, একমাত্র দুঃখে মরে যায় এই বিএনপি আর জামায়াত জোট, এরাই।

তিনি বলেন, বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন, সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে সেই শিক্ষাটাই এখন আমাদের দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেটাই আমরা দেব। কারণ এদের জন্য এই দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা যাবে না।

২০১৪–১৫ সালে বিএনপি–জামায়াতের টানা হরতাল–অবরোধে যে সহিংসতা হয়েছিল, তার সঙ্গে গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহের তুলনা করে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যারা এসব সহিংসতা করছে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে কিনা। উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিন্দিতে একটা কথা আছে না, শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ। যে শঠ, তার সাথে শঠের মতোই আচরণ করতে হবে। আর যার যার নিজের কাজ নিজেরই। যারা জ্ঞানী, তারা নিজের কাজ নিজেই করে যায়। শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ– আমার কথা হচ্ছে সেটাই।

যারা জ্বালাও–পোড়াও করছে, তারা সেসব বন্ধ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বন্ধ না করলে পরে এর পরিণতি তাদের ভোগ করতে হবে। এবার এমনি এমনি যেতে দেব না। নির্বাচন এভাবে তারা থামাতে পারবে না। ২০১৩ সালেও পারেনি, ১৮–তেও পারেনি। এবারও পারবে না। ইনশাল্লাহ নির্বাচন যথাসময়েই হবে, তারা পারবে না। তবে জনগণ আমাদের সাথে আছে। কোনো জনগণ তাদের সাথে নাই। জনগণকে কষ্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না, রাজনীতি তো জনগণের জন্য। এটা তারা ভুলে যায়, তারা তো অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় আসার অভ্যাস।

সহিংসতায় বিএনপি থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, মাঝখানে তারা কিছু রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছিল, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা কিন্তু দেওয়া হয়নি। তাদের উপর একটাই শর্ত ছিল, তারা কোনো ধরনের অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এগুলো করবে না। তারা যখন সুস্থভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করছিল, তাতে কিন্তু তাদের প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করা শুরু করেছিল। ২৮ তারিখ বিএনপি যে সমস্ত ঘটনা ঘটাল, বিশেষ করে পুলিশকে হত্যা করেছে, মাটিতে ফেলে যেভাবে কোপালো, সাংবাদিককে ধরে পিটানো, মারা, এ ধরনের ঘটনার পরে জনগণের ধিক্কার ছাড়া বিএনপির আর কিছুই জুটবে না। শুধু তাই না, পুলিশকে তো মেরেছেই, তারপরে আবার হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে, সেখানে আবার পুলিশের ওপর আক্রমণ। আজকে আপনারা দেখেন, ইসরায়েল প্যালেস্টাইনে যেভাবে হামলা করেছে, সেখানেও হাসপাতালে তারা বোমা হামলা করল, নারী–শিশুদের হত্যা করেছে, সেখানে তাদের সবকিছু বন্ধ করে রেখেছে। আমি তো তফাৎ কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, নিজেরা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে নিজেরাই আবার পালাল। পালিয়ে গিয়ে আবার অবরোধের ডাক। কিসের অবরোধ, কার জন্য অবরোধ? যখন বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, সারা বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করছে, তখন তাদের কাজটাই হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা, বাংলাদেশে এমন অবস্থা তৈরি করা যে, বাংলাদেশে কিছুই হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যেদিন চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলে উদ্বোধন করলেন, সেদিনই তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে, মানুষ খুন করেছে। তাদের হামলায় একটা জিনিস লক্ষ্যণীয় যে, একদিকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আর হচ্ছে সাংবাদিক, এদের ওপরই কিন্তু হামলাটা চালিয়েছে। সেগুলো কারা কারা তাদের নাম ধাম আর যা কিছু করেছে প্রকাশ্যেই করেছে। এবং গাড়ি পোড়ানো, গতকালকেও লালমনিরহাটে যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা, মানুষের সম্পদ নষ্ট করা, আর সন্ত্রাসী, এটাই তো তাদের চরিত্র।

সাংবাদিকের ওপর কিসের রাগ, সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকদের উপরে যেভাবে তারা চড়াও হলো, কেন তাদের ওপর হঠাৎ, সাংবাদিকরা তো তাদের খুব ভালো ভালো নিউজ দিচ্ছিল। টকশোতেও ভালো ভালো কথা আর সরকারের দোষটাই বেশি দেখে, তাহলে সাংবাদিকদের ওপর এত রাগটা কেন? সেটা আমি বুঝতে পারলাম না। প্রত্যেকটা টেলিভিশন প্রাইভেট সেক্টরে আমিই দিয়েছি, সব জায়গায় তাদের নিউজটাই কিন্তু সবার আগে, বরং আমার নিউজটাই সবার পরে। কোনো কোনো টেলিভিশনে আমি চার–পাঁচ নম্বরে থাকি। তারপরেও রাগটা কেনো হলো? তবে এই ঘটনার নিন্দা করি, এইভাবে অত্যাচার করা। সাথে সাথে আমাদের নেতাকর্মীরা প্রত্যেকে হাসপাতালে হাসপাতালে গেছে, দেখেছে, চিকিৎসাসেবা যা লাগে আমরা অবশ্যই দেখব।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে তারা এই একই রকম অগ্নিসন্ত্রাস করে, ১৪–১৫ তিনটা বছর ধরে তারা এই অগ্নিসন্ত্রাস করে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিক, সবাইকে আমরা আর্থিক সহযোগিতা দিতাম, যাতে তাদের বাসটা চালাতে পারে। যারা আহত নিহত, তাদের আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি।

তিনি বলেন, ঠিক একইভাবে পুলিশকে আঘাত করে করে সেই রাজশাহীতে পুলিশকে মারল, গাইবান্ধাতে মারল। সারা বাংলাদেশেই মারল, সেই সময় ২৯ জন পুলিশকে মারল, পাঁচশর উপর স্কুলঘর পুড়িয়েছিল। ৩৮২৫টি গাড়ি পুড়িয়ে ছিল, ৩ হাজার মানুষকে পুড়িয়েছিল। ৫০০ মানুষ পুড়েই মারা যায়। এখন অনেকে পোড়া অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাস–নৈরাজ্য ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে পুলিশ হত্যার ভিডিও ফুটেজও সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রদর্শিত হয় ।

 

খালেদ / পোস্টকার্ড;