সুন্নত ও আদবের মাধ্যমে খাবার গ্রহণের সওয়াব অর্জন

সুন্নত ও আদবের মাধ্যমে খাবার গ্রহণের সওয়াব অর্জন

মাওলানা শামসুদ্দীন সাদী ।।

বেঁচে থাকার তাগিদেই প্রতিদিন খেতে হয়। প্রাণীমাত্রই খাবার গ্রহণ করে। মানুষ ও পশুপাখি সবাই খায়। তবে মানুষ ও পশুর খাবার গ্রহণে ব্যবধান থাকা কাম্য। কারণ, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার প্রতিটি কাজ হবে সুন্দর ও ভদ্রোচিত। একই সঙ্গে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক। আর যেসব কাজ সুন্নত মোতাবেক করা হবে; সেসব কাজে বরকত ও সওয়াব মিলবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিচে খাবার গ্রহণের সুন্নত ও আদবের আলোচনা তুলে ধরা হলো।

খাবারের দোয়া পড়া : ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ’ বলে খাবার গ্রহণ শুরু করা। বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে এবং মাঝে স্মরণ হলে ‘বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’ পড়া। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন খাবার গ্রহণ করে সে যেন শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে। শুরুতে যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যায় তাহলে বলে, বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু। (আবু দাউদ : ৩৭৬৭, ইবনে মাজাহ : ৩২৬৪)

ডান হাতে খাওয়া : সবসময় ডান হাতে খাওয়া। বাম হাতে শয়তান খাবার গ্রহণ করে। হজরহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যেন বাম হাত দ্বারা খাবার না খায় এবং বাম হাত দ্বারা পান না করে। নিশ্চয় শয়তান বাম হাত দ্বারা খায় ও পান করে। (মুসলিম : ২০২০)

নিজের দিক থেকে খাওয়া : এক সঙ্গে কয়েকজন খাবার গ্রহণ করলে প্রত্যেকে নিজ সামনে থেকে খাবার গ্রহণ করা। মাঝখান থেকে বা অন্য দিক থেকে টেনে না আনা। এটা সুন্নতের খেলাফ। হজরত ওমর ইবনে সালামাহ (রা.) বলেন, আমি নবীজির তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছোটাছুটি করত। নবীজি (সা.) আমাকে বললেন, হে বৎস! আল্লাহর নাম নিয়ে খাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার কাছ থেকে নিয়ে খাও। এরপর আমি সবসময় এ নিয়মেই খাবার গ্রহণ করতাম।
(বুখারি : ৫৩৭৬)

খাবার তুলে খাওয়া : খাবার গ্রহণের সময় যদি খাবারের কোনো অংশ পড়ে যায় তাহলে তা তুলে নেওয়া এবং ধুয়ে পরিষ্কার করে খাওয়া। কারণ, রিজিক আল্লাহর দান। তা নষ্ট করা উচিত নয়। তা ছাড়া খাবারের সব অংশে বরকত থাকে না। কোন অংশে বরকত থাকে তাও কেউ বলতে পারে না। পড়ে যাওয়া লোকমাতেই বরকত থাকতে পারে। হজরহ জাবের (রা.) বলেন, আমি নবীজিকে (সা.) বলতে শুনেছি, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের সব কাজকর্মে উপস্থিত হয়। এমনকি তোমাদের কারও খাবারের সময়ও সে উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যদি কারও লোকমা মাটিতে পড়ে যায়, সে যেন তাতে লেগে যাওয়া আবর্জনা সরিয়ে তা খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য যেন ফেলে না রাখে। খাবারের সে যেন তার আঙুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানে না তার খাদ্যের কোনো অংশে বরকত রয়েছে। (মুসলিম : ২০৩৩)
খাবারের দোষ না বলা : খেতে বসে খাবারের দোষ না ধরা। পছন্দ হলে খাওয়া, না হলে না খাওয়া। তবে বাবুর্চি যদি ভালোভাবে রান্না না করে তা বলতে পারে। তাও এমনভাবে বলা উচিত নয় যে, অন্যদের খাওয়ার আগ্রহ নষ্ট হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) কখনও খাবারের দোষ বলতেন না। মনে চাইলে খেতেন, না হয় রেখে দিতেন। (বুখারি : ৩৫৬৩, মুসলিম : ২০৬৪)

খাবার শেষে বসে না থাকা : মেহমানের জন্য উচিত হলো, উপস্থিত খাবার স্বাচ্ছন্দ্যে গ্রহণ করা। মেজবানের উচিত যথাসম্ভব দ্রুত মেহমানের সামনে খাবার উপস্থিত করা। খাবার গ্রহণের পরে মেহমানের উচিত দ্রুত খাবারস্থল ত্যাগ করা। বিনা প্রয়োজনে বসে না থাকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অতঃপর খাওয়া শেষে আপনাআপনি চলে যেও। কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেও না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। (সুরা আহযাব : ৫৩)

সাধারণ পাত্র ব্যবহার : স্বর্ণ বা রুপার পাত্রে আহার না করা। কারণ স্বর্ণ বা রুপার পাত্রের খাওয়া হারাম। নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা সোনা ও রুপার পাত্রে পান করবে না। আর মোটা বা পাতলা রেশমের কাপড় পরিধান করবে না। কেননা এগুলো দুনিয়াতে অমুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ভোগ্যবস্তু। আর তোমাদের জন্য হলো আখেরাতের ভোগ্যবস্তু। (বুখারি : ৫৪২৬)

খাবার শেষে দোয়া পড়া : খাবার গ্রহণ শেষ হলে আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায় করা। ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা বা হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া পড়া। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, যাকে আল্লাহ খাবার খাওয়ান সে যেন এই দোয়া পড়ে ‘হে আল্লাহ! এর মধ্যে আমাদের জন্য বরকত দিন। আমাদের এর থেকে উত্তম বস্তু খাওয়ান।’ আর আল্লাহ যাকে দুধ পান করান সে যেন এই দোয়া পড়ে ‘হে আল্লাহ! এর মধ্যে আমাদের বরকত দিন এবং তাতে প্রবৃদ্ধি দান করুন।’ (তিরমিজি : ৩৪৫৫, ৩৩৭৭)

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা